সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

রিভার্স সুইপে মুশফিকের আত্মাহুতি!

সাবেক অধিনায়ক উইকেটের একপ্রান্ত আগলে রাখলে হয়তো ফলোঅন এড়াতে পারত বাংলাদেশ। শুধু মুশফিক কেন? আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে থাকা ইয়াসিরও সাজঘরে ফিরেন অস্থিরতায় ভুগে। মহারাজ টানা বোলিং করেছেন মুশফিক ও ইয়াসিরের পা বরাবর। যাতে ব্যাটাররা ফরোয়ার্ড ড্রাইভ খেলেন। তেমনই লেগ স্ট্যাম্প বরাবর পায়ের ওপর একটি বলকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে না খেলে ড্রাইভ খেলেন।

আসিফ ইকবাল

রিভার্স সুইপে মুশফিকের আত্মাহুতি!

ডারবানের ঘাসের উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনকে একাই ধসিয়ে দেন প্রোটিয়া বাঁ হাতি স্পিনার কেশব মহারাজ। তাকে সহায়তা করেন অফ স্পিনার সাইমন হার্মার। দুই স্পিনারের মায়াবী ঘূর্ণিতে বেসামাল হয়ে ডারবানে বড় ব্যবধানে হেরে যায় টাইগাররা। পোর্ট এলিজাবেথে দুই প্রোটিয়া স্পিনারকে সামলাতে টাইগার ব্যাটাররা অনুশীলনে বাড়তি সময় দেন। ড্রাইভ, হুক, পুল, কাট শটের পাশাপাশি সুইপ খেলেন বেশি বেশি। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও লম্বা ক্যারিয়ারের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমও পিছিয়ে ছিলেন না। দুই স্বাগতিক স্পিনারকে সামলানোর প্রস্তুতি নিতে আগের দিন ঘণ্টা খানেক শুধু সুইপ আর রিভার্স সুইপ অনুশীলন করেছেন। পোর্ট এলিজাবেথে সেই পরীক্ষায় টাইগার সাবেক অধিনায়ক মুশফিক প্রায় উতরেও গিয়েছিলেন! তুলে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের ২৫ নম্বর হাফসেঞ্চুরি। তবে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। স্রোতের বিরুদ্ধে হার্মারের বলে অহেতুক রিভার্স সুইপ খেলে বোল্ড হন। বলটিকে মুশফিক অফ ড্রাইভ কিংবা অনড্রাইভ খেলতে পারতেন। পারতেন রক্ষণাত্মক ভঙ্গীতে খেলতে। কিন্তু খেলেননি। অথচ আগের বলেই তিনি সুইপ করে হাফসেঞ্চুরি করেন। আগের দিন ওইয়ান মুল্ডার ও ডুয়ান্নে অলিভারের সুইংয়ে নাকাল হয়েছিল। গতকাল হার্মার ও মহারাজের ঘূর্ণিতে নাকাল হয়ে ২১৭ রানে গুটিয়ে যায়।

ইনিংসের ৬০ নম্বর ওভারের শেষ বলে রিভার্স সুইপ খেলে আউট হন মুশফিক। ৫১ রানের ইনিংসটি তার ৮০ টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৪৭ নম্বর ইনিংসের ২৫তম হাফসেঞ্চুরি। তিনি যখন আউট হন, তখন লাঞ্চ বিরতির বাকি ছিল মাত্র ৫ মিনিট। এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আউটের দায়ভার কে নিবে? দলকে বহন করতে হচ্ছে। দলের সবচেয়ে সিনিয়র ও লম্বা ক্যারিয়ারের ক্রিকেটার মুশফিক। সাবেক অধিনায়ক উইকেটের একপ্রান্ত আগলে রাখলে হয়তো ফলোঅন এড়াতে পারত বাংলাদেশ। শুধু মুশফিক কেন? আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে থাকা ইয়াসিরও সাজঘরে ফিরেন অস্থিরতায় ভুগে। মহারাজ টানা বোলিং করেছেন মুশফিক ও ইয়াসিরের পা বরাবর। যাতে ব্যাটাররা ফরোয়ার্ড ড্রাইভ খেলেন। তেমনই লেগ স্ট্যাম্প বরাবর পায়ের ওপর একটি বলকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে না খেলে ড্রাইভ খেলেন। কিন্তু বলটি অন কিংবা অফ সাইডে না যেয়ে মহারাজকে ফিরতি ক্যাচ দেয়। ফলে ভেঙে যায় মুশফিক ও ইয়াসিরের ৭০ রানের জুটি। ইয়াসির আউট হন ব্যক্তিগত ৪৬ রানে। অথচ যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন, তাতে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি পেতেই পারতেন তিনি। ইয়াসিরের ইনিংসটি সাজানো ৮৭ বলে ৭ চারে। মুশফিক ইনিংসটি খেলেছেন ১৩৬ বল ৮ চারে। দুজনের বিদায়ের পর খুব বেশি সময় স্থায়ী ছিল না বাংলাদেশের ইনিংস। ৫.৫ ওভার ও ৩৫ বলে শেষ ৩ উইকেট হারিয়ে ২১৭ রানে গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় দিন মুমিনুলদের ইনিংসের অর্ধেক মুড়িয়ে দেওয়া দুই পেসার অলিভার ও মুল্ডার ছিলেন উইকেট শূন্য। গতকাল টাইগারদের ইনিংসের বাকি ৫ উইকেট নেন দুই স্পিনার হার্মার ও মহারাজ।

ডারবানে প্রথম ইনিংসে দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন মুমিনুলরা। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে মহারাজের ঘূর্ণিতে বোকা হয়ে যায় যান ব্যাটাররা। মাত্র ৫৩ রানে অলআউট হয় ১৯ ওভারে। ডারবানের দুঃস্বপ্ন ভুলতে পোর্ট এলিজাবেথে একাদশে নতুন দুজন ফিরেন। পেটের পীড়ার জন্য ডারবানে খেলেননি তামিম ইকবাল। পোর্ট এলিজাবেথে ফিরে দারুণ ব্যাটিং করে সাজঘরে ফিরেন ৪৭ রানে। ডান কাঁধের ব্যথায় দেশে ফিরেন তাসকিন আহমেদ। তার জায়গায় সুযোগ পান তাইজুল। বাঁ হাতি স্পিনার তাকে খেলানোর যৌক্তিকতা প্রমাণ করেন ৬ উইকেট নিয়ে। গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসেও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন তাইজুল।

সর্বশেষ খবর