অর্ধ যুগের শিরোপা খরা ঘুচল ছেলেদের ফুটবলে। ২০১৮ সালে শেষবার ছেলেদের ফুটবলে কোনো শিরোপা জয় করেছিল বাংলাদেশ। সেবার নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধŸ-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ফাইনালে পাকিস্তানকে পরাজিত করে লাল-সবুজের জার্সিধারী তরুণ ফুটবলাররা। এরপর থেকেই ছেলেদের ফুটবলে শিরোপা খরা চলছিল। গতকাল সাফ অনূর্ধŸ-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে মিরাজুল-পিয়াসরা সেই অধরা ট্রফিই উপহার দিলেন বাংলাদেশকে। ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দেন আশরাফুল হক আসিফরা।
প্রায় আট বছর আগের কথা। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায় বাংলাদেশ। ভুটানের বিপক্ষে পরাজয়ের ঘটনা খুব কমই ছিল বাংলাদেশের। আট বছর আগে এমন ভয়ংকর ঘটনার পর অনেকেই বাংলাদেশের ফুটবলের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিলেন। এই দেশে ফুটবল খেলে আর কী হবে! এমন ভাবনা চলে এসেছিল অনেকের মধ্যেই। দর্শকরা ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন ২০১০ সালের আগে থেকেই। ফুটবল থেকে ভালো কিছুর প্রত্যাশা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল। ঠিক সে সময়ই নারী ফুটবলে নবজাগরণ দেখতে পায় দেশের মানুষ। বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে একের পর এক শিরোপা উপহার দিতে থাকে মেয়েরা। এরপর ২০২২ সালে সিনিয়র সাফেও চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ নারী দল। ছেলেদের ফুটবল ছিল সেই তিমিরেই। ২০১৫ সালে অনূর্ধŸ-১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০১৮ সালে অনূর্ধŸ-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করলেও ছেলেদের ফুটবল নিয়ে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন সমর্থকরা। তবে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে থাকে বাংলাদেশের ফুটবল। বসুন্ধরা কিংসের আগমন ঘটে ২০১৮ সালে। এরপর এই ক্লাবের চেষ্টা এবং জাতীয় দলে ভালো মানের কোচদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে চলে ভবিষ্যৎ গড়ার প্রশিক্ষণ। বাংলাদেশের ফুটবল যে বদলে গেছে, তার প্রমাণ গত বছর সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মিলেছে। ভারতের বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে খেলতে দেখে ভারতীয় কিংবদন্তি ফুটবলার সুনীল ছেত্রী বলেছিলেন, এই দলটা অনেক এগিয়েছে। আরও ভালো করার সামর্থ্য আছে তাদের। জামাল ভূঁইয়া-রাকিবদেরই উত্তরসূরি মিরাজুল-পিয়াস-রাহুলরা। যুব সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তারাও তো দারুণ এক বার্তা দিয়ে রাখলেন দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলকে। ভবিষ্যতে হয়তো তারা সিনিয়র সাফের শিরোপাও এনে দিবেন বাংলাদেশকে!
এক সময় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হলে বাংলাদেশের নাম থাকত শীর্ষ ফেবারিটের তালিকায়। ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৫ সালে টানা তিনবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। দুবার ভারতের কাছে পরাজিত হয়ে শিরোপা বঞ্চিত হয় (১৯৯৯ ও ২০০৫ সালে)। তবে ২০০৩ সালে মালদ্বীপকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এমন দুরন্ত পারফরম্যান্স পরবর্তীতে আর দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের পর থেকে সেমিফাইনালও খেলতে পারছিল না। অবশেষে ১৪ বছর পর ২০২৩ সালে সিনিয়র সাফে সেমিফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। আবারও ছেলেদের ফুটবল নিয়ে আশায় বুক বাঁধতে থাকেন সমর্থকরা। এক বছরের ব্যবধানেই সমর্থকদের আশা পূরণ করলেন যুব দলের ফুটবলাররা।
সাফের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে ২০১৮ সালের পর আরও দুবার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে অনূর্ধŸ-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। এরপর ২০২২ সালে সেই ভারতই অনূর্ধŸ-২০ টুর্নামেন্টের ফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয়। এবার আর সেই ভুল করেনি যুবারা। সেমিফাইনাল থেকেই ভারতকে বিদায় করে দেয়। ফাইনালে পায় নেপালকে। এ নেপালের কাছেই এবার গ্রুপ পর্বের লড়াইয়ে ২-১ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। তবে ফাইনালে তা মোটেও বুঝতে দেননি মিরাজুলরা। স্বাগতিক দলের ডিফেন্স লাইন তছনছ করে একের পর এক গোল করতে থাকে বাংলাদেশ। ছিনিয়ে আনে কাঙ্ক্ষিত জয়। অধরা শিরোপা।
সিনিয়র সাফের পরের আসর হওয়ার কথা আগামী বছর। এখনো দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। তবে সামনের বছর সিনিয়র সাফে বেশ চাপেই থাকবেন জাতীয় দলের ফুটবলাররা। যুবাদের মতো তাদের কাছ থেকেও শিরোপা আশা করবেন সমর্থকরা। সেই আশাও কি পূরণ হবে এবার!