সোমবার, ২০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
আবাহনীর গৌরবময় ৫০ বছর

অনন্য এক সভাপতি

‘শেখ কামালের জন্যই আবাহনী আজ দেশসেরা। আমরা ভাগ্যবান যে শেখ কামাল জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁকে সভাপতি হিসেবে পেয়েছি।’

মনোয়ার হক

অনন্য এক সভাপতি

আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামাল

স্বাধীনতার পর ক্রীড়াঙ্গনে বড় চমক ছিল আবাহনীর আবির্ভাব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালের হাত ধরেই এ ক্লাবটির যাত্রা। তিনি ঢাকা আবাহনীর প্রথম সভাপতি। ১৯৭২ সালে প্রথম বিভাগ লিগে ফুটবল দিয়েই ক্লাবটির অভিষেক। এরপর ক্রিকেট, হকি, টেবিল টেনিস ও অন্য খেলায় আবাহনীর দেখা। ক্রীড়াঙ্গনে বড় চমক আনে এই ক্লাব। সেই সময়ে ঢাকা ফুটবলে ইউরোপিয়ান স্টাইলের দেখা মেলে আবাহনীর মাধ্যমে। জার্সিতে নতুনত্ব সব মিলিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া। ট্র্যাজেডি হচ্ছে ক্লাব প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মধ্যে শেখ কামাল না ফেরার দেশে চলে যান সবাইকে কাঁদিয়ে। ১৯৭৫ সালে কালো রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘাতকদের হাতে নিহত হন এ ক্রীড়াপ্রেমিক। তবু ক্রীড়াপ্রেমীদের হৃদয়ে শেখ কামালের নামটি কখনো ভোলবার নয়। নিজে খেলেছেন, ক্লাব গড়েছেন, দেশের ক্রীড়া উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এমন ক্রীড়াপ্রেমিকের আর কখনো দেখা মিলবে কী?

কত আঘাত ও প্রতিরোধ সামাল দিয়ে আবাহনী এখন শুধু দেশ নয়, উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাবও। ফুটবল, ক্রিকেট ও হকিতে সবাইকে ছাড়িয়ে আবাহনী সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের মালিক। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আবাহনী লিমিটেডে পরিণত হয়েছে। দেখতে দেখতে ৫০ বছরের পা দিল এ ক্লাব। সাফল্যের হিমালয় গড়েছে আবাহনী। এর পেছনে অনেকের কম বেশি অবদান আছে। কিন্তু আবাহনীতে শেখ কামালের নামটি স্থায়ী হয়ে থাকবে।

আবাহনী ফুটবল দলের প্রথম অধিনায়ক আবদুস সাদেক বলেন, ‘শেখ কামালের জন্যই আবাহনী আজ দেশসেরা। আমরা ভাগ্যবান যে শেখ কামাল জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁকে সভাপতি হিসেবে পেয়েছি। তরুণ বয়স বলেই বরাবরই তিনি ছিলেন উজ্জীবিত। সভাপতি বলে কোনো অহংকার তাঁর ভিতরে দেখেনি। ক্লাব ঘিরে এতটা উৎসাহিত ছিলেন যে দেখা যেত আমাদের অনুশীলনে নামার আগে তাঁর উপস্থিতি।’ ১৯৭৪ সালে আবাহনী ফুটবল লিগে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই দলের অধিনায়ক গোলাম সারোয়ার টিপু বলেন, ‘আবাহনীর গৌরবময় ৫০ বছরে বড় গৌরবই হচ্ছেন শেখ কামাল। সত্যিকারের খেলা পাগল বলতে যা বোঝায় তা কামালের ভিতর ছিল। আর সভাপতি হিসেবে তুলনাহীন। এক ঘটনার কথা বলি, ১৯৭২ সালে ওয়ান্ডারার্সের বিরুদ্ধে আবাহনী ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। তখন আবাহনীর কোনো সাপোর্টার ছিল না বললেই চলে। ওয়ান্ডারার্স ও মোহামেডানের সাপোর্টাররা মিলে মাঠে নেমে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আহত হয়ে বেশ কজন খেলোয়াড় হাসপাতালে ভর্তিও হন। শেখ কামালকে তখন অনেকেই বলেছিলেন মামলা করতে। কামাল তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এটা খেলারই অংশ অযথা মামলা করে কাউকে হয়রানি করা ঠিক হবে না। সত্যিই সেদিন আমি কামালের মুখে একথা শুনে মুগ্ধ হয়ে যাই। আরেকটি কথা না বললেই নয়, ১৯৭৫ সালে লিগের প্রথম পর্বে আবাহনী ০-৪ গোলে হেরে যায় মোহামেডানের কাছে। অস্বীকার করব না মাঠে সেদিন কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। অথচ পরের দিন সকালেই জানতে পারলাম এমন বিজয়ের জন্য শেখ কামাল মোহামেডানে মিষ্টি পাঠিয়েছেন।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর