সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় দিনে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছবি কোনটি? নিঃসন্দেহে মাহমুদুল হাসান জয়ের হাসিমাখা মুখ। দিন শেষে ১৬৯ রানে অপরাজিত থেকে যখন মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন সঙ্গী ছিলেন সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক। সাবেক অধিনায়কও সেঞ্চুরির অপেক্ষায়। অথচ সতীর্থ ও মাঠে উপস্থিত ক্রিকেটপ্রেমীদের সবার চোখ ছিল মাহমুদুলের দিকে। দিনভর ব্যাটিংয়ে ক্লান্তি ভুলে উচ্ছ্বলতায় ভরা হাসিমুখে আত্মবিশ্বাসী পায়ে সাজঘরে ঢুকেছেন মাহমুদুল। টেস্টের দ্বিতীয় দিনের সবচেয়ে আলোকিত ছবি এটা। মাহমুদুল শুধু ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেননি, তিনি গতকাল সারা দিন ব্যাটিং করেছেন। গড়েছেন দু-দুটি শতরানের জুটি। প্রথমটি নতুন বলের সঙ্গী সাদমান ইসলামের সঙ্গে। দ্বিতীয়টি মুমিনুলের সঙ্গে। সাদমানের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে গড়েন ১৬৮ রান। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মুমিনুলের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ১৭০ রানের জুটি গড়েন। দু-দুটি শতরানের জুটিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিনটি নিজের করে নিয়েছে পুরোপুরি। মাহমুদুলের সেঞ্চুরি এবং সাদমান ও মুমিনুলের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে নাজমুল বাহিনীর সংগ্রহ ১ উইকেটে ৩৩৮ রান। সফরকারী আয়ারল্যান্ড গুটিয়ে গেছে ২৮৬ রানে। টাইগাররা এগিয়ে রয়েছে ৫২ রানে।
২০২২ সালের মার্চে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেছিলেন ১৩৭ রানের ইনিংসে। গতকালের আগের ৩০ ইনিংসে ছিল না কোনো সেঞ্চুরি। হাফ সেঞ্চুরি ৩টি, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার আগে বাদ পড়েছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে। এক সিরিজ পর ফিরে নিজেকে প্রমাণের আলাদা তাগিদ ছিল মাহমুদুলের। সেটার প্রমাণ রেখেছেন ১৯ টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে। ক্যারিয়ারসেরা ১৬৯ রানের অপরাজিত ইনিংসটি খেলেন ২৮৩ বলে ১৪ চার ও ৪ ছক্কায়। তবে একেবারেই নিশ্ছিদ্র ছিল না ইনিংসটি। স্লিপে একবার জীবন পান। জীবন পেয়ে আর পেছন ফিরে তাকাননি। আজ ব্যাটিংয়ে নামবেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস খেলতে। এর আগে টাইগার ব্যাটার মুশফিকুর রহিম (৩) এবং একটি করে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। মাহমুদুলের অপরাজিত ১৬৯ রান বাংলাদেশের ওপেনারদের মধ্যে এটা দ্বিতীয় সেরা ব্যক্তিগত ইনিংস। সেরা ইনিংস বাঁ-হাতি ওপেনার তামিম ইকবালের, ২০৬ পাকিস্তানের বিপক্ষে। একদিনে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে চতুর্থ সেরা ইনিংস। সেরা ইনিংস, সাকিব আল হাসানের, ২১২, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে।
মাহমুদুল পুরো ৮৫ ওভার উইকেটে ছিলেন। এর মধ্যে উদ্বোধনী জুটিতে ১৬৮ রান করেন সাদমান ইসলামের সঙ্গে। সাদমান ব্যক্তিগত ৮০ রানে আউট হন। দুজনের উদ্বোধনী জুটিটি বাংলাদেশের চতুর্থ সেরা। উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের। ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩১২ রান করেছিলেন। সাদমানের বিদায়ের পর মাহমুদুল দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন মুমিনুলের সঙ্গে। দুজনে অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন পার করেন ১৭০ রানে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে এটা সপ্তম সেরা। দ্বিতীয় উইকেটে সেরা জুটি শামসুর রহমান শুভ ও ইমরুল কায়েশের, ২৩২ রান, ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিল।
বাংলাদেশের ব্যাটাররা গতকাল আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাটিং করেছেন। ৮৫ ওভারে ৩.৯৭ স্ট্রাইক রেটে ১ উইকেটে তারা ৩৩৮ রান করেন। দল আক্রমণাত্মক মেজাবে ব্যাটিং করলেও এমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না দলের, বলেন সাদমান। তিনি বলেন, ‘আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আমি আর জয় কথা বলছিলাম, বল বা উইকেটে আমাদের যেরকম সাপোর্ট করেছে, সকালে ব্যাটিংয়ের সময় ওইরকম সহায়তা ছিল না। আমরা বাউন্ডারি বলগুলো কাজে লাগিয়েছি, যার কারণে হয়তো শুরুতে স্কোরটা এত ভালো এসেছে।’ দু-দুটি শতরানের জুটিতে বাংলাদেশ দিন পার করেছে ১ উইকেটে ৩৩৮ রান করে। এক ইনিংসে ৩ হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ ২০১৫ সালের পর।
