শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

লেগ-স্পিনার বিপ্লবের দোষ কোথায়?

মেজবাহ্-উল-হক

লেগ-স্পিনার বিপ্লবের দোষ কোথায়?

বড় সংগ্রহ না হলেও ম্যাচ প্রায় জিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত হতাশায় মাঠ ছাড়তে হলো টাইগারদের - রোহেত রাজীব

সাকিব আল হাসান নেই, তা আগে থেকেই জানা! নেই স্পেশালিস্ট স্পিনার নাসুম আহমেদও। মিরপুরের স্লো উইকেটের কথা চিন্তা করে একাদশে রাখা হয় বিশেষজ্ঞ লেগ-স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে। কিন্তু সেই বিপ্লবকে সুযোগই দিলেন না অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। অবশ্য সুযোগ দেওয়া হয়নি বললে ভুল হবে! কারণ শেষ ওভারে তো বিপ্লবই বল করেছেন। কিন্তু যখন ম্যাচ শেষ তখনই বল তুলে দেওয়া হয়েছে এ লেগ-স্পিনারের হাতে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল মাত্র ২ রান। শেষের ওভারের দুই বলেই খেলা শেষ!

কেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে আগে বোলিং করতে দেওয়া হলো না? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে! এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে!

বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও এমন একটি ঘটনা ঘটছিল। প্রথম তিন ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করার পরও শেষ ওভারে আর বোলিং করার সুযোগ পাননি সাকিব আল হাসান। অথচ ওই ম্যাচে পার্টটাইমার হিসেবে ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহ নিজে বোলিং করেছেন। সুবিধা করতে পারেননি। আরেক পার্টটাইমার আফিফ হোসেনকে দিয়েও বোলিং করিয়েছেন। তিনিও ফ্লপ। তাদের দুই ওভারেই জয়ের রোমাঞ্চ পেয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তারপর তো জিতেই যায়। সেই ম্যাচে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হারতে হয় বাংলাদেশকে।

গতকাল হারের পেছনেও যেন মাহমুদুল্লাহর ক্যাপ্টেন্সির ‘দুর্বলতা’ খুঁজে পাচ্ছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। কেন বিপ্লবকে দিয়ে আগে বোলিং করানো হয়নি, সে ব্যাখ্যায় ক্যাপ্টেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ম্যাচ শেষে বলেন, ‘পরিকল্পনা ছিল বোলিং করানোর। কিন্তু ওদের দুজন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন, সে কারণে আমাকে বোলিং করতে হয়।’

আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ব্যাটসম্যানও নন। তিনি দলে সুযোগ পেয়েছেন বোলার হিসেবে। কিন্তু কেবলমাত্র বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান উইকেটে থাকার কারণে একজন স্পেশালিস্ট স্পিনার বোলিং করার সুযোগ পাবেন না। বিশ্বকাপে সাকিবকে শেষ ওভারে বোলিংয়ে না নিয়ে আসার পরও একই রকম ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন।

এটা ঠিক যে, বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে বাঁ-হাতি স্পিনারদের ভালো করা চ্যালেঞ্জিং। তার মানে এ অজুহাতে বোলিংই করানো যাবে না, ক্রিকেটে এ যুক্তি কতটা যৌক্তিক তা ক্রিকেট বোদ্ধারাই ভালো বলতে পারবেন।

বিশ্বকাপে টানা পাঁচ ম্যাচে হারার পর ঘরের মাঠে জয় দেখার জন্য উন্মুখ হয়েছিলেন ভক্তরা। দীর্ঘ দেড় বছর পর তারা গ্যালারিতে বসে জয় দেখার জন্য এসেছিলেন। কিন্তু নিজেদের ভুলের কারণে আবারও হারতে হলো। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের সিরিজ হার দিয়ে শুরু করল বাংলাদেশ। হতাশা নিয়ে ঘরে ফিরে গেলেন দর্শকরা।

বিশ্বকাপে ভড়াডুবির পর স্কোয়াডে ছয়-ছয়টি পরিবর্তন আনা হয়েছিল। সাকিব-মুশফিক ছিলেন না। দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও লিটন দাসকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ওপেনিংয়ে সমস্যা তো আর দূর হলো না। কাল দলীয় ১০ রানের মাথায় বিদায় নেন দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও সাইফ হাসান। দুজনের রানের যোগফল ২। নাঈম ১, সাইফ ১। টেস্টের ওপেনার হিসেবে পরিচিত সাইফকে টি-২০তে সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন না। তিনি এক রান করতেই মোকাবিলা করেছেন ৮ বল।

পাওয়ার প্লের শুরুতে উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথম ছয় ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ২৫/৪। এরপরও লোয়ার ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় স্কোর বোর্ডে ১২৭ রান উঠেছিল। ১২৮ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানও পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারিয়ে করে ২৪ রান। কিন্তু স্লো ওভারে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে ঠিকই ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয়।

কালকের ম্যাচের ব্যবচ্ছেদ করলে অনেক ভুলই সামনে চলে আসবে। আবারও ব্যর্থ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। স্লো ওভারে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে পারেননি বোলাররা। তবে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়বে ক্যাপ্টেন্সির দুর্বল দিকগুলো। কেন বিপ্লবের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারলেন না অধিনায়ক?

এমন নয় যে বিপ্লবকে শুরুতে বোলিং দিলেই বাংলাদেশ নিশ্চিত জিতে যেত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একাদশে সুযোগ দেওয়ার পরও কেন একজন লেগ-স্পিনারকে দলের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হলো না! আর যদি তাকে সুযোগ না দেওয়া হবে কেন তাকে দলে রাখা হয়েছিল?  লেগ-স্পিনার বিপ্লবের দোষ কোথায়?

 

স্কোর কার্ড

বাংলাদেশ ইনিংস :

    রান  বল  ৪/৬ স্ট্রাইকরেট

নাঈম ক রিজওয়ান ব হাসান   ১   ৩   ০/০ ৩৩.৩৩

সাইফ ক ফখর ব ওয়াসিম    ১   ৮   ০/০ ১২.৫০

নাজমুল ক ব ওয়াসিম   ৭   ১৪  ০/০ ৫০.০০

আফিফ স্ট্যা. রিজওয়ান ব শাদাব   ৩৬  ৩৪  ২/২ ১০৫.৮৮

মাহমুদুল্লাহ ব নওয়াজ   ৬   ১১  ০/০ ৫৪.৫৫

নুরুল ক রিজওয়ান ব হাসান   ২৮  ২২  ০/২ ১২৭.২৭

মেহেদি হাসান অপরাজিত ৩০  ২০  ১/২ ১৫০.০০

আমিনুল ব হাসান ২   ৫   ০/০ ৪০.০০

তাসকিন অপরাজিত ৮   ৩   ০/১ ২৬৬.৬৭

অতিরিক্ত (ও ৭, লে/বা ১)  ৮

মোট : (৭ উইকেট, ২০ ওভার)  ১২৭

 

উইকেট পতন : ৩/১ (নাঈম, ১.১ ওভার), ১০/২ (সাইফ, ২.৬ ওভার), ১৫/৩ (নাজমুল, ৪.৪ ওভার), ৪০/৪ (মাহমুদুল্লাহ, ৮.৬ ওভার), ৬১/৫ (আফিফ, ১২.৫ ওভার), ৯৬/৬ (নুরুল, ১৬.৫ ওভার), ১১০/৭ (আমিনুল, ১৮.৪ ওভার)।

বোলিং : নওয়াজ ৪-০-২৭-১-৬.৭৫; হাসান ৪-০-২২-৩-৫.৫০; ওয়াসিম ৪-০-২৪-২-৬.০০; হারিস ৪-০-৩৩-০-৮.২৫; শাদাব ৪-১-২০-১-৫.০০।

 

পাকিস্তান ইনিংস :

    রান  বল  ৪/৬ স্ট্রাইকরেট

রিজওয়ান ব মুস্তাফিজ   ১১  ১১  ১/০ ১০০.০০

বাবর আজম ব তাসকিন  ৭   ১০  ১/০ ৭০.০০

ফখর ক নুরুল ব তাসকিন    ৩৪  ৩৬  ৪/০ ৯৪.৪৪

হায়দার এলবিডব্লিউ ব মেহেদি  ০   ৩   ০/০ ০.০০

শোয়েব রান আউট (নুরুল)    ০   ৩   ০/০ ০.০০

খুশদিল ক নুরুল ব শরিফুল   ৩৪  ৩৫  ৩/১ ৯৭.১৪

শাদাব অপরাজিত  ২১  ১০  ১/২ ২১০.০০

নওয়াজ অপরাজিত ১৮  ৮   ১/২ ২২৫.০০

অতিরিক্ত (ও ৫, লে/বা ২)  ৭

মোট : (৬ উইকেট, ১৯.২ ওভার) ১৩২

 

উইকেট পতন : ১৬/১ (রিজওয়ান, ২.৪ ওভার), ২২/২ (বাবর, ৩.৬ ওভার), ২৩/৩ (হাসান, ৪.৬ ওভার), ২৪/৪ (শোয়েব, ৫.৬ ওভার), ৮০/৫ (ফখর, ১৪.২ ওভার), ৯৬/৬ (খুশদিল, ১৬.৫ ওভার)।

বোলিং : মেহেদি ৪-০-১৭-১-৪.২৫; তাসকিন ৪-০-৩১-২-৭.৭৫; মুস্তাফিজ ৪-০-২৬-১-৬.৫০; শরিফুল ৪-০-৩১-১-৭.৭৫; মাহমুদুল্লাহ ৩-০-১৯-০-৬.৩৩; আমিনুল ০.২-০-৬-০-১৮.০০।

ফল : পাকিস্তান ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : হাসান আলি।

সর্বশেষ খবর