শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

আর কত ‘শিক্ষা’ নেবেন ক্রিকেটাররা?

বাংলাদেশ দল এমন একটা বিদ্যালয়, যার শিক্ষার্থীরা সবই ‘আদুভাই’! কোচ শিক্ষকের মতো দিনের পর দিন শেখাতে থাকবেন, ক্রিকেটাররা শিক্ষার্থীর মতো শিখবেন! কিন্তু ফলাফল হবে সেই আগের মতোই।’

মেজবাহ্-উল-হক

আর কত ‘শিক্ষা’ নেবেন ক্রিকেটাররা?

শিক্ষার কোনো শেষ নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীর জন্য জরুরি হচ্ছে, তার শেখার ইচ্ছা থাকতে হবে! দরকার দৃঢ় মনোবল। পাশাপাশি কঠোর অধ্যবসায়ও জরুরি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, শিক্ষাটা কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশ দল এক একটি সিরিজে হারার পর সেই ভাঙা রেকর্ডটা বাজায় ‘আমরা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি’!

সত্যিই কি ক্রিকেটাররা ভুল থেকে শিক্ষা নেন? তাহলে বার বার কেন একই ভুল করেন। যাচ্ছেতাই ফিল্ডিং। ব্যাটিংয়ে আগ্রাসী মনোভাব নেই। বোলিংও সাদামাটা।

বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছিলেন, এবার টি-২০ সিরিজে তারা ফলাফলের ওপর গুরুত্ব দেবেন না, তারা ক্রিকেটারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের দিকে নজর দেবেন!

কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজে কি দেখা গেল? বাংলাদেশ দলকে দেখে কি মনে হয়েছে, ক্রিকেটাররা কি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন! বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কি ঠিক ছিল?

পুরো সিরিজের কথা বাদই দিলাম। শেষ ম্যাচে শেষ ওভারটার কথাই ধরুন! তখন জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ১৯ রান। স্ট্রাইকিং প্রান্তে রয়েছেন টি-২০ ক্রিকেটে ‘ডেঞ্জারম্যান’ বলে পরিচিত আফিফ হোসেন ধ্রুব। অপরপ্রান্তে নতুন পেসার হাসান মাহমুদ।

এমন সময় আফিফের কি করণীয় তা ক্রিকেটের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ লোকটিও বলতে পারবেন কি করতে হবে? জয়-পরাজয় যাই হোক, এমন পরিস্থিতিতে আফিফকে একাই খেলতে হবে। হয় বাউন্ডারি হাঁকাতে হবে, নয়তো ডাবল রান নিতে হবে। সিঙ্গেলস নেওয়ার কোনো সুযোগই নেই।

কিন্তু আফিফ করলেন কি, সিঙ্গেলস নিয়ে অপরপ্রান্তে গেলেন। আর হাসান মাহমুদ পরের বলে মারতে গিয়ে আউট।

এখানে আফিফ মোটেও দলের কথা চিন্তা করেননি। যেন তিনি চেয়েছিলেন দল হারে হারুক, তিনি অপরাজিত থাকবেন। তার ব্যক্তিগত গড় বেড়ে যাবে। জয় আসুক না আসুক তাতে তার কি -ভাবটা এমন! দল হেরেছেও! আর আফিফ অপরাজিত ছিলেন।

তার গড় বেড়ে গেছে। এমন কি আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়েও তিনি চার ধাপ এগিয়েছেন। বাহ্, কী চমৎকার! এই হচ্ছে আমাদের টি-২০ ডেঞ্জারম্যানের ভাবনা।

শুধু এক আফিফ নন, যেন আমাদের অধিকাংশ ক্রিকেটারই খেলেন কেবলই নিজের জন্য। দলের জয়ের চেয়ে যেন বেশি চিন্তা থাকে কিভাবে পরের ম্যাচে নিজের অবস্থান কনফার্ম করা যায়!

ক্রিকেটারদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে সেই জেদ দেখা যায় না, আমি তো দেশের হয়ে খেলছি, যেকোনো ভাবেই হোক দলকে জেতাতেই হবে! ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের চেয়ে দল আগে -এমন ভাবনাটা নেই বললেই চলে!

টি-২০ সিরিজে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে বিরক্ত টিম ডিরেক্টরও। খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা বারবার বলি, নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে। কিন্তু আমরা কবে সে শিক্ষাটা নেব? আমি সম্পূর্ণ দোষ দেব ক্রিকেটারদের। তাদের প্রয়োগ সম্পূর্ণ ভুল ছিল।’

অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ড নয়, জিম্বাবুয়ের মতো পুঁচকে দলের বিরুদ্ধেই ভয়ে থাকেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা! টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ নিজেই তা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেদের মধ্যে ভয়ের একটা ব্যাপার কাজ করে। আমি বলব, ভীতি নিয়ে খেললে এই সংস্করণে জেতা খুবই কঠিন। আমার মনে হয়, ব?্যাটিংয়ে ভয়টা থাকছে, বোলিংয়ে ভয়টা থাকছে। তরুণ দলের যেভাবে ফিল্ডিং করা উচিত, সেটাও হয়নি। প্রতিটি ম্যাচেই ক?্যাচ মিস হয়েছে, মিস ফিল্ডিং তো হয়েছেই।’

‘কোচরা যতই কোচিং করাক, আমি খুব কাছ থেকে তো দেখি, মাঠে কাজে না লাগাতে পারলে তো লাভ হচ্ছে না। অনুশীলনে ঠিকই ক্যাচ ধরছে, মাঠে চাপের জন্য পারছে না। এই চাপ থেকে ওদেরই বের হয়ে আসতে হবে।’

বাংলাদেশ দল এমন একটা বিদ্যালয়, যার শিক্ষার্থীরা সবই ‘আদুভাই’! কোচ শিক্ষকের মতো দিনের পর দিন শেখাতে থাকবেন, ক্রিকেটাররা শিক্ষার্থীর মতো শিখবেন! কিন্তু ফলাফল হবে সেই আগের মতোই।

অসহায় ভক্তরা বার বার হতাশ হয়ে কেবল প্রশ্ন করবেন, আর কত ‘শিক্ষা’ নেবেন ক্রিকেটাররা?

সর্বশেষ খবর