শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ

জিন্নাতুন নূর

ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ

সারা দেশে শতভাগ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিতে বিদ্যুৎ খাতেও চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। বিদ্যুৎ বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) কর্তৃপক্ষ প্রত্যন্ত গ্রামগুলো আলোকিত করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এতে বিদ্যুতের সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ও গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কমেছে বিদ্যুতের সিস্টেম লসের হারও। এক দশক আগেও বিদ্যুতের জন্য হাহাকার করতে হতো মানুষকে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহে বিশাল ঘাটতি থাকার কারণেই এমনটি হয়েছিল। কিন্তু এক দশক পর ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এই স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিদ্যুৎ খাতের  দৃশ্যপট আমূল বদলে দিয়েছে। এখন শুধু শহরাঞ্চলেই নয়, বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে গ্রামীণ জনপদও। বিদ্যুতের জাদুর ছোঁয়ায় চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যে, বর্তমানে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। আর শতভাগ জনগোষ্ঠীর জন্য বিদ্যুৎ প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশের আর ২২ লাখ ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হবে।

গোটা দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে নির্মাণ করতে হবে ৪৮ হাজার কি.মি. লাইন। আর বিদ্যুৎ বিভাগ আগামী বছর জুনে এই কাজটি সম্পন্ন করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুজিব বর্ষে (২০২০-২১) সালে দেশবাসীকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের ২১১টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। আর উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও ১৪৩টি উপজেলা। ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৫৪টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর আগামী বছরের মধ্যে আরও ৫০ উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আসবে।

জানা যায়, গত ১১ বছরে ২ কোটি ৪৩ লাখ নতুন গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে। আর সেচ সংযোগ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজার। নবায়নযোগ্য জ¦ালানি ব্যবহার করে বর্তমানে ৬০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বেড়েছে বিদ্যুতের মাথাপিছু ব্যবহার, যা ৫১০ কিলোওয়াট ঘণ্টা। সারা দেশে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বড় ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ৮০টি সমিতি।  বর্তমানে দেশে মোট বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা তিন কোটি ৫৭ লাখ। গত এক দশকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে ৪৮ ভাগ জনগোষ্ঠী। আর দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকার সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে সরকার এক দশকের বেশি সময়ে ৫৮ লাখ সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করেছে। দেশের এক হাজার ৬৯টি গ্রামে যেখানে নবায়নযোগ্য জ¦ালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে তার মধ্যে ৬২০টি গ্রামে আগামী বছরের জুনের মধ্যে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

বিদ্যুৎ, খনিজ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কাছে করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ যাচ্ছে।

আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তুলনামূলক স্বল্প সময়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজটি শেষ করতে যাচ্ছে যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ২০০৯ সালে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। আর ২০১৯ সালে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হয়েছে ২২ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট। দেশে এখন পর্যন্ত চলতি বছরের গত ২৯ মে  সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮৯৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। আবার ২০০৯ সালে দেশে যেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৭টি ২০১৮ সালে যে সংখ্যা প্রায় ৫ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৩৭ টিতে। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতের সমিতিগুলো প্রতি মাসে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে। আগে বিদ্যুতের মিটার পাওয়া কষ্টকর হলেও শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি গ্রহণের পর এখন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান দ্রুত ও সহজতর হয়েছে।  এমনকি সৌর বিদ্যুতের কারণে এখন দুর্গম গ্রামীণ জনপদও সন্ধ্যার পর হয়ে উঠছে আলোকিত।

্্এ ছাড়াও সরকার ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৩৪৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৪৬টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি স্বাক্ষর করে। নতুন আরও ১৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন। আর ৯টি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের দরপত্রও প্রক্রিয়াধীন। এমনকি বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। ভারতের ভূখ- ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটান থেকেও জলবিদ্যুৎ আমদানি করার কাজ এগিয়ে চলছে। একই সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যে আন্তঃদেশীয় গ্রিডলাইন নির্মাণ করার কথা পরিকল্পনায় রয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ বাংলাদেশ এই দুটি দেশে রপ্তানি করতে পারবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর