রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ছোট দলের বড় চ্যালেঞ্জ

মেজবাহ্-উল-হক

ছোট দলের বড় চ্যালেঞ্জ

পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। বিশেষ করে ‘আগ্রাসী’ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিম্বাবুয়ের জয়ের পর। ‘ছোট’ দলের তকমা গায়ে বিশ্বকাপ শুরু করা জিম্বাবুয়ে এখন বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির।

প্রথম রাউন্ডে তাণ্ডব দেখিয়ে সুপার টুয়েলভে -তারপর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরেক ক্যারিশমায় এখন বিশ্বকাপে সুপার হিরো সিকান্দার রাজা। এই বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের তিন জয়ে তিনবার ম্যাচসেরা তিনি। আজ ব্রিসবেনে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের ভাবনা এই রাজাকে নিয়েই।

টাইগারদের কাছে জিম্বাবুয়ে সবচেয়ে পরিচিত প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি টি-২০ ম্যাচও খেলেছে আফ্রিকান এই দলটির বিরুদ্ধে। তারপরও বিশ্বকাপের মতো বৈশ্বিক আসরে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হচ্ছে টাইগাররা।

তবে এই জিম্বাবুয়ে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আলাদা। নতুন এক দল। যারা নতুন মিশন নিয়ে এসেছে অস্ট্রেলিয়ায়। যাদের আছে সিকান্দার রাজার মতো একজন ক্যারিশম্যাটিক অলরাউন্ডার। যিনি ব্যাটে-বলে সুপারস্টার। তাই জিম্বাবুয়েকে আটকাতে হলে সবার আগে আটকাতে হবে এই সুপারস্টারকে।

সাকিবরা এবারের আসরটি দারুণভাবে শুরু করেছিল। প্রথম ম্যাচেই নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে জয়। কিন্তু হোবার্টে জয়ের পর সিডনিতে গিয়ে হোঁচট খায় টাইগাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বিশাল ব্যবধানে হারার পর সাকিবদের জয়ের ক্ষুধাটা আরও বেড়ে গেছে। ব্রিসবেনে জিম্বাবুয়েকে হারানোর জন্য মরিয়া। তবে এই জিম্বাবুয়ে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আলাদা। অনেক বেশি গোছানো। অনেক বেশি আগ্রাসী। তাই ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জিম্বাবুয়েকে নিয়ে বেশ সতর্ক বাণী শোনালেন বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম।

আজকের ম্যাচের পরিকল্পনা সম্পর্কে তার ভাষ্য, ‘তাদের জন্য আমাদের পরিকল্পনা আছে। তবে আমরা জিম্বাবুয়েকে সম্মান করি। পাকিস্তানে বিপক্ষে তাদের অসাধারণ পারফরম্যান্সকে মূল্যায়ন করি। ওই ম্যাচের প্রতিটি বল আমরা দেখেছি। পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা যেভাবে জিতেছে, এটা অবিশ্বাস্য। পুরো কৃতিত্ব ও সম্মান তাদের প্রাপ্য।’

একটি জয়ে যেমন উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। তেমনি হারেও ভেঙে পড়ার কিছু দেখছেন না শ্রীরাম। বরং আগের ম্যাচের হার থেকে যদি কিছু শেখা যায়, সে বিষয়ে শিষ্যদের উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি। শ্রীরাম বলেন, ‘আমার মনে হয়, দলের মনোবল খুব ভালো এখন। আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি, দক্ষিণ আফ্রিকা সেদিন অনেক বেশিই ভালো খেলেছে, খুব শক্তিশালী ছিল ওরা। রাইলি রুশো তিন নম্বরে নেমে যে ক্যারিশমা দেখিয়েছে তা এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে সেরা ঘটনা। কুইন্টন ডি কক ও রাইলি রুশোর মতো দারুণ দুজন ক্রিকেটারের আগ্রাসী ইনিংসের সামনে পড়ে গিয়েছিলাম আমরা। ওই হার থেকে আমরা শিখব।’

তবে আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের পর মোটেও আত্মতুষ্টিতে ভুগছে না জিম্বাবুয়ে। বরং এখন তারা সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখছে। স্বপ্ন দেখতেই পারে দলটি। কারণ, প্রথম ম্যাচে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পয়েন্ট পেয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়েছে। শেষ চারে যাওয়ার রাস্তাটা অনেকটা পরিষ্কার। তাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সতর্ক হয়ে মাঠে নামছে। দলটির ক্যাপ্টেন বলেন, ‘আমরা জানি, বাংলাদেশ মানসম্পন্ন দল এবং তাদের বিপক্ষে নিশ্চিতভাবেই সেরাটা খেলতে হবে আমাদের। ছেলেরা অবশ্যই জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত। পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর অবশ্যই ছেলেরা এখন আরও অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। তবে আমরাও জানি, খেলাটা কতটা নড়বড়ে এবং কতটা দ্রুত সব বদলে যেতে পারে।’

আসরে নিজেদের লক্ষ্য সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের সুযোগ আছে সেমিতে খেলার। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে হবে, এরপর নেদারল্যান্ডসকে হারাতে হবে। এরপর ভারতের বিপক্ষে খেলা, সঙ্গে অন্য কিছু ম্যাচের ফল মিলিয়ে সুযোগ আসতে পারে। তবে আপাতত দূরের কিছু নিয়ে ভাবছি না। এখন টার্গেট বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভালো পারফর্ম করা।’

বিশ্বকাপের অন্য দলের তুলনায় শক্তি সামর্থ্যরে দিক দিয়ে জিম্বাবুয়ে নিঃসন্দেহে ছোট দল। কিন্তু ছোট দলই এখন বাংলাদেশকে বড় চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের পর বিশ্লেষকদের অনেকে এই জিম্বাবুয়েকে আজকের ম্যাচে ফেবারিটও ভাবছেন। ব্রিসবেনের ঐতিহাসিক গ্যাবায় ক্যারিশম্যাটিক পারফরম্যান্স দেখিয়ে সাকিবরা এই ভাবনা ‘ভুল’ প্রমাণ করতে পারেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর