সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ক্যাপ্টেনস নকেও স্বপ্ন ভঙ্গ

ক্যাপ্টেনস নকেও স্বপ্ন ভঙ্গ

আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা ট্রফি হাতে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন -এএফপি

‘টস জিতলেই ম্যাচ জয়’ -সংযুক্ত আরব আমিরাতে দিবা-রাত্রির ম্যাচে এটি যেন প্রবাদ বাক্যে পরিণত হয়েছিল। আর এই প্রবাদকে ভুল প্রমাণ করার প্রত্যয় নিয়ে টস হেরে ব্যাট করতে নামে নিউজিল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসনের ক্যাপ্টেনস নকে ১৭২ রান করে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সামনে এটা যথেষ্ট ছিল না। ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শের ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরিতে জিতে যায় অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত প্রবাদই ‘সত্য’ হলো। টস জিতে ম্যাচও জিতে গেল ফিঞ্চের হলুদ বাহিনী। টি-২০তে নতুন চ্যাম্পিয়ন পেল ক্রিকেট বিশ্ব।

টি-২০ হচ্ছে পাওয়ার হিটারদের খেলা। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন গতকাল ফাইনালে ৪৮ বলে ৮৫ রানের সাইক্লোন ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দিলেন পর্যাপ্ত স্কিল থাকলে দলের প্রয়োজনে পাওয়ার হিটারের কাজও করা যায়। টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে কোনো অধিনায়কের সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড এটি। কিন্তু এই রেকর্ড গড়েও দলকে জেতাতে পারলেন না। উইলিয়ামসনের ক্যাপ্টেনস নকের পরও নিউজিল্যান্ডের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেল।

কাল পাওয়ার প্লেতে ব্যাকফুটে চলে যায় নিউজিল্যান্ড। প্রথম ছয় ওভারে তারা ১ উইকেট হারিয়ে করে মাত্র ৩২ রান। এই আসরে পাওয়ার প্লেতে এটি তাদের সবচেয়ে কম। প্রথম ছয় ওভারে মাত্র ৩টি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা। শুরুতে উইকেট পড়ে যাওয়ায় নিউজিল্যান্ডের রানের গতি অনেক কমে যায়। প্রথম ১০ ওভারে তারা করে মাত্র ৫৭ রান। কিন্তু পরের ১০ ওভার থেকে নিউজিল্যান্ড করে ১১৫ রান।

১১তম ওভারে কেন উইলিয়ামসন নতুন জীবন পাওয়ার পর থেকেই পাল্টে যায় ম্যাচের চিত্র। কিউই অধিনায়ক যখন ২১ বলে ২১ রান তখন মিচেল স্টার্কের বলে কাভারে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডার হ্যাজলউড বল তালুবন্দী তো করতেই পারেননি উল্টো বাউন্ডারি হয়ে যায়। স্টার্কের ওই ওভার থেকে ১৯ রান নেয় নিউজিল্যান্ড। নতুন জীবন পেয়ে যেন ভয়ংকর হয়ে যান কিউই দলপতি। ২৭ বলে করেন ৬৪ রান। কাল হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন মাত্র ৩২ বলে।

ইনিংসের ১৩তম ওভারে ম্যাক্সওয়েলের বলে তার ছক্কা দুটি ছিল দেখার মতো। ডিপ মিডউইকেট দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন দুবাই স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। পরের বলে দুর্দান্ত স্লগ সুইপে বিশাল ছক্কায় ফিটটি পূরণ করেন। ম্যাক্সওয়েলের ওই ওভার থেকে ১৬ রান নেন। ম্যাচের  ১৬তম ওভারে মিচেল স্টার্ককে যেন রীতিমতো পাড়ার বোলার বানিয়ে ফেলেন। তার ওই ওভার থেকে চারটি বাউন্ডারি ও একটি বিশাল ছক্কা। উইলিয়ামসন একাই নেন ২২ রান। তবে যে হ্যাজলউডের কারণে নতুন জীবন পেয়েছিলেন সেই অসি বোলারই উইলিয়ামসনকে থামিয়ে দেন। 

গতকাল ব্যক্তিগত ১০ রানে একবার নতুন জীবন পেয়েছিলেন ওপেনার মার্টিন গাপটিলও। তারপরও নিজের ইনিংসটাকে ততটা আকর্ষণীয় করতে পারেননি। কিউই ওপেনার আউট হয়েছেন ৩৫ বলে ২৮ রান করে। মজার বিষয় হচ্ছে, যেখানে গাপটিলের মতো পাওয়ার হিটারকে ফিল্ডিং রেস্টিকশনের সময় রান করতে হলো ৮০ স্ট্রাইকরেটে সেখানে উইলিয়ামসনের মতো একজন স্কিল হিটারের স্টাইকরেট ১৭৭। সত্যিই টি-২০ ক্রিকেট বড় বিচিত্র।

তবে উইলিয়ামসনের ক্যারিশম্যাটিক ইনিংসটা ম্লান হয়ে গেল ওয়ার্নার ও মার্শের ঝড়ের কাছে। ৫০ বলে অপরাজিত ৭৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে মার্শ ফাইনাল সেরা হয়ে গেলেন। ৬টি চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা। আর ওয়ার্নার খেলেন ৩৮ বলে  ৫৩ রানের ইনিংস। টুর্নামেন্টে ৪৮ গড়ে ২৮৯ রান করার স্বীকৃতি হিসেবে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার পেয়ে গেলেন ওয়ার্নার। ম্যাচ শেষে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছি। খুবই ভালো লাগছে। আমি সব সময়ই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।’

গতকাল অস্ট্রেলিয়া যখন শিরোপা উৎসবে মেতে ছিল তখন মাথা নিচু করে মাঠ থেকে বের হচ্ছিলেন কিউইরা। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হওয়ার কথা অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের। তার নেতৃত্বে তিন তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু একবারও জিততে পারল না। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তবু দুর্দান্ত লড়াই করেছিল কিউইরা। কিন্তু ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং এবার টি-২০ বিশ্বকাপে সেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হলো না।

তবে কালকের এই হারের জন্য শেষ পর্যন্ত টস হারাকেই দায়ী করলেন কেন উইলিয়ামসন। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ব্যাট করে আমরা একটা ভালো সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু কন্ডিশন আমাদের পক্ষে ছিল না। এখানে আমাদের করারও কিছু ছিল না। তবে অস্ট্রেলিয়া দারুণ খেলেছে। তাদের কৃতিত্ব দিতেই হবে।’

সর্বশেষ খবর