মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

যে হাসিতে খুন কমলা বাহিনী

মেজবাহ্-উল-হক

যে হাসিতে খুন কমলা বাহিনী

অবশেষে প্রাণখোলা হাসি। কী আনন্দ ক্রিকেটারদের শরীরীভাষায়। এসেছে কাক্সিক্ষত সেই জয়। ১৫ বছরের অপেক্ষার অবসান হলো বাংলাদেশের। প্রথমবারের মতো টি-২০ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে জয় পেলেন টাইগাররা।

প্রতিপক্ষ কে সেটা বড় বিষয় নয়। ব্যবধান কেমন -সেটাও আলোচ্য বিষয় নয়। জয়ের শুরুটা তো হলো। ভাগ্যে বিশ্বাসীরা হয়তো বলবেন ‘অপয়া’ কেটে গেল! আগের সাত আসরে যা সম্ভব হয়নি, এবার প্রথম ম্যাচেই বহুপ্রতীক্ষিত ‘প্রথম-জয়’ এর দেখা পেয়ে গেল বাংলাদেশ।

ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, জয়টা প্রত্যাশিতই ছিল। শক্তিমত্তা ও সামর্থ্য কোনো কিছুতেই নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের সমানে সমান নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ক্রমশ দলকে হতাশ করে দিয়েছিল। তাই মাঠে নামার আগে এই কমলা বাহিনীকেও মহিরুহ মনে হচ্ছিল। কিন্তু জিতে টাইগাররা সব শঙ্কা দূর করে দিল। ৯ রানের এই জয় যেন দলে দলে দারুণ প্রশান্তি!

এই জয়ের মধ্যমণি পেসার তাসকিন আহমেদ। চার ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ইনিংসের প্রথম দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে ভেঙে দিয়েছেন ডাচদের মনোবল। হ্যাটট্রিকের দারুণ একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। হ্যাটট্রিক না হলেও তাসকিনের দেওয়া শুরুর ধাক্কাই নেদারল্যান্ডসকে ছিটকে দেয়।

অবশ্য শুধু তাসকিন নন, বাকি দুই পেসারও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। তরুণ হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানও ছিলেন দুর্দান্ত। ৪ ওভারে মাত্র ২০ দিয়েছেন। নেদারল্যান্ডসের কলিন অ্যাকারম্যান ছাড়া আর কেউ দাঁড়াতেই পারেননি। কিন্তু কলিন একাই দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

হোবার্টে যেন সামর্থ্যরে চেয়েও ভালো বোলিং করেছেন টাইগার বোলাররা। সে কারণেই কিনা ১৪৫ রানেই টার্গেট দিয়েও জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, ‘আমরা জানতাম এই উইকেটে আমাদের বোলিং আক্রমণের জন্য ১৫০ থেকে ১৫৫ রান যথেষ্ট। সেদিক থেকে আমরা ১০ রান কম করেছি। তবে আমাদের পেসাররা যেভাবে বোলিং করেছে, তা দুর্দান্ত।’

একে তো হোবার্টে কনকনে ঠান্ডা, তার ওপর টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামতে হয় বাংলাদেশকে। প্রতিকূল পরিবেশে কঠিন পরীক্ষা দিতে নামেন ব্যাটাররা! বেশ কিছু দিন থেকেই ধুঁকছিল টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপ। ওপেনিং জুটিতে ছিল না আত্মবিশ্বাসের ছাপ। কিন্তু ডাচদের বিরুদ্ধে দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার দারুণ দৃঢ়তা দেখালেন। ৪৩ রানের দারুণ এক জুটি।

তবে শুরুটা ভালো হলেও দলের দুই নির্ভরতার প্রতীক লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছাতে পারেননি। দল যখন বিপদের গন্ধ পাচ্ছে তখনই আফিফের ব্যাটে ক্যারিশমা। ২৭ বলে ৩৮ রানের দারুণ ইনিংস। শেষ দিকে মোসাদ্দেকের ১২ বলে ২০ রানের ইনিংসটিও ছিল খুবই কার্যকরী।   

যাই হোক শেষ পর্যন্ত জিতেছে বাংলাদেশ। ব্যবধান যেমনই হোক সেটা ১ রানে হোক কিংবা ১০ উইকেটে, জয় তো জয়ই। বরং এই দল পেয়ে গেছে দারুণ এক মোমেন্টাম।

এতদিন, টি-২০ বিশ্বকাপের মানেই ছিল হতাশার গল্প। মূলপর্বে জয় না পাওয়া। ম্যাচের পর ম্যাচ হতাশায় মাথা নিচু করে ক্রিকেটারদের ড্রেসিং রুমে ফেরার চিত্রটা ছিল খুবই পরিচিত। কিন্তু এবার প্রথম ম্যাচের সব কিছু পাল্টে গেল। প্রথম ম্যাচেই হাসছেন ক্রিকেটাররা। বিজয়ের হাসি, আনন্দের হাসি।

বাংলাদেশ দলের এই হাসিতেই সুপার টুয়েলভে খুন কমলা বাহিনী। এখন দেখার বিষয়, টাইগারদের ‘অদৃশ্য’ লিস্টে আর কে কে আছে? এখন সামনে জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও পাকিস্তান।

সর্বশেষ খবর