সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

যেখানে শুধুই মোসাদ্দেক

আসিফ ইকবাল

যেখানে শুধুই মোসাদ্দেক

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত একটি মাত্র শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে ডাবলিনের ওই ফাইনালে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করার নায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ব্যাটার হিসেবে যার পরিচিতি। অথচ গতকাল হারারে স্পোর্টস গ্রাউন্ডে বল হাতে যা করলেন, তাতে ইতিহাস হয়ে গেছেন মোসাদ্দেক। তিনি মূলত ব্যাটার। দলের প্রয়োজনে অফ স্পিন করেন। গতকাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম বল থেকে যেভাবে ভেলকি দেখান, তাতেই ইতিহাসের সোনালি পাতায় চিরস্থায়ী হন। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ইনিংসের প্রথম ৫ উইকেট নেন মোসাদ্দেক। যেখানে সঙ্গী নেই অন্য কোন টাইগার ক্রিকেটার। জিম্বাবুয়েকে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৫ রানে বেঁধে রাখতে সামনে থেকে নেতৃত্বে দেন মোসাদ্দেক সৈকত। স্বাগতিক দলের ইনিংস শেষে অফ স্পিনারের স্পেল ৪-০-২০-৫। যা বাংলাদেশের টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসে যৌথভাবে দ্বিতীয় সেরা বোলিং। দেশের সেরা বোলিং বাঁ হাতি স্পিনার ইলিয়াস সানির। ২০১২ সালে বেলফাস্টে ইলিয়াসের বোলিং স্পেল ছিল ৪-০-১৩-৫। টাইগারদের টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসে আরও দুই

বোলার ৫ উইকেট নিয়েছেন।

২০১৮ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাকিবের স্পেল ছিল ৪-০-২০-৫ এবং ২০১৬ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে টি-২০ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুস্তাফিজুর রহমানের স্পেল ছিল ৪-০-২২-৫। আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেট সেরা বোলিং আইসিসি সহযোগী দেশ নাইজেরিয়ার পিটার আহো’র। ল্যাগোসে সিয়েরালিওনের বিপক্ষে তার স্পেল ৩.৪-১-৫-৬!

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি সোহান বাহিনী হেরে যায় ১৭ রানে। সিরিজে সমতা ফেরানোর ম্যাচে গতকাল দুটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে নিয়ন্ত্রণহীন বোলিং করায় সাজঘরে বসে থাকতে হয়েছে ডান হাতি পেসার তাসকিন আহমেদকে। তার জায়গায় নেওয়া হয় হাসান মাহমুদকে। যিনি ২০২০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-২০ ম্যাচ খেলেছিলেন। বাজে বোলিং করায় বাদ পড়েন বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। তার জায়গায় সুযোগ পান অফ স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান। দুটি পরিবর্তন নিয়ে গতকালও টস হারেন টাইগারদের অষ্টম অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। ফিল্ডিংয়ে নেমে সোহান সবাইকে চমকে দেন মোসাদ্দেকের হাতে বল তুলে দিয়ে। তিনিও অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন। ইনিংসের প্রথম বলে সাজঘরে ফেরত পাঠান রেগিস চাকাভাকে। তার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলতে যেয়ে সোহানের গ্লাভসবন্দী হন চাকাভা। প্রথম ওভারের শেষ বলে সাজঘরে ফেরান প্রথম ম্যাচে ৬৭ রান করা ওয়েসলি মাধেভেরেকে। প্রথম ওভারেই ২ উইকেট নিয়ে মোসাদ্দেক কোণঠাসা করে ফেলেন স্বাগতিকদের। পরের ৩ ওভারে উইকেট নেন আরও ৩টি। তার দ্বিতীয় ও ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তিন নম্বর বলে রিভার্স সুইপ খেলতে যেয়ে স্লিপে লিটনকে ক্যাচ দেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। তৃতীয় ওভারে মোসাদ্দেককে ডাউন দ্য উইকেটে মারতে যেয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন শিন উইলিয়ামস। স্কোর বোর্ডে তখন ৪.৪ ওভারে ২০ রানে ৪ উইকেট। নিজের চতুর্থ ও শেষ ওভারে পঞ্চম উইকেটের স্বাদ নেন মোসাদ্দেক। পঞ্চম বলে স্লগ সুইপ খেলেন মিল্টন সুম্বা। কিন্তু বল মিস টাইমিং হওয়ায় ক্যাচ উঠে মিড উইকেটে। হাসান মাহমুদ দৌড়ে ডাইভ দিয়ে ক্যাচ নেন। ৪ ওভার শেষে মোসাদ্দেকের স্পেল ৪-০-২০-৫। তার আগের সেরা বোলিং দেহরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩-০-২১-২। ২০ ম্যাচ ক্যারিয়ারে আরও একবার ৪ ওভারের স্পেল করেছিলেন মোসাদ্দেক। ২০ ম্যাচ শেষে ডান হাতি অফ স্পিনারের উইকেট ১২।

স্কোর কার্ড

জিম্বাবুয়ে : ১৩৫/৯ (২০ ওভার)

(সিকান্দার রাজা ৬২, রায়ান বার্ল ৩২; মোসাদ্দেক ৫/২০, মুস্তাফিজ ১/৩০)

বাংলাদেশ : ১৩৬/৩ (১৭.৩ ওভার)

(লিটন ৫৬, আফিফ ৩০*; উইলিয়ামস ১/১৩, সিকান্দার ১/১৮)

ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।

 ম্যাচসেরা : মোসাদ্দেক হোসেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর