মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
কাজে গতি নেই

বদলে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম

‘আমরা ক্রীড়া পরিষদকে আমাদের সবকিছু জানিয়েছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়েই আমরা মাঠ ব্যবহার করার সুযোগ পাব।’

রাশেদুর রহমান

বদলে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম

কালের সাক্ষী বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। ইতিহাসের নানা বাঁক পেরিয়ে এসেছে এই মাঠ। এখানে দর্শকরা ফুটবল ও ক্রিকেট ছাড়াও দেখেছেন নানা খেলার আয়োজন। কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলীকে লড়াই করতে দেখেছেন ১৯৭৮ সালে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখেছেন ২০১১ সালে। অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশকে লড়াই করতে দেখেছেন। পুরনো রঙ চটা গ্যালারি আর ভঙ্গুর দর্শক আসনের সেই স্টেডিয়াম এখন বদলে যাচ্ছে। আগামী বছরেই দেখা যাবে নতুন রূপে।

বর্তমানে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে বালির ভূমি, এখানে-সেখানে ছড়িয়ে থাকা ভাঙা চেয়ার, নানা যন্ত্র আর ক্রেনের উপস্থিতি। ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন কর্মীরা। অ্যাথলেটিক ট্র্যাক উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। গ্যালারির ওপরে বসানো হচ্ছে ইস্পাতের স্তম্ভ। দর্শক আসনের ওপরে থাকবে শেড। অঝোর বৃষ্টি আর কড়া রোদের উত্তাপ থেকে বেঁচে যাবেন ফুটবলপ্রেমীরা।

গত বছর লিগটা শেষ হয়েছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামেই। এরপর থেকেই ফুটবল এই মাঠ ছাড়া। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া মৌসুমের সব আয়োজনই (ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ ও লিগ) ছিল এই স্টেডিয়ামের বাইরে। তবে আশা করা হচ্ছে সামনের মৌসুমেই ফুটবল ফিরবে আপন ঘরে। ক্রিকেট এই স্টেডিয়াম ছাড়ার পর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম হয়ে উঠেছে ‘হোম অব ফুটবল’।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের পুনর্নির্মাণ কাজ ২০২২ সালের মধ্যেই শেষ করার কথা ছিল। তবে তা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব পরিমল সিংহ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২২ সালের মধ্যেই কাজ শেষ করা। তবে মাঝখানে বিভিন্ন কারণে আমাদের কাজের গতি কিছুটা ধীর ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের পর্যালোচনা সভা আছে। এরপরই আমরা বুঝতে পারব আরও কতদিন লাগতে পারে কাজ শেষ করতে।’ তবে তিনি জানিয়েছেন, অন্তত মাঠটা দ্রুতই বাফুফেকে বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মুহাম্মদ সারওয়ার জাহান বলেন, ‘একটি অত্যাধুনিক স্টেডিয়ামের রূপ নেবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। এখানে চারটি ড্রেসিং রুম থাকছে আন্তর্জাতিক মানের। প্রেসবক্সে আমাদের প্রচুর সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। কারণ, এটি সেরা মানের করতে চাই।’ স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে প্রায় ১৯ হাজার দর্শক আসন বসানো হচ্ছে।

প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক এই স্টেডিয়াম। তবে প্রাথমিক বাজেটের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কাজ সম্ভবত শেষ হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে মুহাম্মদ সারওয়ার জাহান জানিয়েছেন, অনেক কিছুরই দাম বেড়েছে। এ কারণে নতুন করে সবকিছু বিবেচনা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে নতুন ফ্লাডলাইট বসানো নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। গ্যালারির ওপরে শেড বসানো নিয়েও জটিলতা আছে। এসব কারণে অ্যাথলেটিক ট্র্যাকটাও বসাতে দেরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সামনের মৌসুমেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলা পরিচালনা করতে চায়। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ জানিয়েছেন, ‘আমরা ক্রীড়া পরিষদকে আমাদের সবকিছু জানিয়েছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়েই আমরা মাঠ ব্যবহার করার সুযোগ পাব।’ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রশাসক মোবারক করিম লিটনের মতেও মাঠ সামনের মৌসুমেই ব্যবহার করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ‘মাঠের কাজ আশি ভাগই শেষ হয়ে গেছে। অল্প কিছু কাজ বাকি। এটা অল্প কিছুদিনেই শেষ করা সম্ভব।’ সাধারণত, নভেম্বর-ডিসেম্বরেই শুরু হয়ে যায় ফুটবল মৌসুম। এর মধ্যেই কী মাঠ গোছানো সম্ভব হবে! মাঠ বুঝে পেলেও গ্যালারি ও প্রেসবক্সের কাজ সহসাই শেষ হচ্ছে না। এজন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সর্বশেষ খবর