১৯৫৭ সালে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে প্রথম শিরোপা জেতে ঢাকা মোহামেডান। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাদের। স্বাধীনতার আগে ও পরে সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১৯ বার লিগ জয়ের রেকর্ড রয়েছে সাদা-কালোদের। বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অসংখ্যবার তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। যে দলের শিরোপা জেতাটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল সেই মোহামেডান টানা ২২ বছর লিগ শিরোপা থেকে বঞ্চিত। ২০০২ সালে তারা শেষ বারের মতো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ শুরুর পর একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। অথচ এর মধ্যে তিনবার ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপ একবার ও একবার কোটি টাকার সুপার কাপে ঠিকই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফুটবলে মূল আসর লিগ জেতাটা মোহামেডানের কাছে এখন স্বপ্ন। লিগ ইতিহাসে একবারই টানা তিন বছর চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি মোহামেডান। আশির দশকে এমন ঘটনা ঘটায় মোহামেডানের ফুটবলাররা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারতেন না। সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ক্লাব পুড়িয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছিল। ১৯৮৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সব ক্ষোভ শেষ হয়ে যায়।
টানা তিন বছর চ্যাম্পিয়ন না হওয়ায় মোহামেডানে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। অথচ পেশাদার লিগে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও সমর্থকরা নীরব হয়ে আছেন। এর পেছনে দুটি বিষয় রয়েছে। এক. ঘরোয়া ফুটবলে আগের সেই জৌলুস বা উত্তেজনা নেই। ওই সময়ের পরিস্থিতি যদি থাকত তাহলে মতিঝিলপাড়ার ক্লাব ভবনে কী যে ঘটত তা চিন্তায় করা যায় না। দ্বিতীয়টি হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে মোহামেডান শক্তিমানের দল গড়ছে না। পজিশন যা-ই হোক, সমর্থকরা ধরেই নিয়েছে এমন খর্বশক্তি নিয়ে শিরোপা জেতা সম্ভব নয়। ২০২২-২৩ মৌসুমে দীর্ঘ ১৪ বছর পর মোহামেডান ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফাইনালে আবাহনীকে হারিয়ে। সমর্থকরা ভেবেছিল নতুন মৌসুমে শিরোপা জিততে শক্তিশালী দল গড়বে। না, ঘুরেফিরে একই মানের দল। কোনো পরিচিত ফুটবলার নেই। নেই কোনো পরিবর্তন। গেল মৌসুমে স্বাধীনতা কাপ, লিগ ও ফেডারেশন কাপ তিন আসরেই রানার্সআপ। আসন্ন মৌসুমে সে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবে কি না-সেটাই বড় প্রশ্ন। কেননা শক্তি বাড়ার চেয়ে নতুন মৌসুমে মোহামেডানের শক্তি কমেছে। ঘুরেফিরে সেই খর্বশক্তি মোহামেডানের দেখা মিলবে। দল থেকে বেরিয়ে আবাহনীতে যোগ দিয়েছেন তরুণ ডিফেন্ডার মুরাদ, কামরুল, আক্রমণভাগের শাহরিয়ার ইমন ও জাফর ইকবাল। যদিও দলের ম্যানেজার সাবেক তারকা ফুটবলার ইমতিয়াজ আহমেদ নকিব বলেছেন, ‘মুরাদ ও ইমন আবাহনীতে খেলবে তা নিশ্চিত নয়। ওরা মোহামেডানেই রয়েছে। দুজনই সেনাবাহিনীতে চাকরি করে। সেনাবাহিনী ওদের লিগে যে দলে খেলার অনুমতি দেবে সেখানেই খেলবে। সুতরাং এখনই তারা আবাহনীর হলো কীভাবে?’
নতুন মৌসুমে মোহামেডানের কী মানের দল গড়ছে? এ ব্যাপারে নকিব বলেন, ‘গতবারের অধিকাংশ স্থানীয় খেলোয়াড়ই থাকছে। সেই সঙ্গে নতুন হিসেবে তপু, জুয়েল ও অনন্তকে নেওয়া হয়েছে। আর বিদেশিদের মধ্যে দিয়াবাতে, মোজাফররভ, সানডে, এমেকা তো থাকছেনই। রহমতগঞ্জের আননেস্ট বোটংকে নিশ্চিত করেছি। সব মিলিয়ে একেবারে খারাপ নয়।’ তার মানে দলে কোনো পরিচিত স্থানীয় ফুটবলার নেই। নকিব বলেন, ‘পরিচিত বলতে কী বোঝায় তা আমি জানি না। তবে মোহামেডান এমন কোনো ফুটবলার আনবে না যাদের পারিশ্রমিক অযথা আকাশছোঁয়ার মতো। যাদের টাকা আছে তারা অর্থ অপচয় করবে। তবে এটা ফুটবলে জন্য আমি ক্ষতিকরই বলব। কেননা যে ১০ টাকা পাওয়ার যোগ্য তাকে আমি কোন যুক্তিতে ৩০ টাকা দেব? সত্যি বলতে কি, যা চলছে তাতে ফুটবলের সর্বনাশই হচ্ছে।’