মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
কেশবই ডারবানের মহারাজ

বিদেশের মাটিতে স্পিনে আউট হওয়া ক্রাইম

আসিফ ইকবাল

বিদেশের মাটিতে স্পিনে আউট হওয়া ক্রাইম

প্রথম ইনিংসে বোলিং করেছেন ৩৭ ওভার। মাহামুদুল হাসান জয়, লিটন দাসদের বিন্দুমাত্র চাপে ফেলতে পারেননি। উইকেটশূন্য ছিলেন কেশব মহারাজ। দ্বিতীয় ইনিংসে পুরোপুরি ‘ইউটার্ন’! ডারবানের কিংসমিডের উইকেটে লাটিমের মতো বল ঘুরিয়ে বাংলাদেশকে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন। তার বাঁ হাতের মায়াবী ঘূর্ণিতে মাত্র ৫৩ রানে অলআউট হয়েছে টাইগাররা। হেরেছে ২২০ রানের পর্বতসমান ব্যবধানে। ১০ ওভারের স্পেলে ৭ উইকেট নিয়ে ডারবানের ‘মহারাজ’ হয়েছেন কেশব মহারাজ। ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বশেষ জয় ২০১৩ সালে। পরের চার ম্যাচে ড্র একটি এবং হার তিনটি। স্বাগতিকদের এমন পরিসংখ্যানে স্বপ্ন দেখেছিলেন মুমিনুলরা। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান যে আকাশসমান! ৩২ বছর বয়স্ক বাঁ হাতি স্পিনার কেশব সেটা বুঝিয়ে দেন বিধ্বংসী বোলিংয়ে। পঞ্চম দিনের খরখরে উইকেটে অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে মাত্র ১৯ ওভারে গুটিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। পঞ্চম দিন মুমিনুলরা ব্যাট করেছেন ১৩ ওভার। স্কোরবোর্ডে রান যোগ করেছেন ৪২। ১২৯ টেস্ট পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর ৪৩, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৮ সালে নর্থ সাউন্ডে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। ২০১৭ সালে পচেফস্ট্রোমে ৯০ রানে অলআউট হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টানা ৭ টেস্ট হেরেছে টাইগাররা। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট পোর্ট এলিজাবেথে ৭-১১ এপ্রিল।

ডারবানে তিনশয়ের ওপর রান তাড়া করে টেস্ট জয়ের রেকর্ড সাকল্যে তিনটি। সে হিসাবে ২৭৪ রান তাড়া করে জয় অসম্ভব নয়। পরিসংখ্যান অবশ্য মুমিনুলদের বিপক্ষে ছিল। টাইগাররা যে ৪ টেস্ট রান তাড়া করে জিতেছে, ২১৫ রান টার্গেট ছিল সর্বোচ্চ। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৭ রান করে টেস্ট জিতেছিল টাইগাররা। জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারানো এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস এই স্বপ্ন দেখাচ্ছিল টাইগারদের। কিন্তু কেশবের ঘূর্ণি জাদুতে মাত্র ১৯ ওভারে অলআউট হয়েছে। ওভারের হিসাবে যা  দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টাইগারদের ইনিংসের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১৮.৪ ওভার। ৫৩ রান নিজেদের সর্বনিম্ন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বনিম্ন স্কোর। আগের সর্বনিম্ন ছিল ২০১৭ সালে পচেফস্ট্রোমে, ৩২.৪ ওভারে ৯০ রান। এখন পর্যন্ত শয়ের নিচে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে মোট ১২বার। 

২৭৪ রানের টর্গেটে চতুর্থদিনেই বিপদে পড়ে টাইগাররা। কেশব ও হার্মারের ঘূর্ণিতে স্কোর বোর্ডে ৮ রান জমা হতেই হারায় প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মাহামুদুল হাসান জয়, ছন্দহীন সাদমান ইসলাম ও অধিনায়ক মুমিনুল হককে। নাজমুল শান্তের দৃঢ়তায় ৩ উইকেটে ১১ রান তুল দিন পার করে। গতকাল খেলতে নেমে দিনের প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরেন মুশফিক। সেই শুরু। ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারাতে থাকে টাইগাররা। ১৬ রানে ৫ উইকেট হারানোয় এক সময় শঙ্কা দেখা দেয় টেস্ট ক্রিকেটের সর্বনিম্ন স্কোরে অলআউটের। নাজমুল শান্তের দৃঢ়তায় নিজেদের সর্বনিম্ন স্কোর টপকে যায়।

সপ্তম জুটিতে শান্ত ও তাসকিন সর্বোচ্চ ১৭ রান যোগ করলে স্কোর পঞ্চাশের ঘর পেরোয়। নাজমুল শান্ত ২৬ রান করেন ৫২ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায়। ৫৯ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৬ নম্বর ওভারের পঞ্চম বলে স্ট্যাম্পিং হন তিনি হার্মারকে খেলতে যেয়ে। টাইগারদের ইনিংসে এই দুজন দুই অংকের রান করেন। পাঁচ ব্যাটার শূণ্য করেন। 

আগের দিন ৩ ওভারে জয় ও মুমিনুলকে আউট করে পঞ্চমদিন শাসনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কেশব। গতকাল আরও ৭ ওভার বোলিং করে তুলে নেন ৫ উইকেট। ইনিংস শেষে তার বোলিং স্পেল ১০-০-৩২ ৭। যা তার দ্বিতীয় ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ৪১ টেস্টে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ২০১৮ সালে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তার স্পেলটি ছিল ৪১-১০-১২৯-৯। দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন কেশব মহারাজ।

সর্বশেষ খবর