সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্যাটিং ব্যর্থতায় সর্বনাশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ব্যাটিং ব্যর্থতায় সর্বনাশ

অ্যাডিলেডের সকালটা হঠাৎ করেই উজ্জ্বল মনে হয়েছিল সাকিবদের। টাইগারদের সকাল উজ্জ্বল ও আলোকিত করে দিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। সাকিবরা যখন অ্যাডিলেড স্টেডিয়ামে ঢুকেছেন, তখন দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে উৎসব করছিলেন কলিন অ্যাকারম্যান, টম কুপার, ম্যাক্স ও’ডডরা। গ্যালারিতে বসে নেদারল্যান্ডসের ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী হয়েছিল সাকিব বাহিনী। ডাচ বাহিনীর জয়ে উৎফুল্ল টাইগার ক্রিকেটাররা হাততালিও দিয়েছিলেন। উৎফুল্ল হওয়ার কারণ, ডাচদের অঘটনের জয়ে প্রথমবারের মতো টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার পথ উন্মুক্ত হয়েছিল। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় পাকিস্তানকে হারিয়ে স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি।

ম্যাচ শুরুর আগে মনে হয়েছিল অ্যাডিলেড ওভাল ৭ বছর পর আবার উৎসব, উচ্ছ্বাসের মঞ্চ হবে। ২০১৫ সালের এখানেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০২২ সালের টি-২০ বিশ্বকাপেও অ্যাডিলেড হতে পারত সুখের নাম। অ্যাডিলেডে একবার নয়, ইতিহাস গড়ার দুই দুই বার সুযোগ পেয়েছিলেন সাকিবরা। ভারতের কাছে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৫ রানে হেরে প্রথমবার সুযোগ হাতছাড়া করে। গতকাল শতভাগ সুযোগ মিস করেন সাকিবরা ব্যাটিং ব্যর্থতায়। ম্যাচ শেষে ব্যাটিং ব্যর্থতার কথা বলে আক্ষেপে পুড়েছেন টাইগার অধিনায়ক, ‘ইনিংসের মাঝপথে (১০ ওভার) আমরা ১ উইকেটে ৭০ রান করেছিলাম। সেখান থেকে আমরা ১৪৫-১৫০ রানের কাছাকাছি যেতে চেয়েছিলাম। দক্ষিণ আফ্রিকা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে দেখেছি, এই উইকেটে ভালো স্কোর হতো। শেষ ১০ ওভারে রান করা কঠিন। আমরা জানতাম নতুন ব্যাটসম্যানদের জন্য এটি সহজ হবে না। তাই থিতু ব্যাটসম্যানদের ক্যারি করে ইনিংস শেষ করা জরুরি ছিল। যা হয়নি।’

ভারত ও পাকিস্তানের কাছে হেরে সেমিফাইনালের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। তারপরও নিজস্ব ক্রিকেট ইতিহাসে এবারই প্রথম চূড়ান্ত পর্বে দুটি জয় পেয়েছে টাইগাররা। নেদারল্যান্ডসকে ৯ রানে এবং জিম্বাবুয়েকে ৩ রানে হারায়। পারফরম্যান্সের সার্বিক বিবেচনায় এবারের আসর নিজেদের সেরা বলতে দ্বিধা করেননি সাকিব, ‘ফলের দিক থেকে চিন্তা করলে টি-২০ বিশ্বকাপে এটিই আমাদের সেরা আসর। আমরা আরও ভালো করতে পারতাম। সেই সুযোগ ছিল। নতুন ছেলেরা এসেছে। তাদের কাছ থেকে এটুকুর আশা ছিল আমাদের।’

জিতলেই সেমিফাইনাল-এমন সমীকরণের ম্যাচে চাপ নিতে পারেননি সাকিবরা। শুষ্ক উইকেটে টস জিতে ব্যাটিংয়ে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৭ রান করে মাত্র। অথচ প্রথম ১০ ওভারে স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৭০ রান। হাতে ৯ উইকেট নিয়ে বাকি ৬০ বলে কমপক্ষে ৮০ রান হওয়া উচিত ছিল। টি-২০ ফরম্যাটে যা খুবই সহজ। কিন্তু লিটন, সৌম্য, সাকিব, আফিফ, সোহান, মোসাদ্দেকরা ব্যর্থ হন। ১১ নম্বর ওভারে রিভার্স সুইপ খেলে সৌম্য বিদায় নিতেই খোলসবন্দী হয়ে পড়ে টাইগাররা। সেখান থেকে আর বের হতে পারেনি। শেষ ১০ ওভারে ৫৭ রান যোগ করে ৭ উইকেট হারিয়ে। রানের স্ট্রাইক রেট বলের চেয়েও কম! অবশ্য সাকিবের আউটটি বিতর্কিত ছিল। শাদাব খানের লেগ স্পিনে আম্পায়ার লেগ বিফোর দেন। টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার বুঝা গেছে বল প্যাডে আঘাত হানার আগে ব্যাটে আঘাত করেছিল। তারপরও থার্ড আম্পায়ার মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে স্থির থাকেন। সাকিব করেন শূন্য। ভারতের বিপক্ষে ২৭ বলে ৬০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলা লিটন করেন মাত্র ১০। সোহান শূন্য, মোসাদ্দেক ১১ বলে ৫, আফিফ ২০ বলে অপরাজিত ২৪, সৌম্য ১৭ বলে ২০ রান করেন। টাইগারদের ব্যাটিং লাইন ধ্বসিয়ে দেন শাহিন আফ্রিদি ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে। ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংটাও খারাপ করেছে টাইগাররা বোলাররা। ফিল্ডিং ছিল গড়পড়তা। তিনটি ক্যাচ মিস করেছেন ফিল্ডার।

 

সাকিবের বিতর্কিত আউট

ভারতের পর পাকিস্তান ম্যাচের আম্পায়ারিং নিয়েও কথা উঠেছে। ভারতের বিপক্ষে বিরাট কোহলির ফেক ফিল্ডিং এড়িয়ে গেছেন আম্পায়ার। এ নিয়ে সমালোচনায় জর্জরিত আম্পায়াররা। গতকাল টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আউট নিয়ে ফের বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে লেগ স্পিনার শাদাব খানের বলে সাকিবকে লেগ বিফোর দেন আম্পায়ার আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক। এমনকি রিভিউ নেওয়ার পর দেখা গেছে বল সাকিবের ব্যাট ছুঁয়ে প্যাডে লাগতে দেখা গেছে। টিভি আম্পায়ারও একই রায় দেন। প্রথম বলেই আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাকিব। এই আউটের সমালোচনা করেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।

সর্বশেষ খবর