‘চার তারকা’ ফরচুন পার্ল হোটেলে চেক-ইন করতে করতে দুপুর হয়ে যায়। পুরোনো দুবাইয়ের প্রাণ কেন্দ্র দেরা দুবাইয়ের হৃৎপিণ্ডে হোটেলটি। চেক-ইন করার সময় হোটেল ম্যানেজার জুবের সামাদ পাসপোর্ট দেখে বাংলায় প্রায় চিৎকার করে ওঠেন, ‘ভাই, বাংলাদেশ কি সুপার ফোর খেলতে পারবে?’ হোটেল ম্যানেজারের কথা শুনে অবাক হয়েছি। বিস্মিত হইনি। আবুধাবিতে প্রিয় দলের খেলা দেখতে প্রবাসীরা মাঠে এসেছেন। সমর্থন দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে মন ভেঙেছিল তাদের। আফগানদের বিপক্ষে ৮ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফেরেন প্রবাসীরা। একই সঙ্গে অবশ্য ‘অপেক্ষা’ শব্দটি ডিকশনারিতে যোগ করে নেন। সেজন্যই দুবাই বসে টেনশনে জুবের জানতে চেয়েছেন, লিটনরা পারবেন কি না সুপার ফোর খেলতে। ২০২২ সালে সর্বশেষ টি-২০ এশিয়া কাপে গ্রুপের গণ্ডি পেরোয়নি টাইগাররা। এবার শিরোপা জয়ের স্বপ্ন নিয়ে মরুরাজ্যে আসেন লিটনরা। প্রথমবারের মতো মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের কাপ আকাশপানে উঁচিয়ে ধরতে চান। আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের সহজ সমীকরণ, শ্রীলঙ্কা জিতলেই বাংলাদেশ খেলবে সুপার ফোর। এমন সমীকরণের ম্যাচে টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীরা চাইছেন আফগানদের হার। অথচ ম্যাচসেরা নাসুম ম্যাচটি নিয়ে ভাবতে চান না, ‘যে দল ভালো খেলবে, ওরাই জিতবে। যারা ভালো খেলবে, তারা জিতবে। আমরা ম্যাচের ফল নিয়ে ভাবছি না।’ ক্যারিয়ারে পাঁচবার ম্যাচসেরা নাসুম আফগানিস্তান ম্যাচের পুরস্কার দলকে উৎসর্গ করেন।
জুবেরের আগ্রহ দেখে বলে দেয়, আগামীকাল (আজ) আফগানিস্তানকে হারিয়ে দেবে শ্রীলঙ্কা। ছয়বারের এশিয়ার সেরা দল জিতলেই রানরেট কিংবা সমীকরণের প্রয়োজন হবে না লিটনদের। দুই জয়ে সুপার ফোর খেলবে। টানা তিন জয়ে টাইগারদের সঙ্গী হবে শ্রীলঙ্কা। আফগানিস্তান বিদায় নেবে। অবশ্য রশিদ খানরা জিতলে, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের পয়েন্ট হবে সমান। তখন রানরেটের হিসাব সামনে আসবে। লিটনদের কাছে হারলেও রানরেটে এগিয়ে আফগানিস্তান। তখন রানরেটে রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীরা সুপার ফোর খেলবেন। টানা দুই জয়ে শ্রীলঙ্কার রানরেট ভালো। আফগানিস্তান ম্যাচে হারের ব্যবধান কেমন হয়, সেটাই দেখার বিষয়। শ্রীলঙ্কার রানরেট ২ ম্যাচ শেষে ১.৫৪৬। বাংলাদেশের ০.২৭০। আফগানিস্তানের ২.১৫০। আফগানিস্তান আজ আগে ব্যাটিংয়ে ২০০ রান করে, তাহলে ১২৮ রান করলেই শ্রীলঙ্কা উঠে যাবে আফগানদের সঙ্গী করে। আফগানিস্তান ১৫০ রান করলে শ্রীলঙ্কা ৮৪ রান করলেই সুপার ফোর খেলবে। ম্যাচে শ্রীলঙ্কা যদি আগে ব্যাট করে, তাহলে দ্বীপরাষ্ট্রকে বাদ দিতে আফগানিস্তানকে জিততে হবে ১১-১৩ ওভারের মধ্যে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর আনন্দে ভেসেছেন লিটন, তানজিদ তামিম, নুরুল হাসান সোহান, নাসুম আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদরা। জয়ের জন্য মরিয়া লিটন বাহিনী একাধিক পরিবর্তন নিয়ে খেলেন। পারভেজ হোসেন ইমনের বদলে ওপেন করেন সাইফ হাসান। দুই ওপেনার তানজিদ ও সাইফ ৬.৪ ওভারে ৬৩ রানের ভিত দেন। ওপেনারদের গড়া ভিতে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৫ উইকেটে ১৫৪ রান। সাইফ ২৮ বলে ৩০, তানজিদ ৫২ রান করেন ৩১ বলে। অধিনায়ক লিটন ৯ রান করলেও ধারাবাহিক তাওহিদ হৃদয় ২৬ রান করেন। ৬ বলে ২ চারে ১২ রানের যে ক্যামিও ইনিংসটি খেলেন সোহান, সেটাই ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়। ১৫৫ রানের টার্গেট ছুড়ে টাইগার চার স্পেশালিস্ট বোলার দুরন্ত বোলিং করেন। কিন্তু পঞ্চম বোলারের অভাব হারে হারে টের পায়। হংকং ম্যাচে শামীম পাটোয়ারি ও সাইফ দারুণ বোলিং করেন। আফগানিস্তান ম্যাচে দুজনে ৪ ওভারে ২ চার ও ৫ ছক্কায় রান দেন ৫৫! টি-২০ ক্রিকেটে যা বেমানান। এ ধাক্কা সামলে নেন দুই অর্থোডক্স স্পিনার নাসুম ও রিশাদ হোসেন। মুস্তাফিজও দুর্দান্ত বোলিং করেন। তবে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া বোলিং করায় ম্যাচসেরা হন নাসুম। তার স্পেল ছিল ৪-১-১১-২। আবুধাবি ছেড়ে গতকাল দুবাই এসেছে লিটন বাহিনী। দুবাইয়ে হোটেলে বসেই আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি দেখবেন লিটনরা।