শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

নর্থ সাউন্ডে সাকিবরা ‘সাউন্ডলেস’

মেজবাহ্-উল-হক

নর্থ সাউন্ডে সাকিবরা ‘সাউন্ডলেস’

বাংলাদেশকে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৩ রান করে যে উইকেটকে সেলিব্রেশনের মঞ্চ বানায় ক্যারিবীয় পেসাররা, সেই একই উইকেটেই হতাশায় মাথায় হাত বাংলাদেশ পেসারদের। ছবিতে দেশসেরা পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। -এএফপি

ওয়ানডেতে ইংল্যান্ড যখন ৪৯৮ রানের পাহাড় গড়ে, এর কয়েক ঘণ্টা আগে টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ তখন ১০৩ রানে অলআউট হয়ে যায়! স্থান কিংবা ফরম্যাট কোনো কিছুতেই মিল নেই দুই ম্যাচের। কিন্তু এখানে সামর্থ্যরে একটা প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

পুরো ক্রিকেট বিশ্ব এখন টি-২০ মেজাজে চলছে। অনেক বেশি রান হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেন উল্টো পথে হাঁটছেন। তারা রান করতেই যেন ভুলে যাচ্ছেন।

নর্থ সাউন্ডে মাত্র ১০৩ রানে অলআউট হওয়ার পেছনে কী যুক্তি দেবেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা? ক্যারিবীয় বোলাররা কি খুবই ভয়ংকর ছিলেন।

কেমার রোচ, জয়ডেন সিলস, আলজারি জোসেফ এবং কাইল মেয়ার্সের শরীরে কি জোয়েল গার্নার, অ্যান্ডি রাবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, মার্শালদের আত্মা ভর করেছিল! ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণ যুগের এই চার বোলার যখন ছিলেন, তখন তাদের সামনে যেকোনো ব্যাটার নতজানু হতেন। বাইশ গজে গেলেই ব্যাটারদের হাত কাঁপত। কিন্তু রোচ-সিলস-জোসেফ-মেয়ার্সরা কি সে মানের বোলার? নাকি বাংলাদেশের ব্যাটাররা নিজেদের আত্মসমর্পণ করে তাদের বোলিং বীরত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছেন? এ নিয়ে গবেষণা হতে পারে।

তবে এটা ঠিক, উইকেট সব সময়ই একটা বড় ফ্যাক্টর। যে উইকেটে খেলা হচ্ছে তা পেস বোলারদের জন্য স্বর্গ। কিন্তু টাইগার বোলাররা এ বিষয়ে কী কোনো যুক্তি দাঁড় করাতে পারবেন?

কারণ, বাংলাদেশকে মাত্র ১০৩ রানে অলআউট করে দেওয়ার পর মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে ৯২ রান করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম দিনে দুই দলের ইনিংস দুটি দেখলে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। বাংলাদেশ উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার দিনও স্কোর বোর্ডে রান তুলেছে তিনের উপরে গড়ে, অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওভারপ্রতি গড় দুইয়েরও নিচে। পরিস্থিতি বুঝে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয় তা বুঝতে পেরেছেন ক্যারিবীয়রা, কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা কী করলেন!

নর্থ সাউন্ডে যে উইকেট..., টেস্টে এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটাররা তখনই দ্রুত গতিতে রান তোলেন যখন তারা অনেক বেশি অস্বস্তিতে ভোগেন। সেটা অবশ্য বাংলাদেশের ব্যাটারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখেই বোঝা গেছে। একমাত্র অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ছাড়া সব ব্যাটারই বাইশ গজে ভীষণ অস্বস্তি বোধ করেছেন।

আবারও রানের খাতা খোলার আগে ড্রেসিং রুমে ফিরেছেন ছয় ব্যাটার। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা আছে মাত্র সাতটি। কিন্তু লজ্জার বিষয় হচ্ছে, এমন রেকর্ডে সাতবারের মধ্যে তিনবারই আছে বাংলাদেশের নাম।

সাকিব আল হাসান তৃতীয়বারের মতো টেস্ট দলের নেতৃত্বে ফিরেছেন। দলের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকার কথা। কিন্তু প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই বড় ধাক্কা খেলেন ক্যাপ্টেন। প্রথম ইনিংসে তিনি লড়াই করার জন্য কোনো সঙ্গীই পেলেন না।

সাকিব আল হাসান ৫১ রানের ইনিংস খেলেছেন। এ ইনিংসটা মোটেও বড় কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু সাকিব তার দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। মিডল অর্ডারে নেমে একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন। আরেক প্রান্তে একের পর এক উইকেট পড়ছিল। শেষ পর্যন্ত ১০ উইকেট জুটিতে কোনো উপায়ন্তর না দেখে মারতে শুরু করলেন এবং আউট!

বাংলাদেশের ইনিংসে সাকিবের অংশটুকু বাদ দিলে আর বলার মতো কিছু থাকে না। সেখানে কেবলই হতাশার ছবি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এসেছে তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে, ২৯ রান। এরপর টানা তিন ব্যাটার শূন্য রানে ফিরেছেন। মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক ব্যর্থ।

এ ছাড়া নুরুল হাসান সোহান, মুস্তাফিজুর রহমান ও খালেদ আহমেদও নামের পাশে কোনো রান যোগ করতে পারেননি।

বাংলাদেশের ব্যাটারদের সমস্যা যতটা না স্কিলে, তার চেয়ে ঢেড় বেশি মানসিকতায়। প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সাহস নেই বললেই চলে!

অন্যদের চেয়ে এখানেই আলাদা সাকিব আল হাসান। তিনি শূন্য রানে আউট হন, কিংবা সেঞ্চুরি করেন! কখনোই মানসিকভাবে হেরে যান না। ধ্বংস্তূপে দাঁড়িয়েও তিনি আশা হারান না। যে কোনো পরিস্থিতিতে লড়াই করেন বুকচিতিয়ে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের এ নর্থ সাউন্ডে ২০১৮ সালে মাত্র ৪৩ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। যা টেস্টের ইতিহাসে টাইগারদের সর্বনিম্ন স্কোর। আর এবার ১০৩। এ টেস্টে শেষ পর্যন্ত রক্ষা হবে কি না! তবে এটা বলা যায় আপাতত নর্থ সাউন্ডে ‘সাউন্ডলেস’ বাংলাদেশ!

সর্বশেষ খবর