নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে তখন ৭৭ মিনিটের খেলা চলছিল। বল ছিল হামজা চৌধুরীর পায়ে। ছোট করে সতীর্থের কাছে পাস দিয়েই হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়েন তিনি। মুহূর্তেই শঙ্কার কালো ছায়া নেমে পড়ে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। সামনেই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ। সেই ম্যাচের জয়-পরাজয়ে লাভ-ক্ষতির অঙ্কে তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে মর্যাদার লড়াই বলে কথা। ভারতের বিপক্ষে জয়ের আশায় বহু বছর ধরেই লড়াই করছে বাংলাদেশ। সেই কাঙ্ক্ষিত জয়ের স্বপ্নে কেন্দ্র বিন্দু এখন হামজা। তাকে ঘিরেই ঘুরপাক খায় কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীর আশা। সেই হামজাকে মাঠে চিকিৎসা নিতে দেখে ধক করে ওঠে বুক। তবে না, হামজার আঘাত গুরুতর কিছু নয়।
ম্যাচের পর পরই কোচ হাভিয়ের কাবরেরা জানান, হামজার আঘাত গুরুতর কিছু নয়। ভারত ম্যাচে ঠিকই খেলবেন তিনি। মাঠ ছাড়ার সময় মিডিয়াকে হামজা নিজেও বলেছেন, তেমন গুরুতর কিছু নয়। সতর্কতার জন্যই মাঠ ছাড়ছেন তিনি। পরে এক ফেসবুক পোস্টে নেপালের বিপক্ষে জয় না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন হামজা। তবে ভারত ম্যাচে দর্শকদের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার আশাও প্রকাশ করেন তিনি। হামজাকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। ছয় ম্যাচ খেলে জাতীয় দলের জার্সিতে ৪ গোল করা এ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের কাছ থেকে আশার চেয়েও বেশি পেয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা। বিশেষ করে নেপালের বিপক্ষে বাইসাইকেল কিক গোলটি হামজাকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। ঢাকার দর্শকরা গ্যালারিতে বসে এমন গোল দেখবেন, এমনটা আগে কল্পনাও হয়তো করেননি। অবশ্য ফুটবলের পুরোনো দর্শকরা বলেন, শেখ মুহাম্মদ আসলামও নাকি এ ধরনের গোল করে চমকে দিতেন। হামজাও দিনে দিনে চমক বাড়িয়েই চলেছেন। বর্তমানে এশিয়ান ফুটবলের সেরা এ তারকাকে ঘিরেই স্বপ্নের জাল বুনছেন তারা। সমর্থকদের যত আপত্তি দলের পরিকল্পনা নিয়ে।
হামজা দেওয়ান চৌধুরীর অল্প কিছুদিন রুড ফন নিস্তলরয়ের অধীনে অনুশীলন করেছেন লিস্টার সিটির ফুটবলার হিসেবে। নিস্তলরয় ম্যানইউ, রিয়াল মাদ্রিদের মতো দলের কিংবদন্তি ফুটবলার। হামজার বর্তমান কোচ মার্টি সিফুয়েন্তেস। তিনি স্প্যানিশ। কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের মতো দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্রিস ওয়াইল্ডার আর মারকো সিলভাদের মতো কোচদের অধীনেও খেলেছেন হামজা। পরিণত হয়েছেন। নাম কুড়িয়েছেন। বাংলাদেশের জার্সিতে নাম লিখিয়েছিলেন লাল-সবুজের পতাকা বিশ্ব ফুটবলে ওড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে। তবে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার অধীনে তিনি এখনো ঠিকভাবে নিজেকে মেলেই ধরতে পারেননি। লিস্টার সিটিতে প্রায় ম্যাচসেরা পারফর্ম করেন। অথচ বাংলাদেশে তার সেই ধার কেমন যেন মলিন হয়ে যায়? পরিকল্পনার অভাবেই কি এমনটা হয়! একে একে ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন হামজা। গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে দারুণ সূচনা করেছিলেন। তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন উপমহাদেশের ফুটবল সমর্থকদের। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু হামজাকে নিয়েও বাংলাদেশের ফুটবলতরী গভীর সমুদ্রে হাবুডুবুই খাচ্ছে। ফুটবল সমর্থকরা বারবার সমালোচনা করছেন কোচ কাবরেরার। নেপালের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ার পরও কোচের খুঁত ধরতে ধরতেই বাড়ি ফিরেছেন ফুটবলপ্রেমীরা।