শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ট্রফি ঘিরে ফুটবল উন্মাদনা

বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলেনি। তবে এখানকার দর্শকরা ফুটবল উন্মাদনায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। আমি অনেক দেশেই গিয়েছি। এতটা উৎসাহ-উদ্দীপনা চোখে পড়েনি কোথাও। - ক্রিস্টিয়ান কারেম্বু

রাশেদুর রহমান

ট্রফি ঘিরে ফুটবল উন্মাদনা

গ্রীষ্মের গরম ছিল। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া। এর মধ্যেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। কিছুক্ষণ পর নেমে এলো বৃষ্টির ধারা। মাথার ওপর ছাদের আশায় এদিক-ওদিক করলেও ফুটবলপ্রেমীরা স্থান ছাড়লেন না। বিশ্বকাপ ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলার আশায় কোকো- কোলার কাছ থেকে পাওয়া টিকিট নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলেন। অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে সোনার ট্রফির সঙ্গে ছবি তুলেই বাড়ি ফিরলেন। গতকাল সকাল থেকেই ফুটবল সমর্থকরা উৎসাহ-উদ্দীপনায় মাতিয়ে তোলেন র‌্যাডিসন ব্লু হোটেল ও তার আশপাশ। বিশ্বকাপ শুরু হতে এখনো কয়েক মাস বাকি। তবে বিশ্বকাপ উৎসব বাংলাদেশে শুরু হয়ে গেল এখন থেকেই।

গতকাল বিশ্বকাপ ট্রফির সঙ্গে ছবি তুলতে এসে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে ছিল দারুণ উন্মাদনা। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকরা বলছিলেন, তাদের দলই এবার চ্যাম্পিয়ন হবে। এক ব্রাজিল সমর্থকদের দাবি, ব্রাজিলের ষষ্ঠ শিরোপা জেতা এবারই হবে। আর্জেন্টিনা সমর্থক দাবি করছেন, লিওনেল মেসিরা দারুণ ফর্মে আছেন। এবার আর্জেন্টিনাই চ্যাম্পিয়ন হবে বলে আশা করেন তারা। অনেক ফুটবলপ্রেমী বাংলাদেশের পতাকা নিয়েও ট্রফির সঙ্গে ছবি তুলেছেন। বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে দেখার আশা তাদের মনে। বাংলাদেশি ফুটবল সমর্থকদের এমন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে বিশ্বকাপ ট্রফি ট্যুর দলের সঙ্গে আসা ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী (১৯৯৮) মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান কারেম্বুও অবাক। তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলেনি। তবে এখানকার দর্শকরা ফুটবল উন্মাদনায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। আমি অনেক দেশেই গিয়েছি। এতটা উৎসাহ-উদ্দীপনা চোখে পড়েনি কোথাও।’ ক্রিস্টিয়ান কারেম্বু ১০ বছর ফ্রান্সের জার্সি গায়ে খেলেছেন। ৫৩টা ম্যাচ খেলেছেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে চারটি ম্যাচ খেলেছেন। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে ফ্রান্সের প্রথম একাদশে ছিলেন তিনি। জিদানদের বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে বড় অবদান ছিল এই মিডফিল্ডারের। ইউরোপিয়ান ফুটবলের উন্মাদনা দেখে বেড়ে উঠার কারেম্বুও বাংলাদেশে এসে মুগ্ধ। বাংলাদেশের মানুষদের ফুটবল উন্মাদনার গল্প চার বছর পর পর আন্তর্জাতিক মহলেরও দৃষ্টি কাড়ে। দেশজুড়ে ফুটবল সমর্থকরা নিজ নিজ প্রিয় দলের পতাকা উড়ায়। পতাকার শহর হয়ে উঠে ঢাকাসহ প্রায় সবখানে। ফুটবল বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন হওয়া তো অলীক কল্পনা! তবে ফুটবল উন্মাদনায় বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন বলাই যায়!

বিশ্বকাপ ট্রফি এলো বাংলাদেশে। এ ট্রফির আসা-যাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। নিরাপত্তাও বিঘিœত হয়নি কোনদিক দিয়ে। নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিকই প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সামনে আনা হয়েছিল বিশ্বকাপ ট্রফি। সাধারণ দর্শকদের ছবি তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কনসার্ট হয়েছে। কিন্তু আরও সুন্দর হতে পারত ট্রফির আয়োজন। যারা সারা বছর অর্থ, শ্রম ও মেধা খরচ করে ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করে যান তাদেরকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া যেত।

তাদের সামনে বিশ্বকাপ ট্রফি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা যেত। এসব আলোচনা এখানে বড্ড বেমানান। সাধারণ কোনো টুর্নামেন্টের ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানেও মঞ্চ ভরে ওঠে ছবি তোলার জন্য। ধাক্কাধাক্কিও কম হয় না। যদি পত্রিকার পাতায় ‘সোনার চাঁদ মুখখানি’ ছাপানো যায়! বিশ্বকাপ ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলার ক্ষেত্রে ধাক্কাধাক্কি সকল মাত্রাই ছাড়িয়ে গেল! ভদ্রলোকেরা এই ধাক্কাধাক্কি থেকে নিরাপদ দূরত্বেই থাকলেন।

তবে এতসব নেতিবাচক দিক সত্ত্বেও বিশ্বকাপ ট্রফি বাংলাদেশে এসে দারুণ এক নাড়া দিয়ে গেল! বাংলাদেশ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে কখনো খেলতে পারবে কি না বলা কঠিন। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের তলানির দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নামও আছে। নয় বছর আগে বিশ্বকাপ ট্রফির রেপ্লিকা এসে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। এবার এলো মূল ট্রফি।

সর্বশেষ খবর