মাইকেল ফেলপসের কথা ক্রীড়ামোদিদের বেশ মনে আছে। ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিক থেকে শুরু। ছয় ফুট চার ইঞ্চি উচ্চতার এ মার্কিন সাঁতারু নিজের প্রথম অলিম্পিকেই জয় করেন ছয়টি সোনার পদক। ১০০ ও ২০০ মিটার বাটারফ্লাই, ২০০ ও ৪০০ মিটার মিডলে, চার গুণিতক ১০০ মিটার মিডলে এবং চার গুণিতক ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল ইভেন্টে সোনা জয় করেন ফেলপস। জলমানবের খেতাব পেয়ে যান তিনি। ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে আগের ছয়টি সোনার সঙ্গে ফেলপস যোগ করেন ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল এবং চার গুণিতক ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলের সোনা। সুইমিংপুলে দুই অলিম্পিকে ১৪ সোনা জয় করে কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন মার্কিন এ সাঁতারু। এরপর লন্ডনে চারটি এবং রিও অলিম্পিকে আরও পাঁচটি (মোট ২৩টি) সোনার পদক জয় করে ইতিহাসের সেরা ক্রীড়াবিদ হয়ে ওঠেন তিনি। ফেলপসের রেকর্ডের নিচে চাপা পড়েছিলেন কিংবদন্তি সাঁতারু মার্ক স্পিৎজ।
মাইকেল ফেলপস অবসর নিয়েছেন অনেক আগে। ২০১৬ সালেই খেলেছেন শেষ অলিম্পিক। এরপর সুইমিংপুলে অনেকেই সোনার পদক জিতেছেন। মেয়েদের মধ্যে কেটি লেদেকিকে নিয়ে বেশ আলোচনাও হয়েছে। এখনো হয়। তবে ছেলেদের সাঁতারে ফেলপসের মতো আলোড়ন তুলতে পারেননি কেউই। এবার ফরাসি এক তরুণের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ফেলপসের ছায়া। তিনি লিও মারশা। আকারে ও উচ্চতায় প্রায় ফেলপসের কাছাকাছি। ফেলপস ছয় ফুট চার ইঞ্চির। মারশা ছয় ফুট দুই ইঞ্চি। সুইমিংপুলে তিনি ঝাঁপ দিলেই দর্শকসারিতে উত্তেজনা বেড়ে যায়। ২০১৯ সালে ইউরোপিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে এবং ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন মারশা। সে সময় তাকে নিয়ে খুব বেশি আশা করেনি ফরাসিরা। তবে ২০২২ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি সোনা ও একটি রুপা জিতলে তাকে নিয়ে আগ্রহ বেড়ে যায়। ২০২৩ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রীতিমতো তারকা বনে যান তিনি। ৪০০ মিটার মিডলেতে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। এরপর থেকেই প্যারিস অলিম্পিকে তার সাফল্যের অপেক্ষায় ছিল ফরাসিরা। সেই সাফল্য তিনি পেয়েও গেলেন সুইমিংপুলে নেমে। ১৬ বছরের পুরনো মাইকেল ফেলপসের রেকর্ডটা ভেঙে দিয়েছেন ২২ বছরের এ ফরাসি তরুণ।
সাঁতারের ইভেন্ট মানেই আগে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ছিল। সেই আধিপত্য এখন ভাগ হয়ে গেছে। ফরাসিরাও ভাগ বসিয়েছে। ৪০০ মিটার মিডলেতে লিও মারশা অলিম্পিক রেকর্ড গড়েছেন ৪ মিনিট ২.৯৫ সেকেন্ড টাইমিং করে। জাপানের মাতসুশিতা ৪ মিনিট ৮.৬২ সেকেন্ড টাইমিং করে হয়েছেন দ্বিতীয়। প্রায় ছয় সেকেন্ড এগিয়ে ছিলেন মারশা। তিনি ১৬ বছর আগে মাইকেল ফেলপসের গড়া রেকর্ডটা ভেঙেছেন। ২০০৮ সালের অলিম্পিকে এ ইভেন্টে ৪ মিনিট ৩.৮৪ সেকেন্ড টাইমিং করে রেকর্ড গড়েছিলেন ফেলপস।
রেকর্ড গড়ার পর পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে বার বারই লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল লিও মারশার। তিনি বলেন, ‘পোডিয়ামে আমার লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। আমি খুবই গর্ব বোধ করছি। ফ্রান্সের জন্যও গর্ব হচ্ছে।’ লিও মারশাকে নিয়ে প্রতিটা ফরাসির মতো আগ্রহী ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও। ইভেন্টের পর পরই ফোনে তিনি মারশাকে জানিয়েছেন, পুরো পরিবারকে নিয়ে ইভেন্টটা দেখেছেন তিনি। তবে নিজ দেশের দর্শকদের সামনে পারফর্ম করার সময় কিছুটা নার্ভাস ছিলেন লিও মারশা। তিনি বলেন, ‘আমি নিজের ওপরই মনোযোগটা ধরে রাখতে চাইছিলাম। তবে ১৫ হাজার দর্শক যখন চিৎকার করছে তখন কাজটা খুব কঠিন। অবশ্য এটাকে আমার শক্তি বৃদ্ধিতে কাজে লাগিয়েছি।’ মারশার সামনে আরও অনেক সোনা জয়ের সুযোগ অপেক্ষা করছে। সেসব জিতে তিনিও কি একদিন কিংবদন্তি হয়ে উঠবেন!