নাজমুল হাসান পাপনের পরিবর্তে বিসিবির নতুন সভাপতির দৌড়ে ছিল অনেকের নাম। দৌড়ে সবাইকে পেছনে ফেলে ক্রিকেট বোর্ডের ১৫তম সভাপতি হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। এখন গঠনতন্ত্রের নিয়ম মেনে হতে যে কয়দিন সময় লাগে।
আওয়ামী সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে নেই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীও ছিলেন। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ফলে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এখন কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই নাজমুল হাসানের। যদিও বিসিবির সভাপতির পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। শোনা যায়, সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ-কালের মধ্যে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েও দেবেন বিসিবির কাছে। হয়তো পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেনও! এতে শূন্য হয়ে যাচ্ছে বোর্ড সভাপতির পদ। অন্তর্বর্তী সরকার চাইছে নতুন সভাপতির জরুরি নিয়োগ। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক ও ক্রিকেটারের নাম শোনা যাচ্ছিল গত দুই দিন ধরে। বিসিবির সভাপতির দৌড়ে এগিয়ে আছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। ক্রীড়া ও যুব উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিসিবির সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছেন, স্বীকার করেন ফারুক, ‘হ্যাঁ, আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। ক্রিকেট বোর্ড পুনর্গঠনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমাকে একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আমি তাতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছি। আমিও দেশের ক্রিকেট উন্নতির পরিকল্পনায় উন্নতির অংশ হতে চাই।’ ফারুক ছাড়া বিসিবি সভাপতির দৌড়ে নাম ছিল বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হক, সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল, খালেদ মাসুদ পাইলট ও ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের।
২০১২ সালে আ হ ম মুস্তফা কামালের বিদায়ের পর বিসিবির নতুন সভাপতি হন নাজমুল হাসান পাপন। এরপর থেকেই সভাপতির পদে আসীন নাজমুল। ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর ভোজবাজির মতো পাল্টে যায় সবকিছু। গত সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। অধিকাংশই আত্মগোপনে আছেন। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার চাইছে সিস্টেমের পরিবর্তন এনে দেশের উন্নয়ন। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আগেই জানিয়েছেন, আইসিসির নিয়ম মেনেই যা করার করা হবে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে একই মনোভাব বজায় রেখে ক্রীড়া ও যুব উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, সংস্কার করব পদ্ধতির, ব্যক্তির নয়। সিস্টেমটা যারা দুর্নীতিগ্রস্ত করেছে, তাদের পরিবর্তন আসবে, এটাও সুনিশ্চিত।’
ফারুক আহমেদকে সভাপতি হতে বিসিবির গঠনতন্ত্রের নিয়ম মেনে হতে হবে। এজন্য সবার আগে তাকে বিসিবির কাউন্সিলর হতে হবে। তিনি কাউন্সিলর। ক্যাটাগরি-৩-এর ৯.৩.৩ উপধারার বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল ও প্রথম শ্রেণির ১০ ক্রিকেটারের কোটায় কাউন্সিলর ফারুক। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মুঠোফোনে বলেছেন, ‘আমি তো বিসিবির কাউন্সিলর। ক্যাটাগরি-৩-এর ক্রিকেটার কোটায়।’ কাউন্সিলর হলে এখন তাকে ক্যাটাগরি-৩ থেকে পরিচালক হতে হবে। এরপর তিনি বিসিবির সভাপতি পদে নির্বাচিত করবেন। অবশ্য সরাসরি পরিচালকও হতে পারেন ফারুক। এজন্য তাকে ক্রিকেটার কোটার কাউন্সিলরশিপ ছেড়ে দিতে হবে। তখন ক্যাটাগরি-৩-এর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ৫ কাউন্সিলরের একজন হতে হবে তাকে। কোনো ধরনের নির্বাচন ছাড়াই ক্রীড়া পরিষদের কোটায় দুজন পরিচালক বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য।
বর্তমানে ক্রীড়া পরিষদের দুজন পরিচালক আহম্মেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও জালাল ইউনুস। এই ক্যাটাগরিতেই ফারুকের সঙ্গে পরিচালক হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে নাজমুল আবেদীন ফাহিমের। যিনি একসময় বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করেছেন। পরিচালক হওয়ার পর ফারুককে সভাপতি পদে নির্বাচন করতে হবে। ২৫ পরিচালক সরাসরি ভোটে নির্বাচিত করবেন নতুন সভাপতি। যদি এসব নিয়ম না মেনে বোর্ড সভাপতি বানানো হয়, তাহলে বিসিবিকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে আইসিসি।