‘সকলকে ধন্যবাদ আমাদেরকে এত সুন্দরভাবে বরণ করে নেওয়ার জন্য। আমরা কৃতজ্ঞ। যদি চার-পাঁচ বছরের পরিশ্রম দেখেন তাহলে দেখবেন সেটার ফল এখন হাতে আছে।’ কথাগুলো বলেই সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের সোনালি ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন সাবিনা খাতুন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালের গেটে ট্রফি হাতে সাবিনাদের দেখে উল্লাসে ফেটে পড়েন উপস্থিত ফুটবলপ্রেমীরা।
নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ট্রফি জয় করেছে গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। ফাইনালে তারা উড়িয়ে দিয়েছে স্বাগতিক নেপালকে। শিরোপা জয়ের পথে হারিয়েছে ভারতের মতো শক্তিশালী দলকেও। ঐতিহাসিক এই জয়কে রাঙাতেই বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা যেভাবে ছাদখোলা বাসে চেপে ট্রফি হাতে ঘুরে বেড়ান শহরে। ভক্তদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন শিরোপা জয়ের আনন্দ। সাবিনারাও তাই করলেন। বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টা সময় নিয়ে ছাদখোলা বাসে চেপে পৌঁছলেন বাফুফে ভবনে। বিভিন্ন পথ ঘুরে যাওয়ার পথে তারা সর্বশ্রেণির ফুটবলপ্রেমীদের সঙ্গে শিরোপার আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। তাদের অভিবাদনের জবাব দিয়েছেন। তবে তাদের শিরোপা হাতে যাত্রাটা বড় দীর্ঘ হয়ে গেল। বাফুফে ভবনে গতকাল সন্ধ্যায় নারী ফুটবলারদের বরণ করেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ও সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। এ সময় নারী ফুটবলারদের পুরোপুরিই বিধ্বস্ত দেখায়। অবশ্য রাজকীয় সংবর্ধনা পেয়ে দারুণ আনন্দিত সাবিনা খাতুনরা। তিনি বলেন, ‘সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ট্রফি আমাদের দেশের জনগণের জন্য। শেষ চার বছরে আমাদের যে সাফল্য আছে, সবকিছু এর মধ্যে। আমাদেরকে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়ায় বাংলাদেশের সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই। এমন আয়োজন ছিল সত্যিই অবিশ্বাস্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অর্জনে বাংলাদেশের মানুষ অনেক আনন্দিত হয়েছে। এভাবেই ভবিষ্যতে আমরা সবার মুখে হাসি ফোঁটাতে চাই।’
মেয়েদের দীর্ঘ আর কষ্টকর যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালে। সেসময় মেয়েদের ফুটবল নিয়ে কৌতুক আর টিপ্পনিই বেশি হতো। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন তো বলেই দিয়েছেন, ‘এক সময় আমাকে নিয়ে কৌতুক করা হতো। সামনে দেখলেই বলা হতো, মেয়েদের কোচ যায়!’ এসব টিপ্পনি সহ্য করে নানা কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে সাফল্যের দিকে ছুটে গেছেন তারা। বঙ্গমাতা ফুটবল থেকে উঠে আসেন অনেক ফুটবলার। মারিয়া মান্ডা, সানজিদা, মনিকা, শামসুন্নাহাররা পরিচিত হয়ে উঠেন ধীরে ধীরে। এখন তারাই দেশের ফুটবলের বড় তারকা। সাবিনা খাতুন অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমাদের এই পথচলা আসলে অনেক দিনের। ২০১২ সালে এই পরিবর্তন শুরু করেছিলেন আমাদের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। পরে তা রূপ দেন বাফুফে সভাপতি।’ অনেক কষ্টকর যাত্রার মধ্য দিয়ে ধরা দিল সফলতা।
মেয়েদের ফুটবলে একসময় অর্থের বড় কষ্ট ছিল। সমাজের প্রান্তিক শ্রেণি থেকে উঠে আসার ফুটবলারদের জন্য ফুটবল আর লেখাপড়া পাশাপাশি চালিয়ে যাওয়াই ছিল কঠিন। তাদেরকে বাফুফে ভবনে নিয়ে আসা হয়। এখানেই ব্যবস্থা করা হয় পড়াশোনার। তবে এই যাত্রাটাও বেশ কঠিন ছিল। মাত্র ৮/১০ হাজার টাকা বেতনে ফুটবলকেই ধ্যান জ্ঞান করে ছুটতে থাকেন নারী ফুটবলাররা।