রাওয়ালপিন্ডিতে ৪৩ টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি করেন লিটন দাস। সেটা আবার দীর্ঘ ২৭ মাস পর। অথচ ২০১৫ সালে ফতুল্লা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে লাল বল ও সাদা পোশাকের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন দারুণ একটি ইনিংস খেলে। এরপর বেশ কিছু অসাধারণ ইনিংস খেলেন। কিন্তু মাঝে ছন্দ হারিয়ে সমালোচনায় এফোঁড়-ওফোঁড় হন। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অনেকে তখন তাকে বাদ দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর। ছন্দ নেই- এমন অভিযোগে টি-২০ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাননি মেহেদি হাসান মিরাজ। অথচ লিটন ও মিরাজ, দুজনেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম ভরসা। দুজনে দেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র। গতকাল রাওয়ালপিন্ডিতে দুজনে দলকে যে বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে টেনে তুলেন, তার কোনো তুলনা নেই। ৫.৬ ওভার থেকে ১১.৩ ওভার; মাত্র ৩৪ বলের ব্যবধানে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা যখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, তখন হাল ধরেন দলের দুই তারকা লিটন ও মিরাজ। মাথা ঠান্ডা রেখে ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে দুজনে সপ্তম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১৬৫ রান। যা ৫০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারিয়ে সপ্তম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। বিশ্বরেকর্ডও। সপ্তম উইকেটে মিরাজের সঙ্গে ছাড়াও লিটন নবম উইকেটে হাসান মাহমুদকে সঙ্গী করে ৬৯ রানের জুটি গড়েন। দুই দুটি জুটিতে ভর করে ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ করে ২৬২ রান।
লিটন চারটি সেঞ্চুরি করেন। যার তিনটিই করেন চরম বিপর্যয়ে। সেঞ্চুরিটি করে ৬৫ নম্বর ওভারের পঞ্চম বলে সালমান আগাকে লেট কাটে বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরি করেন। সেঞ্চুরি করেন ১৭১ বলে। ১৩৮ রানের ইনিংসটি খেলেন ২২৮ বলে ১৩ চার ও ৪ ছক্কায়। এর আগে আরও দুটি সেঞ্চুরি করেন লিটন চরম বিপর্যয়ে। ২০২১ সালে চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১১৪ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন ৪৯ রানে চতুর্থ উইকেটের পতনের পর। ২০২২ সালে মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪১ রানের ইনিংসটি খেলেন ২৪ রানে ৫ উইকেটের পতনের পর। এমন রেকর্ড নেই ১৪৭ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে কোনো ব্যাটারের। ৬-৭ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৫০ রানের আগে ৬ উইকেট হারানো পরিস্থিতিতে তিনটি সেঞ্চুরিই প্রথম লিটনের। মিরাজ টানা তিন ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করেছেন। চলতি বছরের মার্চে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৮১, রাওয়ালপিন্ডিতে আগের টেস্টে ৭৭ এবং গতকাল খেলেন ৭৮ রানের ইনিংস। ৩০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারিয়ে দল যখন কোণঠাসা, মিরাজের ৭৮ রানের ইনিংস যে কোনো ব্যাটারের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। তিনি পেছনে ফেলেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মইন খানকে। ১৯৯৯ সালে ভারতের বিপক্ষে কলকাতায় ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপর্যয়ে, তখন মইন ৭০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
নাজমুল বাহিনীর দিনের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের। তবে শেষটা ছিল স্বপ্নের। ২৬ রানে ৬ উইকেটের পতনের পর লিটন ও মিরাজ যে পরিস্থিতিতে ১৬৫ রানের জুটি গড়েন, ক্রিকেট ইতিহাসে এত আস্থার ব্যাটিং আর কখনোই দেখা যায়নি। দুজনেই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে দলকে একটি সৌধ গড়ে দেন। দুজনের বিশ্বরেকর্ড গড়ার আগের রেকর্ডটি ছিল পাকিস্তানের আবদুল রাজ্জাক ও কামরান আকমলের। ২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে করাচিতে ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দল যখন কোণঠাসা, দুজনে যোগ করেন ১১৫ রান। বাংলাদেশের চেয়ে কম রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও শতরানের জুটি রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর দুই ক্যারিবীয় ব্যাটার এনক্রুমার বনার ও জশুয়া ডি সিলভা ১০০ রান করেছিলেন। সপ্তম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড দুই ক্যারিবীয় ব্যাটার সি দেপিয়াজা ও অ্যাটকিনসনের। ১৯৫৫ সালে ব্রিজটাউনে দুজনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৪৭ রান করেছিলেন। সপ্তম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ১৯৬। চলতি সিরিজের প্রথম টেস্টে মুশফিকুর রহিম ও মেহেদি হাসান মিরাজ করেছিলেন। এর আগে ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৫ রান করেছিলেন সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।