শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

কুশলের ক্যারিশমায় টিকে গেল লঙ্কা

মেজবাহ্-উল-হক

কুশলের ক্যারিশমায় টিকে গেল লঙ্কা

খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। একটু এদিক সেদিক হলেই বিপদে পড়ে যেত। শেষ পর্যন্ত কুশলের ক্লিকে রক্ষা। এ যাত্রায় বেঁচে গেল এশিয়ার চ্যাম্পিয়নরা। ওপেনার কুশল মেন্ডিসের ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিংয়ে নেদারল্যান্ডসকে ১৬ রানে হারিয়ে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

তবে এই ম্যাচে সকালে হেরে গেলেও বিকালে অন্য ম্যাচের ফল দেখে রাতে হোটেলে নিশ্চয়ই পার্টি করেছে নেদারল্যান্ডস। কারণ, আমিরাতের কাছে হেরে বাদ পড়েছে নামিবিয়া। আর প্রথম দুই ম্যাচে জয় থাকায় গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে সেরা-১২তে জায়গা পেয়ে গেছে ডাচরাও।

নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে নেট রানরেটে এগিয়ে থাকায় গ্রুপে সেরা হয়েই পরের রাউন্ডে জায়গা করে নিল লঙ্কানরা। ক্যাপ্টেন দাসুন শানাকা বলেন, ‘আমরা জানতাম গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই পরের রাউন্ডে যাব। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ভুলের কারণে বিপদে পড়েছিলাম। তবে এক ম্যাচে হারলেও ছেলেরা দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে আমাদের বোলিং ইউনিটের প্রশংসা করতেই হবে। প্রথম ১০ ওভার আমাদের বোলাররা সুপার বোলিং করেছেন।’

লঙ্কানদের জন্য ছিল ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। তাই প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভীষণ সতর্ক ছিলেন ব্যাটসম্যানরা। পাওয়ার প্লের প্রথম ৫ ওভারে তারা করেছিল মাত্র ২২ রান। পঞ্চম ওভারে নতুন জীবন পেলেও ওপেনার নিশাঙ্কা নিজের ইনিংসকে বড় করতে পারেননি। দলের সপ্তম ওভারে ১৪ রান করে বিদায় নিয়েছেন। একই ওভারে আরেকটি উইকেট হারায় লঙ্কানরা। ডাচ বোলার পলের বলে লেগ-বিফোর হয়ে যান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। পর পর দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা।

এরপরই শুরু হয় কুশলের ব্যাটের ক্লিক। আশালঙ্কাকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৪৫ বলে ৬০ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন। টি-২০তে নিজের নবম হাফ সেঞ্চুরিটিও আদায় করে নেন। কুশল ফিফটি পূরণ করেন রাজকীয় স্টাইলে। ডাচ বোলার ডি লিডকে ডিপ মিডউইকেট নিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে অর্ধশতকে পৌঁছে যান। ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ৪৪ বলে খেলেন ৭৯ রানের ইনিংস। ৫টি করে ছক্কা ও বাউন্ডারি।

প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬২ রান করে লঙ্কানরা। নেদারল্যান্ডসকে আটকাতে এটা যথেষ্ট ছিল না! কারণ, প্রথম দুই ম্যাচে দুই জয় পাওয়া কমলাবাহিনী দারুণ ছন্দে। ব্যাটে-বলে ভারসাম্যপূর্ণ এক দল। তাই ১৬৩ রানের স্কোরকেও লঙ্কানদের নিরাপদ মনে হয়নি। তা ছাড়া বোলিং ইউনিটের সেরা অস্ত্রো দুশমন্ত চামিরা ইনজুরির কারণে একদিন আগেই ছিটকে গেছেন বিশ্বকাপ থেকে। তবে সেরা বোলারকে হারানোর পরও মনোবল হারায়নি লঙ্কান বোলিং ইউনিট। পাওয়ার প্লেতেই তারা দুই ব্যাটসম্যানকে আউট করে।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়ে ১৪৬ রানেই নেদারল্যান্ডসকে আটকে রাখে শ্রীলঙ্কা।

ডাচদের ইনিংসে ব্যতিক্রম ছিলেন ওপেনার ম্যাক্স ওডাউড। ৫৩ বলে ৭১ রান করেন তিনি। বাইশগজে ইনিংস ওপেন করতে নেমে একপ্রান্ত আটকে রেখে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেছেন। তার ইনিংসে ছিল ছয়টি বাউন্ডারি ও তিনটি ছক্কা।

ইনিংস দারুণ দাপট দেখিয়েছেন লঙ্কান বোলাররা। তিন উইকেট নিয়েছেন হাসারাঙ্গা। তবে জয়ের নায়ক কুশল মেন্ডিসই। তার ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিংই দুই দলের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। ম্যাচ শেষে কুশল বলেন, ‘প্রথম দিকে উইকেট পড়ে যাওয়ায় আমাদের রান তোলার গতি খানিকটা মন্থর ছিল। তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের পরিকল্পনাও পরিবর্তন করতে হয়েছিল। ওই সময় নির্দেশনা ছিল যতটা সম্ভব সিঙ্গেল রান নিতে হবে এবং বাজে কোনো বল পেলেই তা থেকে ছক্কা কিংবা চার বের করতে হবে। ১০ ওভারের পর আমরা প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হয়েছিলাম। নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেই আমরা ম্যাচ জিতেছি।’

 

শ্রীলঙ্কা

১৬২/৬ (২০ ওভার) (কুশল ৭৯, আশালঙ্কা ৩১; পল ২/২৫, লিড ২/৩১)।

নেদারল্যান্ডস

১৪৬ (২০ ওভার) (ম্যাক্স ৭১, এডওয়ার্ডস ২১ ; হাসারাঙ্গা ৩/২৮, মহেশ ২/৩২)।

ফল : শ্রীলঙ্কা ১৬ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা : কুশল মেন্ডিস।

সর্বশেষ খবর