শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

এক ভুলেই সব শেষ

এক ভুলেই সব শেষ

ক্রিকেট সত্যিই বড় বিচিত্র্য ক্রীড়া ইভেন্টে। কখনো ভুলের সমাহার ঘটালেও কিছু হয় না, আর কখনো এক ভুলেই সব শেষ হয়ে যায়। কাউকে নায়ক থেকে খলনায়ক বানায়, আবার কাউকে খলনায়ক থেকে বানায় মহানায়ক! যে হাসান আলী ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন করে মহানায়ক হয়ে গিয়েছিলেন, একদিন আগে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি ক্যাচ মিস করে তিনিই হয়ে গেলেন খলনায়ক। আবার এ বিশ্বকাপের আগে যে আসিফ আলীর দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছিল, সেই ব্যাটসম্যানই কি না আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ছক্কা হাঁকিয়ে নায়ক বনে যান।

দুবাইয়ে সেমিফাইনালে হাসান আলী মিস করেন অসি তারকা ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ। সেটিও কি না ম্যাচের সবচেয়ে কঠিন সময়ে। শেষ দুই ওভারে যখন অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ২২ রান। আগের তিন ওভারে মাত্র ১৩ রান দেওয়া শাহিন আফ্রিদি আসেন বোলিং করতে। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ওভারে ক্যাচ তুলে দেন ম্যাথু ওয়েড। হাসান আলী ক্যাচটি লুফে নিলে হয়তো ম্যাচের চিত্রই পাল্টে যেত। এরপর টানা তিন বলে সেই ম্যাথু ওয়েডের তিন ছক্কায় ম্যাচ শেষ।

মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ মিস করে ভীষণ হতাশ হাসান আলী। ওই মুহুর্তটা যেন তার নিজের কাছে অবিশ্বাস্য লাগছিল। তার একটি ভুলের কারণে সব শেষ হয়ে গেল। স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেল গোটা জাতির। হৃদয় ভেঙে গেল কোটি মানুষের। এটা ভাবতেই যেন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন পাকিস্তানের এ তারকা ক্রিকেটার।

দলের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার শোয়েব মালিক তখন হাসানের কষ্ট বুঝতে পেরে দৌড়ে গিয়ে তাকে বুক চাপড়ে সান্ত্বনা দেন। বোঝাতে চেষ্টা করেন, এটা খেলারই অংশ। এরপর অন্য সতীর্থরাও হাসানকে নিয়ে একের পর এক স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন। এ সেমিফাইনালে ক্যারিশম্যাটিক বোলিং করা স্পিনার শাদাব খান তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘হাসান আলী একজন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার।

দলের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার শোয়েব মালিক তখন হাসানের কষ্ট বুঝতে পেরে দৌড়ে গিয়ে তাকে বুক চাপড়ে সান্ত্বনা দেন। বোঝাতে চেষ্টা করেন, এটা খেলারই অংশ। এরপর অন্য সতীর্থরাও হাসানকে নিয়ে একের পর এক স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন। এ সেমিফাইনালে ক্যারিশম্যাটিক বোলিং করা স্পিনার শাদাব খান তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘হাসান আলী একজন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। কিন্তু তিনি তো একজন মানুষ। তারও ভুল হতে পারে। আমরা তার পাশেই আছি।’ অধিনায়ক বাবর আজমও সান্ত্বনা দিয়েছেন। ভক্তরা এমন ভুলের জন্য হাসানকে গালি দিচ্ছেন না। এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও পাকিস্তানের এ দলকে নিয়ে গর্ব করেছেন।

কিন্তু সব কিছুর পরও হাসান আলী কি নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারবেন! চরম সত্য তো এটাই যে, তার এক ভুলে সর্বনাশ হয়ে গেছে।

বিশ্বে হাসান আলীই যে একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ক্যাচ মিস করেছেন এমন নয়। একই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডাররাও একে একে তিনটি ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন। যে অস্ট্রেলিয়া ফিল্ডিংয়ে বিশ্বসেরা, তারাও সহজ ভুল করেছেন। সেমিফাইনালের চাপই অন্যরকম। এ চাপ নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারলেই বিপদ। তবে ক্যাচ মিস সব সময়ই দলের বিপর্যয় ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট। কাল রানের খাতা খোলার আগেই মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচ ছেড়ে দেন ওয়ার্নার। পরে সেই রিজওয়ান খেলেছেন ৬৭ রানের ইনিংস। ৪০ রানে নতুন জীবন পাওয়া ফখর জামান দলীয় স্কোরে আরও ১৫ রান যোগ করেন।

এবারের বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে এ ক্যাচ মিসের বিড়ম্বনায় পড়ে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচে দু-দুটি ক্যাচ ফেলে দেন লিটন দাস। তারপর ম্যাচটাই হাতছাড়া হয়ে যায়।

তবে বিজয়ী হতে হলে চাপের মধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। কঠিন পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হয়। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ মুহুর্তে ক্যারিবীয় দীর্ঘকায় ফিল্ডার জেসন হোল্ডার শেষ দিকে দলের মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যারিশম্যাটিক একটি ক্যাচ নিয়েই ম্যাচের গতি পাল্টে দেন। গতকাল এ সুযোগটা ছিল হাসান আলীর সামনে। কিন্তু তিনি পারেননি।

ক্রিকেটে খুবই প্রচলিত প্রবাদ হচ্ছে- ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস! এ মুহুর্তে মনে হয়, কথাটার গুরুত্ব হাসান আলীর চেয়ে আর কেউ বেশি কি বুঝতে পারছেন!

তবে এক ভুলে বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হলেও দলের ঐক্য ধরে রাখতে অধিনায়ক বাবর বলেন, ‘আমরা হেরেছি। কিন্তু এর দায় চাপাতে কারও দিকে আঙুল তুলব না। আমরা যেমন একটি পরিবারের মতো খেলেছি, হারের পরও আমাদের দলটা এমনই থাকবে। আমরা সবাই সবার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি। ভুল থেকে আমরা  শিখব। কিন্তু দলে কোনো ভাঙন যেন না ধরে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমরা কেবল চেষ্টা করতে পারি কিন্তু ফল আমাদের হাতে নেই।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর