সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

রবসনে ছুটছে বসুন্ধরা কিংস

ক্রীড়া প্রতিবেদক

রবসনে ছুটছে বসুন্ধরা কিংস

১৯৮৬ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে প্রথমবারের মতো  ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের দেখা মিলে। বড় কোনো দল নয়, মধ্যম সারির ধানমন্ডি ক্লাব (বর্তমান শেখ জামাল) এক সঙ্গে চার ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার এনে হইচই ফেলে দেয়। পেলের দেশের ফুটবলার তাই দর্শকদের প্রত্যাশা ছিল চার ব্রাজিলিয়ানের ছন্দে মাঠ কাঁপবে। তার ছিটেফোঁটাও দেখা মেলেনি। সেবার ধানমন্ডির অবস্থান ছিল নিচের দিকে। এরপর বিদেশি  ফুটবলারের দেখা মিললেও ব্রাজিলের কেউ আসছিলেন না। আসলে ল্যাটিন থেকে ফুটবল আনাটা চাট্টিখানি কথা নয়। পারিশ্রমিক দেওয়ার সামর্থ্য তো থাকতে হবে। পেশাদার লিগে মাঝামাঝি সময় থেকে ব্রাজিলের ফুটবলারের দেখা মিলছে।

পেশাদার লিগে এখন অহরহ ব্রাজিলের ফুটবলার আসছেন। কিন্তু পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের খেলার ধাঁচ ও কৌশল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে চেনা চেহারাটা তুলে ধরেছেন রবসন রবিনহো। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে প্রকৃত ব্রাজিলিয়ান ছন্দ এসেছে রবসনের মাধ্যমে। ব্রাজিল কেন সর্বোচ্চ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তা বোঝা যাচ্ছে রবসনের ম্যাজিকে। গেল বছর দেশের সবচেয়ে আলোচিত ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের জার্সি গায়ে চড়িয়ে বাংলাদেশে রবসনের অভিষেক। সঙ্গী ছিলেন আরেক ব্রাজিলিয়ান জনাথন ফার্নান্দেজ। আর্জেন্টাইন রাউল বেসেরা ও ইরানের খালিদ শাফিও সঙ্গী ছিলেন। কিন্তু রবসনের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় ফুটবলের প্রকৃত সৌন্দর্য।

গেল  লিগের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন রবসন। যোগ্য লোকের হাতে যোগ্যতার পুরস্কারই উঠেছিল। যেভাবে একের পর এক গোল করছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল ১৯৮২ সালে গড়া সালাম মুর্শেদীর ২৭ গোলের রেকর্ড ভেঙে ফেলবেন। তা হয়নি সর্বোচ্চ একুশ গোলেই থেমে যান। তাহলে কি তিনি ব্যর্থ? না রবসনই ছিলেন আসল নায়ক। যা সালাম পারেননি তা করে দেখিয়ে ছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান। কেননা রবসন শুধু গোলই করছেন না সতীর্থদেরও করাচ্ছেন। ফুটবল ১১ জনের খেলা হলেও রবসনের বেলায় বলা যায় একাই একশো। তার আক্রমণের চেহারাই ভিন্ন। পেছন থেকে এগিয়ে যেভাবে প্রতিপক্ষের দেয়াল ভেঙেছেন তা সত্যিই অসাধারণ। এবার লিগেও মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন এ ব্রাজিলিয়ান। ঘরোয়া ফুটবলে ব্রাজিলিয়ান সৌরভ ছড়াচ্ছেন রবসন। পেলের মাধ্যমে ফুটবলে বিশ্ব চিনেছে ব্রাজিলকে। আর রবসনের দুরন্ত পারফরম্যান্সে ছুটছে বসুন্ধরা কিংস।

বসুন্ধরার অভিষেক আসরে মাঠ কাঁপিয়েছেন রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা ড্যানিয়েল কলিনড্রেস। এবার তিনি খেলছেন ঢাকা আবাহনীতে। নিঃসন্দেহে উঁচুমানের প্লেয়ার। কিন্তু রবসনের ভিতর যে গুণাবলী আছে তা কি কলিনড্রেসের ভিতর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে? অভিজ্ঞ কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘কোনো তর্ক-বিতর্ক নয়। রবসন কেন সেরা তার খেলাই বলে দেয়।’ ঢাকার মাঠে বিদেশি ফুটবলার হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন নালজেগার, এমেকা, ঝুকভ, বিজন তাহিরী, রহিমভ,  সনি নর্দে, ওয়েডসন বা সানডেরা। তবে বসুন্ধরা খেলে রবসন প্রতি ম্যাচে যেভাবে জ্বলে উঠছেন তাতে তাকেই বিদেশিদের সেরা বললেও ভুল হবে না। এমন মন্তব্য জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক সাইদ হাসান কাননের।

ফুটবল বিশ্লেষক গোলাম সারোয়ার টিপু বলেন, ‘সেরাটা দিয়েই রবসন পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। একজন কমপ্লিট প্রফেশনাল ফুটবলার  বলতে যা বোঝায় তার বড় উদাহরণ রবসনই। এবার শুরুটা বসুন্ধরার ভালো ছিল না। ইনজুরির পর ইনজুরিতে বসুন্ধরা কর্মকর্তাদের মাথায় হাত। বসুন্ধরা শিবিরে এখন স্বস্তি নেমে এসেছে রবসনের নৈপূণ্যে। শীর্ষস্থান ধরে রেখে হ্যাটট্রিক শিরোপার পথে এগিয়ে যাচ্ছে কিংস।’

সর্বশেষ খবর