সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রভাতফেরির স্মৃতি কখনো ভোলার নয়

২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের গর্ব। রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫২ সালে এদিন শহীদ হয়েছিলেন রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, শফিক ও নাম না জানা আরও অনেকে। ভাষার জন্য তাজা প্রাণ ঝরে গেছে এমন নির্মম ঘটনা বিশ্বের কোথায়ও নেই। দিনটি এলে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে লাখো লাখো মানুষ ছুটে যান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। দেশের তারকা ক্রীড়াবিদরাও ছোটবেলা থেকে হাতে ফুল ও ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ কালজয়ী গান গেয়ে শহীদ মিনার যেত। কেমন ছিল তাদের একুশ পালন তা নিয়েই এ প্রতিবেদন

 

প্রিন্সিপালকে  চ্যালেঞ্জ ছুড়ে শহীদ মিনার তৈরি
রকিবুল হাসান

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান ২১ ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগত আপ্লুত হয়ে পড়েন। বললেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারির ভোরে দেখতাম মা ভাই বোনরা শহীদ মিনারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নীরবভাবে তা শুধু তাকিয়ে দেখতাম। আমি ছোট বলে আমাকে নেওয়া হতো না। আমাদের বাসা ছিল পুরান ঢাকা। ঘরে বসে শুনতাম এলাকার বড় ভাইয়েরা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান গেয়ে খালি পায়ে প্রভাতফেরিতে যাচ্ছেন। আমি যখন সেন্ট গ্লেগরিজ স্কুলে পড়ি তখন থেকেই বাঙালি জাতির অহংকার শহীদ মিনারে যাওয়া। আমরা কয়েক বন্ধু মিলেই ফুল দিতে যেতাম।’ ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। আমি কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ক্রীড়া সম্পাদক ছিলাম। ঢাকা কলেজের ওই সময় যিনি প্রিন্সিপাল ছিলেন তিনি ঘোর আইয়ুব খানের সমর্থক। তিনি একুশকে গুরুত্ব দিতেন না। হুঁশিয়ার করে দিতেন কেউ কলেজের ব্যানার নিয়ে শহীদ মিনার গেলে বের করে দেওয়া হবে। আমরা দমবার পাত্র নই। প্রিন্সিপালকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত হয়ে গেলাম। সম্ভবত ১৯৬৮ সাল হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম। যে করে হোক কলেজের অভ্যন্তরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ করব। করলামও তাই, সেই নবনির্মিত মিনারে ফুল দেওয়ার পরই আমরা ঢাকা কলেজের ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের শ্রদ্ধা জানালাম।

 

শহীদ মিনার এঁকে পুরস্কার পেয়েছিলাম
কায়সার হামিদ

জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক কায়সার হামিদ বলেন, ‘বাবা সেনাবাহিনীর অফিসার ছিলেন। তাই আমাদের বাসা ছিল ক্যান্টনমেন্টই। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজে পড়াশুনা করেছি। আমার মনে আছে ২১ ফেব্রুয়ারি এলে প্রতি বছর স্কুলে গান, নাচ, কবিতা, ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হতো। আমি তখন ফাইভ না সিক্সে পড়ি। আর্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। রং পেন্সিল দিয়ে শহীদ মিনার এঁকে ছিলাম। মনে হচ্ছিল কপালে পুরস্কার জুটবে না। কেননা আমার চেয়ে আরও ভালো আঁকতে পারে তারাও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। একে একে পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা হচ্ছে। অথচ আমি তখন মাঠে ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত। দেখলাম আমাকে এক বন্ধু ডাকছে। কায়সার কায়সার এদিকে আয়। তুই আর্টে ফাস্ট হয়েছিস। এরপর মঞ্চে উঠে যখন পুরস্কার নিলাম তখন সে কি আনন্দ। আমি প্রথম শহীদ মিনারে যাই স্কুল থেকেই। নীলক্ষেত পর্যন্ত আমার স্কুলের বাস যেত। এরপর খালি পায়ে হেঁটে শহীদ মিনারে রওনা দিতাম।

সর্বশেষ খবর