মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ফুটবল ইতিহাসে সেরা অর্জন

দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন

ফুটবল ইতিহাসে সেরা অর্জন

হাতে প্রচন্ড কাজ। তবুও কোনো কিছুতে মন বসছিল না। সকাল থেকেই বড্ড অস্থিরতায় ছিলাম। ঘড়ির কাঁটা দেখছি আর মনে মনে বলছি কখন আসবে সেই সময়। সত্যিকার অর্থেই মন পড়েছিল কাঠমান্ডুর দিকে। বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় দল দীর্ঘ ১৯ বছর সাফ শিরোপা থেকে বঞ্চিত। এখন তো সেমিফাইনাল খেলাটাই স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। মেয়েরা এবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে ওঠায় প্রত্যাশা ছিল সাবিনা, মান্ডারাই বিজয়ের পতাকে ওড়াবে। হতাশ করেনি মেয়েরা। ইতিহাস লিখে দেশকে ঠিকই গর্বের শিরোপা উপহার দিয়েছে। অনেকে বলেছেন ঘরের মাঠে ফাইনালে নেপালকে হারানো যাবে না। তা ছাড়া সাফের আগের তিন লড়াইয়ে নেপালই তিনটিই জিতেছিল। আমি জোর গলার বলেছি রাখ তোমাদের পরিসংখ্যান। আমাদের মেয়েরাই দক্ষিণ এশিয়া জয় করবে। সাফ জেতার পর আমি কেন ১৮ কোটি মানুষের মন জয় করে নিল সাবিনারা।

গ্রুপ ম্যাচে ভারতকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করার পর আমি অনেকটা নিশ্চিত হয়ে পড়ি চ্যাম্পিয়নের ব্যাপারে। পুরো সাফে কি অসাধারণ খেলেছে বাংলার মেয়েরা। ফাইনালসহ চার ম্যাচে ২৩ গোল। অন্যদিকে মাত্র ১ গোল হজম। একি অবিশ্বাস্য নয়!

কাউকে আঘাত করার জন্য বলছি না। পুরুষ জাতীয় দল কখনো এ রেকর্ড ভাঙতে পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে। নেপালে রীতিমতো ম্যাজিক প্রদর্শন করেছে ছোটনের শিষ্যরা। যোগ্য দলের যোগ্য নেতৃত্ব লাগে। আমি বলব সাবিনা খাতুন তা শতভাগ পূরণ করেছে। দুই হ্যাটট্রিকসহ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৮ গোল করে সাফ টুর্নামেন্টের নায়িকা হয়েছেন। পুরো দলকে উজ্জীবিত রেখেছিলেন। আবার সতীর্থরাও তাকে ঠিক মতো সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশও পারে তা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিল মেয়েরা।

পুরুষরা এই রঙ্গশালাতেই ২৩ বছর আগে সাফ গেমসে প্রথম সোনা জিতেছিল। তা ছিল অবশ্যই কৃতিত্বের। কিন্তু সাবিনাদের শিরোপা গর্বের। কোনো পয়েন্ট না হারিয়ে স্বপ্নের ট্রফি জিতেছে। ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে। হয় তো কেউ বলতে পারেন এতটা সহজ জয় হবে তা ভাবেনি। আমি বলব ব্যবধানটা বড় হতো যদি মাঠ শুকনো থাকত। এমন কাঁদা মাঠে খেলে ১৯৮৪ সালে কাঠমান্ডুতে সাফ গেমসে নেপালের কাছে হেরে সোনা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু অপ্রতিরোধ্য সাবিনাদের সামনে মাঠ বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এগিয়ে গেছে তা স্বীকার করতেই হবে। তবে এমন গৌরবের বিজয়ের দিনে না বলে পারলাম না, ক্রিকেটে এক ম্যাচ জিতলেই টাইগার টাইগার বলে চিৎকার। তাহলে মেয়েদের এখন কি বলা যায়? মারিয়া মান্ডা, কৃষ্ণা, স্বপ্না, আঁখিরা যে পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছে তা সত্যিই অতুলনীয়। ব্যর্থতার বৃত্তে যারা বন্দি তাদের বলতে বাধ্য হচ্ছি তোমাদেরও শেখার অনেক কিছু আছে। শুধু মেয়ে বললে ভুল হবে এ শিরোপা বাংলাদেশের সেরা প্রাপ্তি। বন্ধ দুয়ার যখন খুলেছে এখন সাবিনা-মান্ডাদের এগিয়ে যাওয়ার পালা। এক উৎসবে যেন সব শেষ না হয়ে যায়।

নিজেদের প্রমাণ করেছি

গোলাম রব্বানী ছোটন

কোচ, বাংলাদেশ

আমরা দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করছি। এরই ফল পেয়েছে মেয়েরা। আমরা নিজেদেরকে প্রমাণ করেছি। আমি চ্যাম্পিয়ন দলের সবাইকে অভিনন্দিত করছি। এই দলের প্রত্যেকেই কঠোর পরিশ্রম করেছে। প্রত্যেকেই নিজের সেরাটা দিয়েছে মাঠে।

 

বাংলাদেশকে অভিনন্দন

কুমার থাপা

কোচ, নেপাল

বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন। তারা টুর্নামেন্টজুড়েই দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে তারা যেমন নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে, তেমনি দলগতভাবেও। তবে আমি আমার মেয়েদের নিয়েও গর্বিত। তারাও ভালো ফুটবল খেলেছে। চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। 

 

চ্যাম্পিয়ন: বাংলাদেশ

রানার্সআপ: নেপাল

সর্বোচ্চ গোলদাতা: সাবিনা খাতুন (৮টি)

টুর্নামেন্ট সেরা: সাবিনা খাতুন

মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার: সাবিনা খাতুন

সেরা গোলরক্ষক: রূপনা চাকমা

ফেয়ার প্লে ট্রফি: বাংলাদেশ

 

সংখ্যাতত্ত্ব

নেপালের বিপক্ষে এর আগে আটবার খেলে ছয়বারই হারে বাংলাদেশের মেয়েরা। দুবার ড্র করে। গতকাল নেপালের বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।

 

সাফে দুবার ফাইনাল খেলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেল বাংলাদেশ। গতকালের আগে ২০১৬ সালে সাফের ফাইনাল খেলে ভারতের কাছে পরাজিত হন সাবিনারা।

 

সাফে মোট পাঁচবার ফাইনাল খেলেও শিরোপার স্বাদ পেল না নেপাল। বাংলাদেশের কাছে গতকাল হারের আগে চারবার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছে তারা।

 

সাবিনা খাতুন ২০১৬ সালের নারী সাফেও ৮ গোল করেছিলেন। এবার ৮ গোল করে সেরা গোলদাতার পুরস্কার জিতলেন তিনি।

 

১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এক আসরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ভারতের বালা দেবীর। তিনি ২০১৪ সালে একাই করেছিলেন ১৬ গোল।

সর্বশেষ খবর