মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
৫০ বছরে ফুটবল লিগ

গোলের যত গল্প

১৯৪৮ সাল থেকেই ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ শুরু হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের খতিয়ান বাদ দিলেও স্বাধীনতার পর এই আসর ৫০ বছরে পা দিয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেরও ৫০ বছরপূর্তি। অথচ দুই সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে বাফুফের কোনো উদ্যোগ নেই। দলীয় বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কত মধুর স্মৃতি বা রেকর্ড গড়া হয়েছে, যা অনেকের কাছে অজানা। ৫০ বছরে তারকা ফুটবলারদের গোলের রেকর্ড নিয়েই এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন মনোয়ারুল হক

   

প্রথম সর্বোচ্চ গোলদাতা

১৯৭৩ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে চ্যাম্পিয়ন হয় বিআইডিসি। বিস্ময় হলেও সত্যি যে সেবার যৌথভাবে রানার্সআপ হয়েছিল তিন ক্লাব ওয়ান্ডারার্স, মোহামেডান ও আবাহনী। সর্বোচ্চ গোলদাতা হন আবাহনীর স্ট্রাইকার কাজী সালাউদ্দিন। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পর প্রথম ফুটবল টুর্নামেন্টে মোহামেডানের হয়ে প্রথম সর্বোচ্চ গোলদাতা ও হ্যাটট্রিকের রেকর্ডও সালাউদ্দিনের। ১৯৭৩ সালে ২৪ গোল দিয়ে প্রথম সর্বোচ্চ গোলদাতা হন তিনিই। ১টি ডাবল ও দুটি হ্যাটট্রিকও করেন সেবার। স্ট্রাইকার হিসেবে সালাউদ্দিন ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। গোল দেওয়ার ক্ষেত্রে তার আশপাশেও কেউ ছিলেন না। পূর্ব পাকিস্তান আমলে এ কিংবদন্তি ফুটবলার মোহামেডানে খেললেও তারকার খ্যাতিটা পান আবাহনী থেকেই।

 

স্বপ্নের ডাবল হ্যাটট্রিক

লিগে হ্যাটট্রিক করাটা ছিল মামুলি ব্যাপার। কিন্তু ডাবল হ্যাটট্রিক ছিল স্বপ্নের মতো। এখন যেমন তিন গোল করলেই হ্যাটট্রিক। তখন নিয়ম ছিল টানা তিন গোলে। অর্থাৎ ডাবল হ্যাটট্রিক মানে টানা ছয় গোল করতে হবে। এমন অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করেন মোহামেডানের আর্মিম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ। ১৯৭৩ সালের লিগে ফায়ার সার্ভিসের বিপক্ষে টানা ৬ গোল করে স্বাধীনতার পর প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিকের কৃতিত্ব গড়েন। অথচ প্রথমার্ধে ম্যাচটি ১-১ ড্র ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে হাফিজ ম্যাজিক প্রদর্শনে প্রতিপক্ষদের দিশাহারা করে একের পর এক গোল করতে থাকেন। সেই লিগেই হাফিজের পর দ্বিতীয় ডাবল হ্যাটট্রিক করেন সালাউদ্দিন। হাফিজ উদ্দিন অধিনায়ক হিসেবে একমাত্র ফুটবলার যিনি প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন।

 

৩৯ বছরেও যে রেকর্ড ভাঙেনি

১৯৮০ সালে বিজেএমসি থেকে আবদুস সালাম মুর্শেদী মোহামেডানে যোগ দেন। সে মৌসুমেই ঐতিহ্যবাহী দলটি ফেডারেশন কাপ ও লিগে চ্যাম্পিয়ন। ১৯৭৯ সালে বিজেএমসি থেকে লিগ জয়ের স্বাদ পেলেও সালাম দর্শকদের নজর কাড়েন সাদা-কালো জার্সিতেই। ১৯৮১ সালে ফেডারেশন কাপে ২টি হ্যাটট্রিকসহ সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। সেই থেকে তারকা বনে যান। ১৯৮২ সাল ছিল ফুটবল ক্যারিয়ারে সালামের সেরা বছর। ফেডারেশন কাপে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেও লিগে গোলের নতুন রেকর্ড। সালাউদ্দিন ডাবল লিগ পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ গোল করেন। সালাম ২৭ গোল দিয়ে সেই রেকর্ড ভাঙেন প্রথম পর্ব ও সুপার লিগ মিলিয়ে ২২ ম্যাচে। দুটি হ্যাটট্রিকও ছিল তার। ৩৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সালামের রেকর্ড অটুট রয়েছে।

 

চারে চার আসলাম

১৯৮৩ সালে মোহামেডানে খেলেন শেখ মো. আসলাম। সেবার ফেডারেশন কাপ জিতলেও লিগে তেমন সুবিধা করতে পারেননি এ ফুটবলার। পরের বছর নাম লেখান আবাহনীতে। নতুন ঠিকানায় ছন্দ খুঁজে পান আসলাম। প্রথম পর্বে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানকে হারানোর পেছনে তিনিই ছিলেন নায়ক। ছয় মিনিটের ব্যবধানে প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক মোহসিনকে পরাস্ত করে জোড়া গোল করেন। শুধু তাই নয় সেবার শিরোপা জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রাখেন। প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়দের পেছনে ফেলে তিনিই হয়ে যান সর্বোচ্চ গোলদাতা। ফুটবল ক্যারিয়ারে এটিই ছিল তার প্রথম বড় অর্জন। এরপর টানা তিন লিগেও সবচেয়ে বেশি গোল তারই ছিল। ফুটবল লিগের ৫০ বছরের এ বিরল রেকর্ড কারোর পক্ষে ভাঙা সম্ভব হয়নি। আসলাম প্রথম খেলোয়াড় ঘরোয়া ক্যারিয়ারে গোলের সেঞ্চুরি করেন।

 

বিদেশিদের সেরা

ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে প্রথম বিদেশির আগমন ঘটে ১৯৭৪ সালে। সেবার ভারতের দুই ফুটবলার শ্রী প্রসাদ ও শ্রী মিশ্র মোহামেডানের হয়ে তিন ম্যাচ খেলেন। তবে প্রথম বিদেশি ফুটবলার হিসেবে প্রথম গোলটি করেন শ্রীলঙ্কার মাহিন্দপালা। ১৯৭৭ সালে আবাহনী এ লঙ্কান স্ট্রাইকারকে উড়িয়ে আনে। তার অভিষেক হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানের বিপক্ষে। আবাহনীর বিজয়সূচক গোলটিও করেন তিনি। মাহিন্দ অবশ্য পুরো লিগ না খেলেই শ্রীলঙ্কায় ফিরে যান। তবে বিদেশি ফুটবলার হিসেবে আরও বড় রেকর্ড গড়েন ইরানের বিজন তাহেরি। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে তিনি মোহামেডানে খেলতে আসেন। এক মৌসুম খেলেই তিনি দর্শকদের হৃদয় জয় করেন। সেবার সাদা-কালোদের অপরাজিত হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের হাতছানি। বিজন তাহেরির অসাধারণ নৈপুণ্যে মোহামেডান অপরাজিত হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের রেকর্ড গড়ে। ২৪ গোলে তিনিই হন লিগে প্রথম বিদেশি সর্বোচ্চ গোলদাতা। তিনটি ম্যাচে তাকে রিজার্ভ বেঞ্চে রাখা হয়। অনেকের ধারণা সালামের রেকর্ড যেন না ভাঙে এর জন্যই তাহেরিকে এ তিন ম্যাচ বসিয়ে রাখা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর