বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
নিগারদের বাজে হারের নেপথ্যে

সিলেটের উইকেট যেন মৃত্যুকূপ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের দুই নম্বর মাঠের মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেট নিয়ে আলোচনা চলছেই। এই উইকেটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ বাংলাদেশ নারী দল ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হেরে গেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ডকে উড়িয়ে দিলেও দ্বিতীয় ম্যাচেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ।

দুই দলের ক্রিকেটাররাই উইকেট নিয়ে সমালোচনা করেছেন। টি-২০র উইকেট সাধারণত হয় স্পোর্টিং। কিন্তু অদ্ভুত রকমের উইকেট হওয়ার কারণে বাংলাদেশ স্বাগতিক হিসেবে কোনো সুবিধা তো পায়নি, উল্টো হঠাৎ এমন উইকেটে খেলার কারণে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায়। তারপর ম্যাচেই হেরে যায় বড় ব্যবধানে।

এমন নতুন উইকেটে সাধারণত যারা পরে ব্যাটিং করে তারা বাড়তি সুবিধা পায়। কারণ প্রথম ইনিংসে খেলা ব্যাটাররা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই উইকেট হারিয়ে বসে। এখান থেকে আর ব্যাক করার কোনো সুযোগ থাকে না। তারপর দ্বিতীয় ইনিংসে যারা ব্যাটিং করেন তারা প্রতিপক্ষের অবস্থা দেখে পরিকল্পনা করার দারুণ সুযোগ পান।

বাংলাদেশ নারী এখন দারুণ ফর্মে। কিন্তু উইকেটের কারণে বাজে পরিস্থিতিতে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা এই ম্যাচের আগের দিনই উইকেট নিয়ে সমালোচনা করেছেন। ম্যাচের পর বিজয়ী দলের ওপেনার সিদরা আমিন সরাসরি অভিযোগ করেন, এমন উইকেট টি-২০ ক্রিকেট খেলার উপযোগী নয়। এটা মোটেও আদর্শ উইকেট নয়।

বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন নিগার বলেছেন, ‘উইকেট মন্থর থাকায় আমরা আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। ভেবেছিলাম, এটা ব্যাটিং করার জন্য ভালো উইকেট হবে, কিন্তু উইকেট ছিল স্যাঁতসেঁতে।’

গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উইকেটের সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ দলের কোচ এ কে এম মাহমুদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নিজের মাঠে খেলা, সেই সুবিধাটা নিতে চাই না। তবে আমাদের মেয়েদের ক্রিকেটের ভালোর জন্য স্পোর্টিং উইকেটের প্রয়োজন। জিম্বাবুয়ে থেকে শুরু করে যত জায়গায় দেখেছি, সব জায়গায় মেয়েদের ক্রিকেটে  স্পোর্টিং উইকেট থাকে।’

বাংলাদেশ দলের কোচের বাড়ি সিলেটে। ঘরোয়া লিগের ম্যাচেও সিলেটের উইকেট দেখেছেন। সে কারণেই এশিয়া কাপে অদ্ভুত উইকেট দেখে অবাক হয়েছেন। মাহমুদ বলেন, ‘গতকাল (পরশু) আমরা যে উইকেটে খেলেছি, সিলেট যেহেতু আমার নিজের বাড়ি, আমি বলতে পারি, এখানকার স্থানীয় ক্রিকেটেও আমি এমন উইকেট দেখিনি। আমাদের সামনে এফটিপির (ভবিষ্যৎ সূচি পরিকল্পনা) খেলা আছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ আছে। আমাদের প্রস্তুতি, মনোবলের ক্ষেত্রে এমন উইকেট আমাদের পিছিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।’

উইকেটের কারণে অনেক ম্যাচে টস হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য ত্রাতা। সেখানে ক্রিকেটারদের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। দিনের প্রথম ম্যাচে সকালে যে দল ব্যাটিং করবেন, তাদের জন্য এই উইকেট রীতিমতো মৃত্যুকূপ। সে কথাই মনে করে দিলেন কোচ, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই উইকেটের যে আচরণ ছিল, মনে হচ্ছিল ম্যাচের ফলটা টসের সঙ্গেই নিশ্চিত হয়েছিল।’

উইকেটের বিরূপ আচরণের বিষয়টি উঠে এসেছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ শেষে আম্পায়ার্স রিপোর্টেও। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের কাছেও উইকেট নিয়ে নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ দল। মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘আমাদের ম্যানেজারও আম্পায়ার্স রিপোর্টে এটা দিয়েছে। উইকেট নিয়ে অবশ্যই আমাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছে।’

আগামীকাল নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মালয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি হবে দুপুরে। তখন উইকেট অনেকটাই ভালো হয়ে যায়। তাই সে ম্যাচ নিয়ে খুব একটা টেনশনে থাকতে হচ্ছে না। তারপরও সতর্ক বাংলাদেশ।

 

সর্বশেষ খবর