সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু বললেন, এ জন্যই তো ফুটবলাররা মাঠে দম পায় না

বঙ্গবন্ধুর কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম। দেশের রাষ্ট্রপতি গাড়ি থেকে নেমে একজন ফুটবলারের সঙ্গে কথা বলছেন!

বঙ্গবন্ধু বললেন, এ জন্যই তো ফুটবলাররা মাঠে দম পায় না

১৯৭৫ সালে জুলাই মাসের শেষের দিকের কথা। মারদেকা কাপ খেলতে জাতীয় দলের নাম ঘোষণাও করা হয়ে গেছে। লিগ স্থগিত রাখা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ক্লাবগুলোর ক্যাম্প বন্ধ। মোহামেডানের অনুশীলন নেই বলে বিকালে মোহাম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাই। আমি এসেছি শুনে আবাহনীর বেশ কজন কর্মকর্তা ও খেলোয়াড় এসে হাজির। বলল টিপু ভাই আজ আমরা আপনাকে ছাড়ছি না। শেখ কামাল ভাই বলেছেন আপনাকে নিয়ে যেতে। কামালের কথা শুনেই তাদের অনুরোধ ফেলতে পারলাম না। চলে এলাম আমার অনেক স্মৃতিজড়িত আবাহনী ক্লাবে। আমাকে দেখেই কামাল বলল, ‘মোহামেডানে খেললে কী ভাইয়ের ক্লাবে আসা যায় না। আমিও হেসে বললাম কি যে বলো?’

শেখ কামাল বলল, আজ আবাহনীতে ছোটখাটো নৈশভোজের আয়োজন করেছি। যারা মারদেকা কাপে সুযোগ পেয়েছে তাদেরই উদ্দেশ্য পার্টি। আপনাকে পেয়ে ভালোই হলো। পিন্টু ভাই ও প্রতাপ দাও কথা দিয়েছেন তাঁরা আসবেন। পোলাও, গরু মাংস, মুরগি, খাসির মাংস ও মিষ্টি কোনো কিছুরই কমতি ছিল না। কষ্টের কথা এটা আমার সঙ্গে শেখ কামালের শেষ দেখা। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে সেদিনই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে সঙ্গে আমার শেষ দেখা ও কথা। আমার বাসা ৩২ নম্বর রোডের ওপার শুক্রাবাদে। আবাহনীতে কামালের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোন্ডা চালিয়ে ৩২ নম্বর রোড দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। বঙ্গবন্ধুর বাসার সামনে আসতেই লক্ষ্য করলাম একটি গাড়ি আসছে। হঠাৎ করে সেই গাড়ি থেমে গেল। দুজন লোক এসে আমাকে ধরে রাখলেন। প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। গাড়ির সামনে আসতে দেখলাম বঙ্গবন্ধুকে। পাশে কোরবান আলী ভাই বসা। বঙ্গবন্ধুও নেমেও আসলেন। বললেন, কীরে তুই ফুটবলার টিপু না। আমি কিছুটা নার্ভাস হয়ে বললাম জ্বি। কিরে কোথায় গিয়েছিলি। বললাম আবাহনী ক্লাবে দাওয়াত খেয়ে বাসায় ফিরছি। বঙ্গবন্ধু এটাও জানতে চাইলেন কিসের দাওয়াত। কি কি খেয়ে আসলি।

বঙ্গবন্ধুকে সব খুলে বললাম। কিন্তু পোলাও, গরু ও খাসির মাংসের কথা শুনে কিছুটা বিরক্তসহকারে বললেন এ জন্য তো তোরা মাঠে দম পাস না। ফুটবলারদের তেল ও চর্বি জাতীয় খাওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। আমি শুধু কামালকে না সবাইকে বলব এ ধরনের ফ্যাট জাতীয় খাওয়া বাতিল করতে। স্বল্প সময়ে হলেও আমি বঙ্গবন্ধুর কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম। দেশের রাষ্ট্রপতি গাড়ি থেকে নেমে একজন ফুটবলারের সঙ্গে কথা বলছেন! বঙ্গবন্ধু বললেন, মালয়েশিয়া থেকে দল ফিরে আসুক আমি তোদের বাসায় দাওয়াত দেব। খেলোয়াড়দের কি কি খাওয়া উচিত তা শিখিয়ে দেব। আফসোস, বঙ্গবন্ধুর সেই দাওয়াত খাওয়া হলো না। কিছুদিন পরই তো বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারকে নির্মমভাবে ঘাতকরা হত্যা করল। বঙ্গবন্ধু পরিবারকে ঘিরে কত যে মধুর স্মৃতি যা মনে পড়লে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারি না।

সর্বশেষ খবর