যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া রবিবার প্রথমবারের মতো তার মন্ত্রণালয়ে আসেন। এসেই ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এখানে প্রাধান্য পেয়েছে বিসিবি ও বাফুফের বিষয়টি। গত ১৫ বছর দুই ফেডারেশনে নানা অনিয়ম এবং লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন ছিল দুই ফেডারেশনে কমিটি বিলুপ্ত হবে কি না। সবচেয়ে কম বয়সি হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবকের দায়িত্ব পেলেও আসিফ তো জানেন বললেই তো দুটি ফেডারেশন ভাঙা সম্ভব না। ক্রিকেট যেমন পরিচালিত হয় আইসিসির গাইড লাইন মেনে তেমনি ফুটবলও চলে ফিফার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। যেভাবে হোক দুটিই নির্বাচিত কমিটি। এখানে হাত দেওয়া মানেই সমস্যা ডেকে আনা। ক্রীড়া উপদেষ্টা এটাও বলেছেন এ ক্ষেত্রে তার কী করণীয় আছে তা দেখবেন।
আলোচনা শুধু বিসিবি ও বাফুফেকে ঘিরে হলেও কেন জানি হকি আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। অথচ এ ফেডারেশনে অনিয়ম ও দুর্নীতি সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। ক্রিকেট ও ফুটবলে অনিয়ম হলেও কখনো নির্বাচন ঘিরে কাউকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়নি। হকিতে তা ঘটলেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। হকি ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের মধ্যে বরাবরই দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু অচেনা বা অপরিচিতি মুমিনুল হক সাঈদ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরই হকি যেন আতঙ্কের ফেডারেশনে পরিণত হয়েছে। সবকিছু চলে সাঈদের পেশি শক্তিতে। অবশ্য তাকে সহযোগিতা করতে এক শ্রেণির চাটুকারও সঙ্গী হয়েছেন।
সাঈদ প্রথমবার সাধারণ সম্পাদক হন নির্বাচনে জয়ী হয়েই। কিন্তু সেই নির্বাচন ঘিরে যে ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি হয়েছিল তা কারোর অজানা নয়। চেয়ারে বেশি দিন বসতেও পারেননি। নিষিদ্ধ ক্যাসিনোকান্ডে অন্যতম সহায়ক হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি দেশত্যাগ করেন। দীর্ঘ সময়ে অনুপস্থিত থাকায় ফেডারেশন গঠনতন্ত্র মেনেই সাঈদকে বহিষ্কারও করেছিল। নিয়ম মেনেই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক মো. ইউসুফ। অথচ সেই সাঈদ তার চেয়ার ফিরে পান বছরের পর বছর অনুপস্থিত থাকার পরও। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদই তাকে বড় সহযোগিতা করে। আইনের নানা ব্যাখা দিয়ে তাকে পদ ফিরিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে আবার ফেডারেশনের সভাপতির সমর্থন ছিল বলেই ভয়ে কেউ টু শব্দ করেননি। বহিষ্কারের পর আবার পদ ফিরে পান তিনি।
সাঈদের এসব কর্মকান্ডে হকি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন ত্যাগী ও অভিজ্ঞ সংগঠকরা। উপায়ও নেই কেউ তো আর নিজের সর্বনাশ ডেকে আনতে পারেন না। গত বছর জুনে সাঈদ দ্বিতীয়বারের মতো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। যে নির্বাচন কারোর কাছেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। কোনো আইনের তোয়াক্কা না করে অধিকাংশ কাউন্সিলরশিপ দেন নিজেই। এ ক্ষেত্রে ক্রীড়া পরিষদের কোনো কোনো কর্মকর্তা তাকে সহযোগিতা করেন। এ কাউন্সিলরশিপ নিয়ে কেউ কেউ আইনের আশ্রয় নেন। তারপরও প্রভাব খাটিয়ে হকি যেন নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ছাড়েন সাঈদ।
সেই সাঈদ আবারও গা ঢাকা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই তিনিসহ বেশ কয়েক কর্মকর্তা লাপাত্তা। তবে সাঈদ নাকি এখন নেপালে অবস্থান করছেন। যিনি ফেডারেশনকে অনিয়মনের স্বর্গ বানিয়ে ছাড়েন, তার বিরুদ্ধে কি আইনগতভাবে কিছু করার নেই? ক্রিকেট ও ফুটবল না হয় বিলুপ্ত করতে সমস্যা আছে। কিন্তু হকিতে তো তা নেই। সরকার যে কোনো সময় ভেঙে দিতে পারে। আর সাঈদের পেশি শক্তি বা অনিয়মের কথা তো পুরো ক্রীড়াঙ্গনের সবার-ই জানা। এখানে কি ক্রীড়া উপদেষ্টা হস্তক্ষেপ করে হকিতে সুস্থ পরিবেশ ফিরেয়ে আনতে পারেন না?