ফুটবল অন্তপ্রাণ বলতে যা বোঝায়া সেই সংগঠক এখন আর নেই। যারা ফুটবল উন্নয়নে সার্বক্ষণিক ব্যস্ত ছিলেন। নতুন ফুটবলারদের সন্ধানে জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহ করে তারকা ফুটবলার তৈরিও করেছেন এমন সংখ্যা একেবারে কম নয়। সেই নিবেদিত সংগঠকদের দেখা মিলে না। অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। যারা বেঁচে আছেন তারা ফুটবলের কোনো কাজে জড়াতে চান না। পরিবেশ ও অন্যদের আচরণে আড়ালে চলে গেছেন। অন্তপ্রাণ সংগঠকরা দূরে সরে গেছেন বলেই ফুটবলে অচলাবস্থা নেমে এসেছে। ক্লাবগুলোও অচল হয়ে পড়েছে। ফুটবলকে দেওয়ার বদলে পকেট ভারীতেই মনোযোগী বলে ফুটবলে দুর্দশা নেমে এসেছে। ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনে জয়ী হয়ে চেয়ারে বসছেন ঠিকই। কিন্তু কাজের বদলে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েই মূলত সময় পার করেছেন। তবে আশার কথা হলো ফুটবলে অনেক দিন পর এমন সংগঠকের আর্বিভাব ঘটেছে, যার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস দুটোই রাখা যায়। অল্প দিনেই ফুটবল অ্যারিনায় কাজ করে তার প্রমাণও মিলেছে। ইমরুল হাসান, ক্রীড়াঙ্গনে যার অভিষেক বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি হিসেবে। খেলাধুলার সঙ্গে কখনো জড়িত না থাকলেও খেলা পাগল মানুষ ছিলেন। মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের ক্লাব বসুন্ধরা কিংসকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে, দেশ ছাড়িয়ে ক্লাবটি এখন বিদেশেও আলোচিত। পেশাদার লিগে অভিষেকের পর টানা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে কিংস যে দেশের ফুটবল কিং বুঝিয়ে দিয়েছে।
শুরু তাই নয়, তিনবার করে ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড রয়েছে তাদের। নারী লিগেও টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কিংস। নিজ দলের সাফল্যের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন ইমরুল হাসান। এখানেই থেমে থাকেননি। বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় দেশের ফুটবল উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। সর্বোচ্চ ভোটে সহসভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ফুটবল ফেডারেশনে মূলত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি।
বাফুফে সভাপতি থেকে শুরু করে অনেকেই বিতর্কিত। কিন্তু ইমরুলই ব্যতিক্রম, জুনিয়র লিগের চাকা সচল করার পর পেশাদার লিগে নতুনত্ব এসেছে তারই মাধ্যমে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু বলেছেন, ‘প্রতিশ্রুতি নয় ইমরুল কাজে বিশ্বাসী। এ মানের নিবেদিত কর্মকর্তা থাকলে ফুটবলে আর হাহাকার থাকত না।’ ইমরুল হাসান গত নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে সহসভাপতির চেয়ারে বসেন। এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। কে নাম প্রত্যাহার করল তা বড় কথা নয়। এক মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেই ইমরুল যে আস্থা অর্জন করেছেন তার বড় প্রমাণ বড় পদ পাওয়া। ২৬ অক্টোবর ইমরুলসহ সব বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। সভাপতির পরই সিনিয়র সভাপতির পদটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় টানা ১৬ বছর সালাম মুর্শেদী বাফুফের নির্বাচিত সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন। কিন্তু কাজের চেয়ে তাকে ঘিরে বিতর্কই হয়েছে বেশি। সেই পদেই বসতে যাচ্ছেন ইমরুল। আগের চেয়ে দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। যেহেতু কাজের লোক, তাই ফুটবলপ্রেমীদের চোখ থাকবে তারই দিকে। নতুন পদে এ এক নতুন চ্যালেঞ্জ ইমরুলের।