রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিন জয়ের ভিত তৈরি করে দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। তুলে নিয়েছিলেন পাকিস্তানের ২ উইকেট। গতকাল হাসানের সঙ্গী হয়েছেন তাসকিন আহমেদ ও নাহিদ রানা। তিনজনই পেসার। তিনজনই ফাস্ট বোলার। তিনজনের গতি, সুইং ও বাউন্সে নাভিশ্বাস উঠেছে স্বাগতিক ব্যাটারদের। তিন টাইগার পেসার এতটাই আগ্রাসি মেজাজে বোলিং করেছেন যে, পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭২ রানে অলআউট হয়েছে। নাজমুল বাহিনীকে টার্গেট দেয় ১৮৫ রানের। সেই টার্গেটে গতকাল ৭ ওভারে ৪২ রান তুলেও নেয় বাংলাদেশ। আজ শেষ দিন আরও ১৪৩ রান করতে হবে টাইগারদের। তুলে নিলেই নিজেদের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের বিরল ইতিহাস গড়বে। এর আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে টেস্ট সিরিজে হারিয়েছিল টাইগাররা। অবশ্য আজ খেলা না হলে বাংলাদেশ হারবে না। ড্র হবে টেস্ট। প্রথম টেস্ট ১০ উইকেটে জয়ী থাকায় সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট জিততে দরকার আরও ১৪৩ রান। হাতে আছে ১০ উইকেট। টাইগারদের এই জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন তিন পেসার হাসান-তাসকিন-নাহিদ। তিন পেসার একত্রে ১০ উইকেট নিয়েছেন। বাংলাদেশের ১৪৪ টেস্টের কোনো ইনিংসে এই প্রথম পেসাররা ১০ উইকেট নিয়েছেন। টেস্টের কোনো ইনিংসের ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব এই প্রথম হলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে রয়েছে এ রেকর্ড। ১৪৭ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে ৮৫৯ বার এবং ওয়ানডেতে ১৫৮ ও টি-২০ ক্রিকেটে ২৪ বার।
রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেট জয় পায় বাংলাদেশ। লাল বল ও সাদা পোশাকে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটিই প্রথম জয়। ১৯১ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলে জয়ের নায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকদের ১৪৬ রানের গুটিয়ে দিয়েছিলেন দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। দুজনে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। দ্বিতীয় টেস্টেও দারুণ বোলিং করেন মিরাজ। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের ২৭২ রানে গুটিয়ে দিতে মিরাজ একাই নেন ৫ উইকেট ও সাকিব একটি। তিন পেসারের মধ্যে তাসকিন ৩টি ও নাহিদ নেন এক উইকেট। হাসান ছিলেন উইকেটশূন্য। দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব ও মিরাজ ১৫ ওভার বোলিং করে উইকেটশূন্য থাকেন ৩৮ রান খরচ করে। তৃতীয় দিন হাসান ২ উইকেট নিয়ে শুরু করেন যাত্রা। গতকাল বাকি ৩ উইকেট নেন। ইন সুইং, আউট সুইং, গতি ও বাউন্সে নাকাল করেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। একে একে তুলে নেন আবদুল্লাহ শফিক, খুররম শাহজাদ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ আলি ও মীর হামজাকে। তার বোলিং স্পেল ১০.৪-১-৪৩-৫। খেলার কথা ছিল না নাহিদ রানার। নিয়মিত ১৪০-১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করা নাহিদ সুযোগ পান শেষ মুহূর্তে। নাহিদ সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন গতির ঝড় তুলে।
প্রথম ইনিংসে এক উইকেট নিলেও দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৪ উইকেট। গতিতে নাজেহাল করে স্বাগতিক অধিনায়ক শান মাসুদ, সাবেক অধিনায়ক বাবর আজম, সৌদ শাকিল ও আবরার আহমেদকে সাজঘরে ফেরান। তার স্পেল ১১-১-৪৪-৪। তাসকিন আউট করেন সাইম আইয়ুবকে। প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। হাসান এই প্রথম তার টেস্ট ক্যারিয়ারে ৫ উইকেট নেন। শুধু নিজের ক্যারিয়ারেই নয়, পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম পেসার হিসেবে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখান। প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নিয়ে উচ্ছ্বসিত হাসান বলেন, ‘উইকেটের সুবিধাটুকু আদায় করে নিয়েছি আমরা। আমি সব সময়ই চেষ্টা করেছি উইকেটের নির্ধারিত জায়গায় বোলিং করতে। আমাদের অন্য পেসাররাও দারুণ করেছেন।’
১০ উইকেট নেওয়ার টাইগার পেসারদের কৃতিত্ব রয়েছে আরও দুবার। দুবারই ওয়ানডেতে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩ মার্চ সিলেটে তৃতীয় ওয়ানডেতে ১০ উইকেটে জিতেছিল টাইগাররা। ওই ম্যাচে এবাদত ২টি, তাসকিন ৩টি এবং হাসান নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ উইকেটে জয়ী ম্যাচে বাংলাদেশের ৩টি করে উইকেট নিয়েছিলেন শরিফুল, তানজিম ও সৌম্য এবং ১ উইকেট নিয়েছিলেন মুস্তাফিজ।
বৃষ্টি হতে পারে আজও
পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বৃষ্টি বাগড়া দিয়েই চলেছে। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টি বাধা হয়েছিল। যদিও টেস্টটি ১০ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। চলমান দ্বিতীয় টেস্টেও বৃষ্টি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম দিন খেলাই হয়নি বৃষ্টিতে। গতকাল খেলা হতে পারেনি ৪৬ ওভার। আজ শেষ দিন টেস্টের। জয়ের ক্ষণ গুনছে বাংলাদেশ। কিন্তু উৎসবের এই দিনে আজ বাধা হতে পারে বৃষ্টি। জয়ের জন্য টাইগারদের দরকার আরও ১৪৩ রান। বৃষ্টির সম্ভাবনা ৮৩ শতাংশ। বৃষ্টিসহ বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ৪০ শতাংশ।