বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার ২০১৩-২০২০

সেরা পুরস্কারে তৃপ্তির হাসি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

জীবনের স্মরণীয় দিনই বলা যায়। ক্রীড়াঙ্গনে অবদান রাখার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি- এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে। ৮৫ জন ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক ক্রীড়াঙ্গনে অবদান রাখার জন্য পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। এখন তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলতেই পারেন এত দিনের পরিশ্রম স্বার্থক হলো।

গতকাল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে আট বছরের জমা থাকা পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল থেকে বৃষ্টি হলেও মিলনায়তন ছিল ভরপুর। এমন স্মরণীয় দিন কী কেউ মিস করতে চায়। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় জাহিদ আহসান রাসেলের প্রথম পুরস্কার বিতরণী। এত দিনের পুরস্কারের ব্যবস্থা করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন জাহিদ আহসান রাসেল। ২০১৬ সালে শেষ জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। বীরেন শিকদার ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায়।

প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেননা ১৯৭৫ সালে ঘাতকদের হাতে নিহত হওয়া তাঁর ভাই লে. শেখ জামাল পেয়েছেন মরণোত্তর পুরস্কার। বড় ভাই শেখ কামালের মতো শেখ জামালও ছিলেন খেলা পাগল। ১৯৭২ সালে ঢাকা আবাহনীর ফুটবলে অভিষেক আসরে তিনি খেলেন। এর পর আজাদ স্পোর্টিংয়ের হয়ে মাঠ কাঁপান। তরুণ বয়সেই তিনি ক্রীড়া উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু ক্রীড়াঙ্গন ঘিরে তার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় ১৯৭৫ সালে ৩২ নম্বরে ট্র্যাজেডির পর। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে শহীদ শেখ জামালের পুরস্কারটি নেন শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ঘিরে এখন বড় জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। অথচ এক সময়ে এ খেলা অন্ধকারে  বন্দি ছিল। ক্রিকেটের দুর্দিনে আলো জ্বালিয়ে রেখেছিলেন মোজাফফর হোসেন পল্টু। ক্রিকেট বোর্ডের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। তাঁর অবদানের কথা অনেকে ভুলতে বসেছিলেন। অনেক আগেই তাঁর পুরস্কার পাওয়ার কথা। কেন হয়নি সেটাই রহস্য। যাক দেরিতে হলেও গতকাল জাতীয় পুরস্কার মিলেছে তাঁর। তরুণ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে পাড়ি জমান ক্রিকেটার তানভীর মাজহার ইসলাম তান্না। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনে রাখেন বড় ভূমিকা। হয়ে যান টিম ম্যানেজার। তান্না কেন পুরস্কার পাচ্ছিলেন না এ নিয়ে প্রশ্নের শেষ ছিল না। যাক দেরিতে হলেও মুক্তিযোদ্ধা তান্না তার কাজের স্বীকৃতি পেলেন। আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববী ত্যাগী সংগঠক হিসেবেই পরিচিত। বিশেষ করে নীরবে ক্রিকেটে সেবা করে যাচ্ছেন। এমন ত্যাগী সংগঠক পেলেন জাতীয় পুরস্কার। অভিজ্ঞ সংগঠক ফজলুর রহমান বাবুলও পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।

ক্রীড়াবিদদের আলো ঝলমলে দিনে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন বেশ ক’জন জাতীয় দলের অধিনায়ক। সাফ গেমসে সোনা জেতা যেখানে স্বপ্নে পরিণত হয়। ১৯৯৯ সালে নেপালে প্রথম সোনা আসে জুয়েল রানার নেতৃত্বেই। ফুটবলে ক্যারিয়ার তাঁর স্বার্থক হলো সেরা প্রাপ্তিতে। খালেদ মাহমুদ সুজন ক্রিকেটে পরীক্ষিত যোদ্ধা। আইসিসি ট্রফি জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রাখেন। জাতীয় দলের অধিনায়কও ছিলেন। অবশেষে তিনিও পেলেন পুরস্কার। প্রথম টেস্টজয়ী অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনও পেয়েছেন জীবনের  সেরা স্বীকৃতি। মাহবুব হারুন দেশের হকির খুবই পরিচিত মুখ। দীর্ঘ সময়ে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেন এবং প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় পুরস্কার পেয়ে যেন জীবনের সেরা হাসিটি হাসলেন তিনি।

সর্বশেষ খবর