বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
আজ সিরিজ জয়ের মিশন

মিরাজ শরিফুলে দুরন্ত জয়

‘আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কন্ডিশনে গিয়েও সিরিজ জিতেছি। তা ছাড়া এখানে তো বৃষ্টির জন্য ঠিকঠাক অনুশীলনই করতে পারিনি। তবে আমরা সত্যিই খুবই ভালো খেলেছি।’

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মিরাজ শরিফুলে দুরন্ত জয়

প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডেতে চেনা রূপে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই টাইগাররা দেখাল তাদের আগ্রাসী চেহারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে তুলে নিল এক দুরন্ত জয়। টাইগাররা ক্যারিবীয়দের হারিয়েছে ৬ উইকেটে।

হেসে খেলে ব্যাটিং করে ৫৫ বল আগেই ম্যাচ শেষ করে দিয়েছে টাইগাররা। তবে এই ম্যাচে কাজের কাজটি করেছেন বোলাররা। যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা টি-২০ ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দিলেন তারা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারলেন না।

প্রথমে ব্যাট করে ১৪৯ রানের বেশি করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেছিলেন ব্রুকস। ১৫০ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেট হারিয়েই জিতে যায় বাংলাদেশ।

জয়ের রাস্তাটা সহজ করে দিয়েছিলেন দুই বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ ও শরিফুল ইসলাম। স্পিন ও পেস বোলিংয়ের সমন্বয়ে উইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ।

শরিফুল মাত্র ৩৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন তিনি। স্পিনে জাদু দেখিয়েছেন মিরাজ। তিনি ৩৬ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। অন্য বোলাররাও কেউ কারও চেয়ে কম নন। কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান একটি মাত্র উইকেট পেলেও বোলিংয়ে ছিলেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। এমন বেশ কিছু ডেলিভারি দিয়েছে -যা প্রথম দিকের ‘ভয়ংকর মুস্তাফিজ’কে মনে করিয়ে দিয়েছে। ৮ ওভারে তিনি রান দিয়েছেন মাত্র ৩৪।

এই ম্যাচে ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছে স্পিনার নাসুম আহমেদের। তার ঘূর্ণিতে রীতিমতো নাকাল হয়ে পড়েছিলেন স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা।  কোনো উইকেট না পেলেও এই ম্যাচে সবচেয়ে কিপটে বোলার ছিলেন তিনি। ৮ ওভারে রান দিয়েছেন মাত্র ১৬। এর মধ্যে ছিল তিনটিই মেডেন ওভার। টি-২০র যুগে যা সত্যিই অভাবনীয়। তাই উইকেট না পেলেও ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম ম্যাচে রাঙিয়ে দিয়েছেন এই তারকা।

বোলিংয়ে দারুণ নিয়ন্ত্রণ ছিল পেসার তাসকিন আহমেদের। ৮ ওভারে তিনি দিয়েছেন মাত্র ২৫ রান।

টেস্ট ও টি-২০ সিরিজে বাজে পারফরম্যান্সের পর ওয়ানডে সিরিজে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ যেন বেশ চাপেই ছিল। তবে চাপের বোঝাটা কিছুটা হলেও বেশি ছিল বোলারদের ওপর। কেননা টি-২০ সিরিজ হারার পর টি-২০ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ বোলারদের দায়ী করেছিলেন। হয়তো এই চাপের কারণেই প্রথম ওয়ানডেতে শুরু থেকে বোলাররা ছিলেন অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। মিরাজ-শরিফুলদের আগ্রাসী রূপই বাংলাদেশের জয়কে সহজ করে দিয়েছে।

টাইগার দলপতি তামিম ইকবালের কাছে এমন জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান টসের! তিনি বলেন, ‘এমন উইকেটে খেলা দুই দলের জন্যই অনেক কঠিন ছিল। তবে জয়ের পেছনে বড় বিষয় হচ্ছে, টস জয়। তার মানে এই নয় যে কেবল পিচের কারণেই আমরা জিতেছি।’

ম্যাচসেরা মেহেদী হাসান মিরাজ পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের সামর্থ্যরে কথা বলতেও ভুলেননি, ‘ওয়ানডেতে আমরা কেমন দল সেটা সবাই জানে। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কন্ডিশনে গিয়েও সিরিজ জিতেছি। তা ছাড়া এখানে তো বৃষ্টির জন্য ঠিকঠাক অনুশীলনই করতে পারিনি। তবে আমরা সত্যিই খুবই ভালো খেলেছি। সবাই সবার দায়িত্ব সম্পর্কেও অবগত আছেন।’

যখন নির্দিষ্ট কোনো ফরম্যাট নিয়ে ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি থাকে তখন ওই ফরম্যাটে তাদের জয়ের সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যায়। যেমন টেস্ট ও টি-২০তে ভালো করতে না পারলেও সব শেষ সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

প্রথম দুই সিরিজ হারার পর এই সিরিজ নিয়ে টাইগাররা অনেক বেশি সতর্কও হয়েছেন। আর এই বাড়তি সতর্কতার কারণে দারুণ এক সাফল্যও এসেছে। তাই বলে প্রথম ম্যাচ জেতার পর যে ক্রিকেটাররা আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন- এমন নয়!  সবার টার্গেট সিরিজ জয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচটি আজই। সেই একই ভেন্যু -প্রভিডেন্সে খেলা। আর জিতে আজই সিরিজ নিশ্চিত করতে মরিয়া টাইগাররা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর