কানপুর বিমানবন্দর থেকে নাজমুল হোসেন শান্তদের নিয়ে যাওয়া বাসটি যখন টিম হোটেলে যাচ্ছিল, তখন স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়ে এবং ক্রিকেটপ্রেমীরা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছিলেন। নিরাপত্তা দিতে রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নিয়েছিলেন কানপুরের নিরাপত্তাকর্মীরাও। কঠোর নিরাপত্তা ও উষ্ণ অভ্যর্থনায় টাইগারদের বরণ করে নেন কানপুরের ক্রিকেটপ্রেমীরা। আগামীকাল ৭২ বছরের পুরনো কানপুর গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে শুরু হবে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় টেস্ট। চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্ট বাংলাদেশ হেরেছিল ২৮০ রানের পর্বতসমান ব্যবধানে। আগামীকাল কানপুর টেস্ট শুরু হলেও প্রথম দুই দিন বৃষ্টি বাধায় পড়তে পারে। অ্যাকুয়াওয়েদার রিপোর্ট এমনটাই জানাচ্ছে। টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা ৯২ শতাংশ এবং টেস্টের দ্বিতীয় দিন সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ। বৃষ্টি হলেও খেলা আয়োজনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আয়োজকরা। কানপুরের স্পোর্টস বিভাগের কর্মকর্তা অমিত পাল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। নিষ্কাশনব্যবস্থাও এখানে ভালো। আশা করছি, পুরো খেলা হবে।’
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এনে স্থানীয় একটি হিন্দু সংগঠন কানপুর টেস্ট ও গোয়ালিয়রে প্রথম টি-২০ ম্যাচ বন্ধের হুমকি দিয়েছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, স্টেডিয়ামে ঢোকার পথে তারা যজ্ঞ করবে। কিন্তু কানপুর পুলিশ জানিয়েছে, নির্বিঘ্নে খেলা মাঠে গড়াতে তিন স্তরের কঠোর নিরাপত্তা দেবে। এ জন্য ১ হাজারের মতো পুলিশ নিয়োজিত থাকবে মাঠের চারিদিকে। গতকাল দুপুরে নাজমুল, সাকিব, লিটন, তাসকিন, মেহেদি মিরাজরা যখন অনুশীলন করছিলেন গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে, তখন মাঠ ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। স্থানীয় হিন্দু সংগঠনের হুমকি সত্ত্বেও টেস্ট শুরু হবে নির্ধারিত সময়ে। কিন্তু টাইগার টিম ম্যানেজমেন্টের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। নির্বাচক হান্নান সরকার জানিয়েছেন, সাকিবের আঙুলে ইনজুরি রয়েছে। তার জন্য কানপুর টেস্ট শুরু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। গতকাল মিডিয়ার মুখোমুখিতে টাইগার কোচ চন্ডিকা হাথুরাসিংহে জানিয়েছেন, ফিজিও কিংবা অন্য কেউ তাকে সাকিবের ইনজুরি বিষয়ে জানায়নি। তিনি বলেন, ‘সাকিবের ইনজুরির ব্যাপারে অফিশিয়ালি আমার কিছু জানা নেই। তাকে নিয়ে এ মুহূর্তে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। আমি ফিজিও কিংবা কারও কাছ থেকে এ বিষয়ে কিছু শুনিনি।’
কাউন্টি ক্রিকেটে সারের হয়ে দারুণ বোলিং করেছেন সাকিব। কিন্তু চেন্নাই টেস্টে ছিলেন নখদন্তহীন। সিরিজের শেষ টেস্টে সাকিব খেলবেন কি না, আজ সকালে নিশ্চিত হবে। তবে উইকেট যেহেতু কালো মাটির, সেখানে বল নিচু হয়ে ধীরগতিতে আসবে। কানপুরের উইকেটের সঙ্গে অনেকটাই মিল আছে মিরপুরের উইকেটের। বল নিচু হয়ে আসবে বলে তিন স্পিনার দিয়ে সাজানো হতে পারে টাইগার একাদশ। নাহিদ রানার জায়গায় সাজঘরে ফিরতে পারেন বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। এ ছাড়া দুই স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ এবং সাকিবও খেলতে পারেন। স্কোয়াডে রয়েছেন দীর্ঘদেহী অফ স্পিনার নাঈম ইসলামও। সাকিবের খেলা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ছন্দে নেই দেশসেরা অলরাউন্ডার। গত তিন ইনিংসে উইকেটের দেখা পাননি ৭০ টেস্টে ২৪২ উইকেট নেওয়া সাকিব। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের শেষ ইনিংসে ছিলেন উইকেটশূন্য। এ ছাড়া চেন্নাই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৮ ওভারে ৫০ রান দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে দিয়েছিলেন ৭৯ রান। অবশ্য প্রথম ইনিংসে রান করেছিলেন ৩২ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫। ছন্দে না থাকার পরও টাইগার কোচ আত্মবিশ্বাসী সাকিবকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘সাকিবের ব্যাটিং নিয়ে আমার কোনো উদ্বেগ নেই। তার দক্ষতা সম্পর্কে আমরা জানি। চেন্নাইয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে সে ভালো ব্যাটিং করেছে।’