বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
৪০০তম ওয়ানডেতে জয়ের নায়ক আফিফ

বেলা শেষে আলোর ঝিলিক

শেষ ম্যাচে টাইগারদের ১০৫ রানের আগ্রাসী জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বেলা শেষে আলোর ঝিলিক

অবশেষে জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ দল। শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারাল ১০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। বাংলাদেশের ২৫৬ রানের জবাবে ১৫১ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। তিন ম্যাচের সিরিজে শেষ ম্যাচ জিতে ব্যবধান কমিয়ে ২-১ করল বাংলাদেশ। তবে এই জয়ে দারুণ একটি রেকর্ডও হলো, নিজেদের ৪০০তম ওয়ানডেতে জয় পেলেন টাইগাররা।

ক্রিকেট বিশ্বে জিম্বাবুয়ে একটা ‘দুধভাত’ দল! আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান ১৩তম। আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড এমনকি স্কটল্যান্ডের মতো দলগুলো আজকাল তাদের বলে কয়ে হারায়। সেই দলটার বিরুদ্ধেই কিনা টি-২০র পর ওয়ানডে সিরিজেও হেরে যায় বাংলাদেশ।

ক্রিকেট বিশ্বে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। আগের দুই সিরিজে যে বাংলাদেশ দল দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে হারাল সেই দলটাই যেন জিম্বাবুয়েতে গিয়ে পাত্তাই পেল না।

একজন সিকান্দার রাজাই টাইগারদের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন। টানা দুই ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি করে জিম্বাবুয়ে সিরিজ উপহার দিয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে জিম্বাবুয়ে কি হঠাৎ করে বদলে গেল। তবে জিম্বাবুয়ে এগিয়েছে নাকি বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স ‘আদর্শ মান’ থেকে অনেকটা নিচে নেমে সেটাও দেখার বিষয়।

অবশ্য যেভাবে জিম্বাবুয়ে দল বাংলাদেশ দলকে বোকা বানিয়েছে তাদের কৃতিত্ব না দিলে অনেকটা স্বার্থপরতাই হয়ে যায়। এই জিম্বাবুয়ে অনেকটা বদলে গেছে বৈকি! যদিও অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ড ফ্লাওয়ারদের মতো সেই মান থেকে যোজন যোজন দূরে কিন্তু দেশটির প্রথম টেস্ট অধিনায়ক ডেভিড হটন কোচের দায়িত্ব পাওয়ায় একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। আর তার ফলও পাচ্ছেন হাতে নাতে।

কিন্তু বাংলাদেশ দল? হ্যাঁ, পুরো সিরিজে টাইগারদের চেনা রূপে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সিরিজ হারানোর পরই যেন খানিক দিশা খুঁজে পেল সফরকারী। শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়ে পাত্তাই দেয়নি। রীতিমতো আগ্রাসী ভূমিকায় বোলাররা। তামিম ইকবাল যখন যার হাতে বল তুলে দিয়েছেন, তিনি আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন।

গতকাল ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছে পেসার ইবাদত হোসেনের। প্রথম ওভারেই দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেছিলেন। ১৭ রানে চার উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান।

গতকাল টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রান করে বাংলাদেশ। আফিফ হোসেন খেলেন ৮১ বলে ৮৫ রানের হার না মানা ইনিংস। ৭১ বলে ৭৬ রান করেছেন ওপেনার এনামুল হক বিজয়।

বাংলাদেশের ৫ ব্যাটসম্যান রানের খাতাই খুলতে পারেননি। তবে তিন সিনিয়র তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও ছিলেন ফ্লপ। তামিম ৩০ বল খেলে করেছেন মাত্র ১৯ রান। স্টাইকরেট ৬৩ দশমিক ৩৩। সেটাও কিনা প্রথম পাওয়ার প্লের সময়। যখন ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে থাকেন মাত্র দুজন ফিল্ডার।

মুশফিকুর রহিম ৩ বল থেকে করেছেন শূন্য রান। রানের খাতাই খুলতে পারেননি, তাই স্টাইকরেটও শূন্য। এটাও প্রথম পাওয়ার প্লের সময়। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৬৯ বল থেকে করেছেন মাত্র ৩৯ রান। ছক্কা তো নেই-ই, বাউন্ডারি সর্বসাকল্যে তিনটি। স্ট্রাইকরেট মাত্র ৫৬ দশমিক ৫২। আজকাল টেস্ট ক্রিকেটেও উপরের সারির ব্যাটসম্যানদের গড় এতোটা বাজে থাকে না!

জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরাও সুবিধা করতে পারেননি কাল। আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা সিকান্দার রাজা কাল রানের খাতাই খুলতে পারেননি। তবে শেষ উইকেট জুটিতে ৬৮ রান যোগ করে নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যান। জিম্বাবুয়ের নবম উইকেটের পতন হয়েছিল ৮৩ রানে। এরপর ১০৪ রানের মাথায় স্বাগতিকরা অলআউটই হয়ে যেত যদি না আম্পায়ার ভুল সিদ্ধান্ত দিতেন। ম্যাচের ২৬তম ওভারের চতুর্থ বলে দারুণ একটি ক্যাচ নেন তামিম। পরে দেখা যায় আম্পায়ার নো বলের সংকেত দিয়েছেন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বল নো ছিল না। এরপর আরও একটি ক্যাচের জোরালো আবেদন নাকচ করে দেন আম্পায়ার। উইকেটের পেছনে মুশফিকও একটি ক্যাচ মিস করেন।

তারপরও ১০৫ রানের জয়কে আগ্রাসী জয়ই বলা যায়। টাইগাররা এমন সময় নিজেদের ফিরে পেলেন, যার আগেই সিরিজ হাতছাড়া। তারপরও জয় তো জয়ই! এ যেন বেলা শেষে আলোর ঝিলিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর