সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

টি-২০তে মুশফিক যুগের অবসান

আসিফ ইকবাল

টি-২০তে মুশফিক যুগের অবসান

বাদ দেওয়া হবে- গুঞ্জনটিকে ‘সত্য’ হতে দিলেন না মুশফিকুর রহিম। তার আগেই নিজে সরে দাঁড়িয়েছেন। টি-২০ ক্রিকেটকে ‘না’ বলে দিয়েছেন দেশের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিক। অবশ্য টেস্ট ও ওয়ানডে খেলা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক, ‘টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে আজ আমি অবসর নিচ্ছি। তবে, বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে খেলা চালিয়ে যাব। আশা করছি, এই দুই ফরম্যাটে আমি আরও কিছু নিয়ে আসতে পারব দেশের জন্য। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) সহ অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে আমি আমার খেলা চালিয়ে যাব টি-২০ ফরম্যাটে।’ গতকাল সকালে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে নিজের অফিশিয়াল পেজে টি-২০ ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে পোস্টটি দেন সাবেক অধিনায়ক মুশফিক। তার ১৫ বছর ২৮১ দিনের টি-২০ ক্যারিয়ার শেষের ঘোষণায় নিশ্চিত করেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো।

ব্রায়ান লারা ‘৪০০’ রানের একটি ইনিংস খেলে টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে চিরন্ময়ী হয়েছেন। এবি ডি ভিলিয়ার্স ৩১ বলে সেঞ্চুরি করে ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের সোনালি পাতায় ঠাঁই নিয়েছেন। টি-২০ ক্রিকেটে ৩৫ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরি করে টি-২০ ক্রিকেট ইতিহাসে নিজের নাম লিপিবদ্ধ করেছেন ডেভিড মিলার। ক্রিকেটের পাতায় চিরস্থায়ী হতে হাজার, হাজার রান কিংবা সেঞ্চুরির নহর বইয়ে দেওয়া জরুরি নয়। একটি ইনিংসই চিরস্থায়ী করতে পারে! টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ইনিংস মুশফিককে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে চিরস্থায়ী করতে পারে অনায়াসে।

টি-২০ ক্যারিয়ারে ১১৫.০৩ স্ট্রাইক রেটে সত্ত্বে¡ও ভীষণভাবে সমালোচিত হয়েছেন মুশফিক। বিশেষ করে গত এক বছরের পারফরম্যান্স মুশফিককে খাঁদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। গত টি-২০ বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে ১১৩.৩৮ রেটে রান করেন ১৪৪। চলমান এশিয়া কাপে রান করেন ৪ ও ১। টানা ব্যর্থতা তার টি-২০ ক্যারিয়ার আতশী কাচের তলায় ফেলে দেয়। ছন্দহীনতা অক্টোবর-নভেম্বরে টি-২০ বিশ্বকাপের মূল স্কোয়াডে না থাকার বিষয়টিকে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত করতে থাকে। এই গুঞ্জনের সমাপ্তি টানেন ১০২ টি-২০ ম্যাচে ১১৫.০৩ স্ট্রাইক রেটে ১৫০০ রান করা মুশফিক স্বয়ং। টেস্টে ৯টি ও ওয়ানডেতে ৩টি সেঞ্চুরি থাকলেও টি-২০ ক্রিকেটে নেই। হাফসেঞ্চুরি মাত্র ৬টি। যার দুটি আবার ম্যাচ জেতানো ও ম্যাচসেরা।

২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-২০ অভিষেক। এরপর ১৫ বছর ২৮১ দিন টি-২০ ক্রিকেট খেলেছেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টি-২০ ক্রিকেটে শয়ের (১০২) উপর ম্যাচ খেলার বিরল রেকর্ড গড়েন উইকেটরক্ষক ব্যাটার। টি-২০ ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও তিনটি ইনিংস তাকে দেশের ক্রিকেটে অনন্য উচ্চতায় ঠাঁই দেবে কোনো সন্দেহ নেই। ২০১১ সালে অধিনায়কত্বের অভিষেক ম্যাচে ‘ছক্কা’ মেরে জয় উপহার দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। ১৩২ রান তাড়া করতে নেমে টাইগারদের দরকার ছিল শেষ দুই বলে ৪ রান। রবি রামপালের ওভারের পঞ্চম বলেই ছক্কা মেরে দলকে অবিশ্বাস্য জয় উপহার দেন। ওই ছক্কাই তাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনন্য উচ্চতায় ঠাঁই দিয়েছে। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেটে ২১৪ রান টপকে বাংলাদেশ জিতেছিল নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে। ৩৫ বলে ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচ জিতিয়ে সেরা হয়েছিলেন। ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে টি-২০ ক্রিকেটে টাইগারদের প্রথম জয়ের নায়ক মুশফিক। ২০১৯ সালে দিল্লিতে ভারতের ১৪৮ রান টপকে যায় মুশফিক। মুশফিক খেলেছিলেন ৪৩ বলে ৬০ রানের ইনিংস।

মুশফিকের অবসরের ঘোষণায় বাংলাদেশের টি-২০ ক্রিকেটে পঞ্চপা-বের মধ্যে টিকে থাকলেন শুধু সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। টি-২০ বিশ্বকাপের পর দুজনেরও ক্যারিয়ারের সমাপ্তির ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে।

সর্বশেষ খবর