শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রথম দিনে রেকর্ড জুটি

সাদা পোশাকে রঙিন লিটন

আসিফ ইকবাল

সাদা পোশাকে রঙিন লিটন

স্টাইলিস্ট ব্যাটসম্যান ডেভিড গাওয়ারের একটি কাভার ড্রাইভ দেখতে গনগনে রোদে সারা দিন বসে থাকতেন ইংলিশ ক্রিকেটপ্রেমীরা। ব্রায়ান লারার স্কয়ার কাট দেখতেও ক্রিকেটপ্রেমীরা অপেক্ষায় থাকতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তারকা খ্যাতি ও সামর্থ্যরে বিচারে গাওয়ার কিংবা লারার ধারে কাছে নন লিটন কুমার দাস। অথচ যখন ব্যাটিং করেন, তখন তিনি ছন্দ লেখেন ২২ গজের উইকেটে। গ্যালারিতে বসে মুগ্ধনয়নে সেটা উপভোগ করেন দর্শক। তার ব্যাটিং সৌন্দর্য ও নান্দনিকতা নিঃসন্দেহে চোখ ও মনকে প্রশান্তি জোগায়। উইকেটের চারদিকে স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটানো ব্যাটিং দেখতে ইচ্ছা জাগে বারবার। কিন্তু লিটন এখন বড় অস্থির। ব্যাটিংয়ে নেমেই শুরু থেকে চার ছক্কার বৃষ্টি ঝড়াতে চান। তাই প্রায়শই হারিয়ে ফেলেন ছন্দ। টি-২০ বিশ্বকাপে ছায়া হয়ে খেলেছেন ড্যাসিং ব্যাটসম্যান। তার ছন্দহীন ব্যাটিংয়ের প্রভাব পড়েছে দলের পারফরম্যান্সে। সে জন্য সমালোচকদের তীক্ষè তরবারিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়েছেন লিটন। সমালোচনার ধার এতটাই তীক্ষè ছিল, নির্বাচক প্যানেল ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজে ছুড়ে ফেলেন তাকে।

বাদ পড়ায় হয়তো বজ্রমুষ্ঠিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। অপেক্ষায় ছিলেন সমালোচনার জবাব দিতে। জবাব দিতে সময় নেননি ২৭ বছর বয়সী ড্যাশিং ব্যাটার লিটন। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে নান্দনিক ব্যাটিংয়ে জবাব দিয়েছেন। খাদের কিনারায় দাঁড়ানো দলকে টেনে নিয়ে যান সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ২০৪ রান যোগ করে। প্রচণ্ড চাপের মুখে লিটন করেন স্বপ্নের সেঞ্চুরি। ১১৩ রানের হার না মানা ইনিংসটি তার ২৬ টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম। তার সেঞ্চুরি ও মুশফিকের অপরাজিত ৮২ রানে ভর করে বাংলাদেশ প্রথম দিন পার করে ৪ উইকেটে ২৫৩ রান তুলে।

টি-২০ ক্রিকেটে লিটন ছিলেন ছন্দহীন। তবে ওয়ানডে ও টেস্টে ছন্দে রয়েছেন। গত জুলাইয়ে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে সেঞ্চুরি করেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। টেস্টেও ধারাবাহিক তিনি। হারারে টেস্টে ৯৫ রান করেন। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মিস করেন সেঞ্চুরি। আগের ৫ টেস্টে তার স্কোর-১৭, ৮, ৫০, ২২, ৭১, ৬৯ ও ৩৮। সে জন্যই নির্বাচক প্যানেল আস্থা রাখেন টেস্টে। তিনিও প্রতিদান দেন। দিনের প্রথম সেশনে ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দল যখন পুরোপুরি কোণঠাসা, তখন হাল ধরেন মুশফিকের সঙ্গী হয়ে। পাকিস্তানি বোলিংয়ের বিপক্ষে ঠাণ্ডা মাথায় দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। দুজনের প্রত্যয়ী ব্যাটিংয়ে দিনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেশনে উইকেটশূন্য ছিল স্বাগতিকরা। দুই সেশনে যোগ করেন ১৯৪ রান। প্র্রথম সেশনের স্কোর ৪ উইকেটে ৫৯।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পরে মুমিনুল বাহিনী। ৪৯ রানের মধ্যে বিদায় নেন সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান, নাজমুল হাসান শান্ত ও মুমিনুল হক। ১৬.২ ওভারে ওপরের চার ব্যাটসম্যান হারিয়ে কোণঠাসা দলকে ঠাণ্ডা মাথায় টেনে নেন লিটন ও মুশফিক। দুজনে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৬৮.৪ ওভারে যোগ করেন ২০৪ রান। চট্টগ্রামে পঞ্চম উইকেট জুটিতে এটা রেকর্ড।

২৬ টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে লিটন অপরাজিত রয়েছেন ১১৩ রানে। ২২৫ বলে ইনিংসটি সাজানো ১১ চার ও ১ ছক্কায়। সেঞ্চুরি করেন ৭৮ নম্বর ওভারের তৃতীয় বলে ঝুঁকিপূর্ণ সিঙ্গেল নিয়ে। বল খেলেন ১৯৯টি। হাফসেঞ্চুরি করেন ৯৫ বলে। স্বপ্নের সেঞ্চুরি করলেও লিটনের সেঞ্চুরিটি নি-িদ্র ছিল না। ব্যক্তিগত ৬৭ রানে সহজ জীবন পান।

 

স্কোর

বাংলাদেশ : ২৫৩/৪ (৮৫ ওভার)

(লিটন দাস ১১৩*, মুশফিকুর রহিম ৮২* সাদমান ১৪, সাইফ ১৪, শান্ত ১৪, মুমিনুল ৬; শাহিন ১/৫০, হাসান ১/৩৮, ফাহিম ১/৩৮ সাজিদ ১/৬৮)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর