প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দিতে রাওয়ালপিন্ডির উইকেটে ঘাস রেখেছিল পাকিস্তান। খেলিয়েছিল চার পেসার। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। অপরিচিত পরিবেশে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে জয় উদযাপন করে বাংলাদেশ। ১৯১ রানের ইনিংস খেলে টাইগারদের ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু মুখ্য ভূমিকা রাখেন দুই স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান। স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ইনিংসে বিধ্বস্ত করতে দুই স্পিনার উইকেট নেন ৭টি। রাওয়ালপিন্ডিতেই চলছে এখন দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম দিন খেলা হয়নি বৃষ্টি বাধায়। ভেসে যায়। গতকাল দ্বিতীয় দিন টস জিতে টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান পাকিস্তানকে। উইকেটের সুবিধা নিতে স্বাগতিকরা ফিরিয়ে আনেন লেগ স্পিনার আবরার আহমেদকে। টাইগাররা এক পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামেন। গ্রোইন ইনজুরিতে ছিটকে পড়া শরিফুল ইসলামের জায়গায় খেলেন তাসকিন। গতকাল আগ্রাসি বোলিংও করেন। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে যান মেহেদি হাসান মিরাজ। দারুণ বোলিং করেন মিরাজ। তার মায়াবী ঘূর্ণিতে এক দিনেই অলআউট হয় পাকিস্তান। পাকিস্তানকে ২৭৪ রানে অলআউট করতে অফ স্পিনার মিরাজ একাই নেন ৫ উইকেট। স্পিন অলরাউন্ডারের স্পেল ২২.১-২-৬১-৫। টাইগাররা দিন পার করে বিনা উইকেটে ১০ রান সংগ্রহ করে।
মিরাজ অসাধারণ বোলিং করলেও দুর্ভাগ্য সাকিবের। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার একটি উইকেট পেলেও ফিল্ডাররা তার ক্যাচ মিস করেছেন তিনটি। আবার তিনি ক্যাচ নিয়েছেন দুটি। যার একটি আবার মিরাজের ওভারে। প্রথম টেস্টের মতো দ্বিতীয়টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন দুই টাইগার স্পিনার। প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটে জয়ের দুই ইনিংস মিলিয়ে উইকেট নেন ৫টি। দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট নেন ৪টি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা অফ স্পিনার মিরাজ। এখন পর্যন্ত ৪৫ টেস্টে উইকেট নিয়েছেন ১৭৪টি। তার চেয়ে এগিয়ে সাকিব। বাঁ হাতি স্পিনারের ৬৯ টেস্টে ২৪২টি এবং আরেক বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ৪৬ টেস্টে উইকেট নিয়েছেন ১৯৫টি। প্রথম টেস্টের মতো গতকালও খেলার সুযোগ পাননি তাইজুল। অথচ সিরিজটি খেললে সাকিবের পর দ্বিতীয স্পিনার হিসেবে ২০০ উইকেটের শিকারি ক্লাবে নাম লেখাতেন তাইজুল। রাওয়ালপিন্ডির উইকেটে তাইজুলকে না খেলানোয় স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুলেছেন টিম ম্যানেজমেন্টকে নিয়ে। যদিও সাকিব ও মিরাজ সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন পারফরম্যান্স করে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের চারজন বোলার ১০০ উইকেট নিয়েছেন। আশ্চর্য হলেও সত্যি, চারজনই স্পিনার এবং তিনজন হচ্ছেন বাঁ হাতি। মোহাম্মদ রফিক প্রথম টাইগার বোলার হিসেবে ৩৩ টেস্টে ১০০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখান।
মিরাজ শুধু স্পিনারই নন, দারুণ ব্যাটিংও করেন। ৪৫ টেস্টে এক সেঞ্চুরি ও ৭ হাফ সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ১৫৪৭। সিরিজের প্রথম টেস্টে রান করেছিলেন ৭৭। গতকাল বোলিংয়ে আসেন চতুর্থ বোলার হিসেবে। তিন স্পেলে বোলিং করেন তিনি। টার্ন, দষুসরা ও আর্ম বোলিংয়ে মিরাজ সাজঘরে ফেরান স্বাগতিক ওপেনার সাইম আইয়ুব (৫৮), অধিনায়ক শান মাসুদ (৫৭), খুররাম শাহজাদ (১২), মোহাম্মদ আলী (২) ও আবরার আহমেদকে (০)। অফ স্পিনার মিরাজ ৪৫ টেস্ট ক্যারিয়ারে দশমবারের মতো ৫ বা ততোধিক উইকেট নিয়েছেন। মিরাজের টেস্ট অভিষেক ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। অভিষেক ইনিংসেই উইকেট নিয়েছিলেন ৬টি। ওই সিরিজে উইকেট নিয়েছিলেন ১৯টি। মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের টেস্টে উইকেট নেন ৬টি করে ১২টি।
দলে রয়েছে সাকিবের মতো অভিজ্ঞ স্পিনার। তারপরও অধিনায়কের মূল ভরসা মিরাজ। তাকে ভাবা হচ্ছে টাইগারদের ভবিষ্যতের সাকিব। দলের প্রয়োজনে তিনি ব্যাটিং ও বোলিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। গতকাল স্বাগতিকদের লেজ মুড়িয়ে দিয়েছেন মিরাজ। কিন্তু শুরুটা করেছেন তাসকিন। গতি, বাউন্স ও সুইংয়ের মিশেলে পাকিস্তানের ব্যাটারদের নাভিশ্বাস তুলেছেন। ডান হাতি ফাস্ট বোলারের স্পেল ১৭-৩-৫৭-৩।