বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
মতান্তর

কবে আমরা টি-২০তে ভালো দল হব?

সামনে এশিয়া কাপ। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লড়াই। সবশেষ এশিয়া কাপের আসরে বাংলাদেশ ফাইনাল খেলেছে। নিঃসন্দেহে এবার লক্ষ্য হওয়ার কথা ‘চ্যাম্পিয়নশিপ’! কিন্তু এমন কথা বলার সাহসই পাচ্ছে না টিম ম্যানেজমেন্ট।

মেজবাহ্-উল-হক

কবে আমরা টি-২০তে ভালো দল হব?

বৈচিত্র্যে ভরপুর এবং অনিশ্চয়তার টি-২০ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ‘আনপ্রেডিকটেবল’ দল নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ! কখন ভালো করবে, আর কখন প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি খারাপ করবে তা কেউ জানে না। পারফরম্যান্সে ন্যূনতম ধারাবাহিকতা নেই।

যদিও তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে (ছেলেদের জাতীয় দল) কোনোটিতেই বলার মতো বড় কোনো সাফল্য নেই, কিন্তু টি-২০তে রীতিমতো ভরাডুবি। পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই। এই মুহূর্তে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ৯ নম্বরে। এই ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সাতটি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি আসরে অংশগ্রহণ করেও মূলপর্বে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি টাইগাররা।

টি-২০তে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও হতাশা। ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ের সেরা দশে নেই বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা মোহাম্মদ নাঈম আছেন ৩৭ নম্বরে। বোলিংয়ে ১৪তম স্থানে থাকা মেহেদী হাসানই টাইগারদের মধ্যে সেরা।

সামনে এশিয়া কাপ। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লড়াই। সবশেষ এশিয়া কাপের আসরে বাংলাদেশ ফাইনাল খেলেছে। নিঃসন্দেহে এবার লক্ষ্য হওয়ার কথা ‘চ্যাম্পিয়নশিপ’! কিন্তু

এমন কথা বলার সাহসই পাচ্ছে না টিম ম্যানেজমেন্ট। এর পেছনে কারণ, টি-২০ বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করে ফরম্যাটটি ওয়ানডের পরিবর্তে টি-২০ করা হয়েছে। তার কারণেই যেন মাথায় চাপের বোঝা!

যদি এশিয়া কাপেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা কল্পনা করতে না পারি তাহলে এরপরই যে বিশ্বকাপ সেখানে টাইগারদের টার্গেট কি হবে?

একটু পেছনে ফেরা যাক। আমিরাত বিশ্বকাপের আগে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ। কারণ, আসরের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ঘরের মাঠে দুই সেরা দল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে সিরিজে হারায় বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি যে ছিল ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে জেতা, সেই ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ বোঝা যায় বিশ্বকাপের মূলপর্বে কোনো জয় না পাওয়ার পর।

দুই মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজ হারা দল অস্ট্রেলিয়াই বিশ্বকাপ জিতে যায়। কোনো বড় আসরের সামনে বড় দলগুলো বড় পরিকল্পনা নিয়ে আগায়। তারা তাদের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করে, সে অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজায়। এতে তারা লাভবানও হয়। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ তো অস্ট্রেলিয়াই।

আমাদের সংগঠকদের পরিকল্পনা থাকে কিভাবে দুর্বলতাগুলো তাৎক্ষণিক সাফল্যের মাধ্যমে ঢেকে দেওয়া যায়। সে কারণেই মূল লড়াইয়ে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয় বার বারই। এই ব্যর্থতার দায় যতটা ক্রিকেটারদের, তার চেয়ে ঢের বেশি সংগঠকদের! সব সময় তারা শটকাটে সাফল্য পেতে চেয়েছেন। কিন্তু সাফল্য পেতে যে সিঁড়ি তৈরি করতে হবে, যে সিঁড়ি বেড়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে-এ থিউরি তারা মানতে নারাজ! তাদের চিন্তা কেবলই লাফ দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার চিন্তা।

আমরা টেস্টে পারি না- কারণ টেস্টের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। সেই ১৮৭৭ সালে টেস্ট শুরু হয়েছে, আমরা তো শুরু করলাম মাত্র ২০০০ সালে। ওয়ানডে ভালো খেললেও এখনো পরাশক্তি হতে পারিনি, সেখানেও যুক্তি আছে! প্রথম বিশ্বকাপ সেই ১৯৭৫ সালে, আমরা তো আইসিসির মর্যাদা পেলাম ১৯৯৭ সালে। তারপরও বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল তো খেলা সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু টি-২০ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার জন্য কী অজুহাত দেবেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা? এই ফরম্যাটে তো শুরু থেকেই আছি। জন্ম থেকেই ফরম্যাটটির সঙ্গে জড়িত, তারপরও কেন পারছি না?

সব সময় একটা কথা শোনা যায়, বাংলাদেশ টি-২০তে ভালো দল নয়! ফরম্যাটটির সেই শুরু থেকেই ভাঙা রেকর্ডে এই গান বাজছে। কিন্তু বাংলাদেশ যে টি-২০তে এখনো ভালো দল হতে পারেনি এ দায় কার?

ক্রিকেটসহ টপ লেভেলের সব ক্রীড়া ইভেন্টই এখন বাণিজ্যিক। এখন কেবলমাত্র মনের সুখে কেউ খেলতে নামে না। এখন এটি রীতিমতো পেশা। বড় বড় ক্রীড়া ইভেন্টের আয়োজন কেবলমাত্র পারস্পরিক সৌহার্দ্য প্রদর্শনের জন্য নয়, সব কিছুর পেছনেই অর্থ, তথা বাণিজ্যিক বিষয়টি জড়িত। সে কারণেই ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী ফরম্যাট টি-২০। এখানে অন্য দুই ফরম্যাটের তুলনায় সময়ও কম লাগে, এর গ্ল্যামারও অনেক বেশি। হয়তো সে কারণেই স্টেকহোল্ডাররাও এখানে ব্র্যান্ডিং করতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই ফরম্যাটেই আমরা সবচেয়ে নিরীহ দল।

এখানেই আমরা পারি না। এই ফরম্যাটে আমরা অক্ষম। কিন্তু কেন? এই ব্যর্থতার দায় কার? আর কত দিনই বা শুনতে হবে সেই ভাঙা রেকর্ড, ‘আমরা টি-২০তে ভালো দল নই!’ কবে আমরা টি-২০তে ভালো দল হব?

সর্বশেষ খবর