বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বকে চমকে দিল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বিশ্বকে চমকে দিল বাংলাদেশ

এমন একটি মধুর ভোরের অপেক্ষায় বছরের পর বছর কাটিয়েছেন মুমিনুল, মুশফিকরা। বহু স্বপ্নের দিন পার করেছেন টাইগার ক্রিকেটাররা। উৎসব, উচ্ছ্বাস করেছেন। আনন্দে মেতেছেন। দেশবাসীকে উৎসবের রঙে রাঙিয়েছেন মুমিনুলরা। ২০০০ সাল থেকে গত বছরে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ১২৭টি। জয় ১৬টি। হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাকে। মাঠে থেকে, মাঠের বাইরে থেকে জয়গুলো দেখেছেন মুমিনুল হক। এবার তার অধিনায়কত্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ।

বৈপরীত্য কন্ডিশনের নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৮ উইকেটের জয়টিকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ অর্জন বলেছেন টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল, ‘হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হয়। এই জয়টাই শ্রেষ্ঠ অর্জন। নিউজিল্যান্ডের মতো কঠিন কন্ডিশনে এটা অনেক বড় অর্জন আমার মনে হয়।’ বাংলাদেশ ২০০১ সাল থেকে নিয়মিত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খেলছে। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০- তিন ফরম্যাট মিলিয়ে আগের ৩২ ম্যাচে জয় ছিল সম্পূর্ণ অধরা। অবশ্য দেশটির মাটিতে জয় ছিল না, এমন নয়। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার তাসমান পাড়ের দেশটিকে দৌর্দ- প্রতাপে হারিয়েছে সাদা পোশাকে, লাল বলের টেস্ট ম্যাচে।

১২৭ টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছে ১৬টি। ৬টি জয় আবার দেশের বাইরে। এজন্য মুমিনুলদের খেলতে হয়েছে ৬১ টেস্ট। জয়গুলোর মধ্যে ১০টি রানের ব্যবধানে, ৪টি উইকেটে এবং দুটি ইনিংস ব্যবধানে। সবচেয়ে বেশি ৮ জয় জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ এবং একটি করে জয় নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ৯-১৩ জানুয়ারি, ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি পার্ক ওভালে।

প্রথম দিন থেকে টেস্টের রশি নিজেদের হাতে নিয়ে নেন মুমিনুলরা। বিশেষ করে তৃতীয় ও চতুর্থ দিনের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। চতুর্থ দিন ব্যাটিং ও বোলিংয়ে টেস্টে চালকের আসনে বসে পড়েন। ব্যাট হাতে মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হাসান শান্ত, মুমিনুল হক ও লিটন দাসের চার হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৫৮ রান করে এগিয়ে যায় ১৩০ রানে। বোলিংয়ে ইবাদত হোসেন গতি ও সুইংয়ে বিধ্বস্ত করে ৫ উইকেট তুলে নেন ব্ল্যাকক্যাপসদের। মাত্র ১৭ রানে এগিয়ে গতকাল পঞ্চম দিন স্কোর কার্ডে আরও ২২ রান যোগ করে স্বাগতিকরা। ১৬৯ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশকে টার্গেট দেয় মাত্র ৪০ রান। সেই রান টপকে যায় দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারিয়ে। চতুর্থ দিন প্রতিপক্ষকে ১৪৭ রানে আটকে রেখে চালকের আসনে বসে নির্ঘুম রাত পার করেছেন টাইগার অধিনায়ক। গতকাল ঐতিহাসিক জয়ের পর ভার্চুয়াল বৈঠকে বলেন, ‘কাল (মঙ্গলবার) রাতে রুমে যাওয়ার পর সত্যি কথা আমি ঘুমাতে পারিনি। যখনই ৫ উইকেট পড়ে গেল, আমার মনে হচ্ছিল ওরা বেশি রান করবে না। কম-টম করতে পারে। এই টেনশনে ঘুম কম হচ্ছিল।’ সারা রাত টেনশন কাজ করলেও দলকে নেতৃত্বে দিয়েছেন ভালোভাবে।

১৬৯ রানে অলআউট করে মাঠে থেকে জয় তুলে নিয়ে ফিরেছেন। ম্যাচজয়ী বাউন্ডারিটি অবশ্য মেরেছেন সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুশফিক। জয়সূচক রান নেওয়ার পর মুমিনুল জড়িয়ে ধরেন মুশফিককে। ঐতিহাসিক জয়ের পর দলের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটারকে ইমোশনাল বলেন, ‘মুশফিক ভাই সবচেয়ে অভিজ্ঞ। ম্যাচে উনি অনেক সম্পৃক্ত ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে উনি আমার সঙ্গে অনেক কথা বলেছেন। আমার কাছে মনে হয়, উনি সবচেয়ে ইমোশনাল মানুষ। উনার অনেক ইমোশন ছিল। তরুণ অধিনায়ক হিসেবে আমাকে উনি অনেক সহায়তা করেছেন। মুশফিক ভাই সবচেয়ে সিনিয়র, উনি কথা বললে সেটা সবার মধ্যে অন্যভাবে কাজ করে।’

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসরে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে হেরেছে পাকিস্তানের কাছে। সিরিজ হারের তিক্ত স্বাদ নিয়ে নিউজিল্যান্ড উড়ে যায়। করোনাভাইরাসের প্রতিকূলতা টপকে জয় নিয়ে মাঠে ছাড়েন মুমিনুলরা।

ইবাদতের স্যালুট

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এ জয়ের নায়ক পেসার ইবাদত হোসেন। ৪৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। উইকেট শিকারের পর ইবাদতের ‘স্যালুট’ সেলিব্রেশন সবাইকে মুগ্ধ করেছে। নিজের সেলিব্রেশন সম্পর্কে এই পেসার বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন সৈন্য। জানি কীভাবে স্যালুট দিতে হয়। স্যালুট দেওয়ার গল্পটাও অনেক দীর্ঘ। আমি ক্রিকেট পছন্দ করি। আমি বাংলাদেশ ও বিমান বাহিনীকে প্রতিনিধিত্ব করি।’

 

অবিশ্বাস্য জয়, নতুন ইতিহাস : মাশরাফি

‘অবিশ্বাস্য জয়, নতুন ইতিহাস, নতুন স্বপ্ন। অভিনন্দন পুরো দলকে, অভিনন্দন মুমিনুলকে। স্পেশাল অভিনন্দন ইবাদত। টেস্ট ক্রিকেট জিতলে জীবন আরও সুন্দর হয়।’

 

সাকিবের আগাম অভিনন্দন বার্তা

‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বছরটা কী দারুণভাবে শুরু হলো। অধিনায়ক, খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফকে বড় অভিনন্দন।’

 

দলকে অভিনন্দন : তামিম ইকবাল

‘অসাধারণ জয়, ঐতিহাসিক জয়। গোটা দলকে অভিনন্দন। বছরের পর বছর, সফরের পর সফর আমরা নিউজিল্যান্ড থেকে খালি হাতে ফিরেছি। এ বার অনেক কারণেই পরিস্থিতি ছিল আরও কঠিন। কিন্তু সব বাধা দূর করে দারুণ এক জয় এনে দিল এই দল।’

 

ইতিহাসে বাংলাদেশ : আইসিসি

‘বাংলাদেশের জন্য ইতিহাস।’ টুইটের সঙ্গে তারা বাংলাদেশের রেকর্ড সংক্রান্ত একটি লিঙ্কও যোগ করে দেয়। ইবাদতকে নিয়ে আইসিসি লিখে, ‘ইবাদত হোসেন দ্বিতীয় ইনিংসে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তার অসাধারণ পারফরম্যান্সই তাকে ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দেয়।’

 

জয় স্মরণীয় হয়ে থাকবে

-লক্ষ্মণ

‘মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ইতিহাস রচনার জন্য বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন। ৮ উইকেটের জয় এবং নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম জয় প্রেরণার এবং অবিশ্বাস্য অর্জন।’

 

অভিনন্দন টাইগার্স : নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট

‘অভিনন্দন টাইগার্স। সবদিকেই তোমরা ভালো খেলেছ।’ নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক লাথাম বলেছেন, ‘এই উইকেটে কিভাবে খেলতে হয় বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই আমাদেরকে তা দেখিয়ে দিয়েছে।’

সর্বশেষ খবর