বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

নতুন ইতিহাস

আসিফ ইকবাল

নতুন ইতিহাস

দুই দশকের চেষ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকা জয় করল বাংলাদেশ। অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে স্বপ্ন পূরণ করেছেন তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, তাসকিন আহমেদরা। ১৮ মার্চ সাকিবের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরিয়ানে প্রথমবারের মতো লাল সবুজের বিজয় পতাকা উড়িয়েছিলেন টাইগাররা। জোহানেসবার্গে সমতায় ফিরেছিলেন স্বাগতিকরা। গতকাল পরিচিত সেঞ্চুরিয়ানে ইতিহাস লিখেছেন তামিম বাহিনী। সোনালি কালিতে ইতিহাস লিখতে দিনের শুরুতে বিধ্বংসী বোলিংয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ফাস্ট বোলার তাসকিন। দ্বিতীয় সেশনে মধুর সমাপ্তি টানেন টাইগার অধিনায়ক তামিম। দুই টাইগারের পারফরম্যান্সে ৯ উইকেটের পাহাড়সম ব্যবধানে জয়ে প্রথমবারের মতো সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৯ উইকেটে জিতল টাইগাররা। প্রথমবার জিতেছিল ২০১৫ সালে।    

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ওয়ানডে সিরিজ জেতায় বিসিবি ৩ কোটি টাকা বোনাস দিচ্ছেন ক্রিকেটারদের।

সবার আগে, প্রিয় জন্মভূমি, প্রিয় বাংলাদেশ। জন্মভূমিকে ভালোবাসেন বলে ব্যক্তিগত স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে চিন্তা করেননি এক মুহূর্ত। তাসকিন আহমেদ; ডাক নাম তানজিম। বয়স ২৭। দেশের সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার। ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেন নিয়মিত। ডান হাতি এই ফাস্ট বোলার প্রথমবারের মতো আইপিএলে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। নিলামে বিক্রি না হওয়ার পরও তাসকিনকে চেয়েছিল লক্ষেœৗ সুপার জায়ান্টস। কিন্তু রাজি হননি তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজ খেলার জন্য রয়ে যান।

দক্ষিণ আফ্রিকায় থেকে যাওয়ার এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ডান হাতি ফাস্ট বোলার শুধু রয়েই যাননি, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ইতিহাস গড়তে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। গতকাল সেঞ্চুরিয়ানের সুপার স্পোর্ট পার্কে সিরিজ মীমাংসার অলিখিত ফাইনালে আগুন ঝরানো বোলিং করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বিধ্বংসী বোলিং করে ইতিহাসের সোনালি পাতায় নিজের নাম লিখেন। স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শেষে তাসকিনের বোলিং স্পেল ৯-০-৩৫-৫! ডট বল ৩৮টি! দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের বোলারদের সেরা বোলিং। সেঞ্চুরিয়ানে তৃতীয় সেরা বোলিং। সেরা বোলিং স্পেল আয়ারল্যান্ডের জনস্টোনের, ১৪/৫। তাসকিনের আগুনে বোলিংয়ে ৩৭ ওভারে মাত্র ১৫৪ রানে অল আউট হয় প্রোটিয়াসরা। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো ভেন্যুতে সর্বনিম্ন। আগের সর্বনিম্ন ১৬২, ২০১৫ সালে মিরপুরে। 

তাসকিনের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু নেট বোলার হিসেবে। ২০১৩ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে বিপিএলে নাম লেখান চিটাগাং কিংসের পক্ষে। সেমিফাইনালে রাজশাহীর বিপক্ষে দুরন্ত বোলিংয়ে আলোচনায় উঠে আসেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি। ২০১৪ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে অভিষেক হয় তাসকিনের। অভিষেক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের উইকেট নিয়ে আগাম বার্তা দেন। ওয়ানডেতে অভিষেক একই বছর ১৭ জুন। মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ওয়ানডেতে বাজিমাত করেন ৮ ওভারে ২৮ রানের খরচে ৫ উইকেট নিয়ে। তাসকিনের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ভারত মাত্র ১০৫ রানে অলআউট হয়েছিল। যদিও ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরেছিল। ছন্দে থাকা তাসকিন ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে বোলিংয়ে টাইগারদের তুরুপের তাস ছিলেন। গতির ঝড় তুলে বিশ্বকাপ মঞ্চ কাঁপান। ক্রিকেট মহাযজ্ঞে ৬ ম্যাচে উইকেট নেন ৯টি।

দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে মুস্তাফিজুর রহমান ও তরুণ বাঁ হাতি ফাস্ট বোলার শরিফুল ইসলাম থাকার পরও তামিম বাহিনীর মূল ভরসা তাসকিন। সেঞ্চুরিয়ানে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন। গতকাল অলিখিত ফাইনালে গতির ঝড় তুলে ৯ ওভারে সাজঘরে ফেরান জেনেমান মালান, কাইলি ভেরেইন, ডেভিড মিলার, ডুইন প্রিটোরিয়াস ও কাগিসো রাবাদাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটা টাইগার বোলারদের সেরা পারফরম্যান্স। আগের সেরা বোলিং মেহেদী হাসান মিরাজের, ৯-০-৬১-৪।  

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর