শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জেদি এক ক্রিকেট-যোদ্ধার গল্প

জেদি এক ক্রিকেট-যোদ্ধার গল্প

কোচিং করিয়েও যে বড় তারকা হওয়া যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ- জন মিচেল। নিউজিল্যান্ডের তারকা-রাগবি কোচ। ইংল্যান্ড জাতীয় রাগবি দলের দায়িত্বে আছেন এখন। এক সময় জন মিচেল ছিলেন নিউজিল্যান্ড রাগবি ইউনিয়নের তারকা খেলোয়াড়। স্বপ্ন ছিল ছেলেকে বড় রাগবি খেলোয়াড় বানাবেন। কিন্তু ছেলের বড্ড জেদ, রাগবি নয় খেলবে ক্রিকেট। তাই বাধ্য হয়েই ছেলের কথা মেনে নিলেন। সেই জেদি ছেলেটাই এখন ক্রিকেটের মহা তারকা ড্যারিল মিচেল।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেললেন মহাকাব্যিক এক ইনিংস। আবুধাবিতে ওপেনিংয়ে নেমে ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন। ৪৭ বলের কী অসাধারণ এক ক্রিকেট-শো। শুরুটা খুবই ধীরগতির, আর শেষটায় ছিল সাইক্লোন। ড্যারিলের ক্যারিশমাতেই টি-২০ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠল নিউজিল্যান্ড।

মজার বিষয় হচ্ছে, ম্যাচটি আবুধাবির গ্যালারিতে বসে দেখেছেন ড্যারিল মিচেলের বাবা জন মিচেল। কিন্তু বায়ো-সিকিউর বাবলের জন্য বাবার সঙ্গে দেখা হয়নি মিচেলের। তবে ফোনে কথা হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে নিউজিল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘এটা দুর্দান্ত একটা ব্যাপার যে বাবা এখানে গ্যালারিতে ছিলেন। কভিড পরিস্থিতিতে পুরো দুনিয়ার যে ভয়ংকর অবস্থা, এর মধ্যেই ইংল্যান্ড থেকে এসেছেন। সবকিছুই ছিল চ্যালেঞ্জিং। তারপরও গ্যালারিতে তাকে দেখতে পাওয়াটা আমার জন্য দুর্দান্ত একটা ব্যাপার। বায়ো-বাবলে থাকার কারণে তার সঙ্গে দেখা করা যাবে না, তবে ফোনেই কথা হবে। জানি, তিনি খুব খুশি হয়েছেন।’ একটি ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েই মিচেল যেন এখন জাতীয় নায়ক। বীরোচিত ইনিংসটির জন্য সব মহল থেকেই প্রশংসা পাচ্ছেন।

‘অপয়া-১৩’ -নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সাধারণ মানুষের ভীষণ রকমের অ্যালার্জি আছে! কিন্তু কাল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ১৬৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলীয় ১৩ রানেই সেরা দুই ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিল ও কেন উইলিয়ামসনকে হারায় কিউইরা। পাওয়ার প্লেতে আসেও মাত্র ৩৫ রান। এরপর কিউই ক্রিকেট ভক্তরা হয়তো হার দেখেই ফেলেছিলেন।

কিন্তু এটা তো টি-২০ ক্রিকেট। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায় ম্যাচের রঙ। ১৬ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর যখন ৪ উইকেটে ১১০ রান তখন কে ভেবেছিলেন এই ম্যাচে পরের ২৪ বলে ৫৭ রান করতে

পারবে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। শেষ পর্যন্ত জিততে ২৪ বলও লাগেনি। ১৮ বলেই মধ্যে খেলা শেষ হয়ে যায়। রূপকথার এক জয় উপহার দেন ড্যারিল মিচেল।

ম্যাচে শেষে জানিয়েছেন, ড্যারিল নাকি কখনোই আত্মবিশ্বাস হারাননি। তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি কখনোই মনে হয়নি ম্যাচটি আমাদের নাগালের বাইরে। কারণ, এক পাশের বাউন্ডারি ছিল ছোট। আমাদের মনে হয়েছে, শেষ দিকে পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে আনার সুযোগ থাকতে পারে। কিন্তু ভাগ্যও আমাদের দারুণভাবে সহযোগিতা করেছে। কিছু ছক্কা এমন হয়েছে দুই-এক মিটার এদিক সেদিক হলে আমরা আউট হতে পারতাম।’

নিউজিল্যান্ডের জয়ের রাস্তাটা পরিষ্কার হয়ে যায় ১৭তম ওভারে। ইংলিশ পেসার ক্রিস জর্দানকে বোকা বানিয়ে ছাড়েন জিমি নিশাম। ওই ওভার থেকে আসে ২৩ রান। নিশামকে দেখে আরেক প্রান্তে শুরু করে দেন মিচেলও। ওই ওভারের আগে উইকেটে দুই কিউই ব্যাটসম্যান মিলে পরামর্শও করেন। তারপরই শুরু করে দেন। ওই ওভারের জন্য নিশামের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন মিচেল, ‘আমাদের সবসময়ই মাথায় ছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত সমীকরণ মেলাতে পারব, ততক্ষণ আমাদের সামনে সুযোগ থাকবেই। নিশাম উইকেটে গিয়ে প্রথম বল থেকেই যেভাবে ঝড় তুলেছিল, তখনই আমাদের জয়ের মঞ্চটা তৈরি হয়ে যায়। অসাধারণ ইনিংস  খেলেছে সে।’

টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০-তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটের সবশেষ তিন বিশ্ব আসরেই ফাইনালে উঠার সৌভাগ্য হলো নিউজিল্যান্ডের। টেস্টে তারা ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাঠের লড়াইয়ে না হেরেও ‘বাউন্ডারি’ নিয়মে শিরোপা হাতছাড়া হয়ে যায়। এবার টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের হাতছানি। সেমিফাইনাল নিয়ে আবেগে ভেসে যেতে চান না মিচেল। শিরোপা জিতেই পার্টি করতে চান, ‘সামনে ফাইনাল আছে।

সর্বশেষ খবর