যোগ্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সংগঠকরা ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর দায়িত্ব পালন করলে কোনো বিতর্ক থাকে না। বাস্তবে যোগ্যদের কখনো কি মূল্যায়ন করা হয়েছে? ১৯৯৮ সাল থেকেই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গন পরিচালিত হচ্ছে। এরপরও কি গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা এসেছে? যদি বলি না তা-কি বাড়িয়ে বলা হবে। আমার বিশ্বাস অনেকেই এর সঙ্গে একমত হবেন। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ওবায়দুল কাদের। তিনিই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ক্রীড়াঙ্গনের গতি ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। নিঃসন্দেহে এটি ছিল প্রশংসনীয় উদ্যোগ। বাস্তবে কি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দেখা মিলেছিল? কীভাবে মিলবে নির্বাচনে যোগ্যরাই প্রার্থী হতে পারেননি। শুনতে খারাপ লাগবে ঠিকই। তারপরও না বলে উপায় নেই। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনে খারাপ কাজের বৈধতা পেয়ে যায়। নির্বাচন একটা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। এখানে দলবাজি ও টাকার ছড়াছড়ি। ক্রীড়াঙ্গনে শনিরদশা নেমে আসে ১৯৯৮ সালে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া পরিষদের আত্মপ্রকাশের পর। সংক্ষেপে যাকে ফোরাম বলা হয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রীড়া সংগঠক জাফর ইমাম তখন ছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব। তিনি চেয়েছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের গতি ও সুষ্ঠু পরিবেশ। এজন্য অভিজ্ঞ সংগঠক তখনকার অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল মোল্লাকে মহাসচিব করে ফোরামের কার্যক্রম শুরু হয়। জাফর ইমাম ও গোলাম রসুল বেশকিছু দিন আগেই মৃত্যুবরণ করেন। এরপর জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া পরিষদে নতুন নেতৃত্ব আসে। এদের ভোট সংখ্যা বেশি বলে সব ফেডারেশনের নির্বাচন নিয়ন্ত্রিত হতো ফোরামের মাধ্যমে। অভিযোগ আছে অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাত। যদিও এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন ফোরামের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
নির্বাচনে জয়ী হয়ে চেয়ারে বসা মানে স্বচ্ছভাবে দায়িত্ব পালন করা। অথচ ফুটবল, ক্রিকেট প্রায় সব ফেডারেশনের দেখা যায় অনিয়মের দৌরাত্ম্য। দুর্নীতি আর দুর্নীতি। এখানে যোগ্য ও ত্যাগী কর্মকর্তাদের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। গত ১৫ বছরে ক্রীড়াঙ্গনে যে দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে তা অবিশ্বাস্য। ভোট মানেই ফোরামের সঙ্গে নানা লেনদেন এমন কথা ক্রীড়াঙ্গনের সর্বত্র চালু ছিল। এমন অবস্থা দেখে সচেতন মহলের দাবি ছিল জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া পরিষদ বিলুপ্ত করা হোক। কিন্তু কে করবে কার নিষিদ্ধ। সবাই উন্নয়নের বদলে নিজের ভাগ্য বদলাতে ব্যস্ত ছিলেন।
শেষ পর্যন্ত কালো যুগের অবসান ঘটেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার আসায় সবই এলোমেলো হয়ে গেছে। দেশের খেলাধুলার বৃহত্তর স্বার্থে ফোরামের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সবাই স্বস্তিতে ছিলেন বিষফোঁড়া যখন নেই তখন ক্রীড়াঙ্গন চলবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। যারা খেলা জানে ও বোঝে এমন লোকদের মাধ্যমেই ফেডারেশন পরিচালিত হবে। সেই স্বস্তিও এখন যায় যায়। ফোরাম বিলুপ্ত হলেও ক্রীড়াঙ্গনে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। যার নাম বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশন। শনিবার এক জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন সংগঠনের আবির্ভাব ঘটে। অনেক গুণীজন এখানে বক্তব্য দিতে এসে বলে যান এ সংগঠন হবে রাজনীতি মুক্ত। অনুষ্ঠানে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালকে দেখে অনেকে অবাক হয়েছেন। তামিমের আগমন বলে দেয় তিনি এবার সংগঠকের খাতায় নাম লিখাতে চলেছেন। তিনি ক্রিকেটের লোক বলেই ক্রিকেট নিয়েই কথা বলেছেন। ‘যারা ক্রিকেট বোঝেন ও জানেন এমন যোগ্য সংগঠকদেরই ক্রিকেট বোর্ডে আসা উচিত’। একেবারে সত্যি কথাটাই বলেছেন জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক। সামনে বিসিবি নির্বাচন। তাহলে কি ক্রিকেট বোর্ডে প্রকৃত যোগ্যদেরই দেখা যাবে? সবকিছুই থাকবে বিতর্কের বাইরে। ভয় হয় তামিম যে সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তা তো নতুনভাবে আরেক ফোরামের মতোই? এত ‘ফোরামের’ নতুন জন্ম নয়? সামনে তাদের কার্যক্রমই বলে দেবে।