বুধবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ডেটা সেন্টারের ভবিষ্যৎ

রকমারি ডেস্ক

ডেটা সেন্টারের ভবিষ্যৎ

ডিজিটালাইজেশনের যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তথ্য, অর্থাৎ ডেটা। যোগাযোগ, কর্মক্ষেত্র, পড়াশোনা, অবসরসহ নিত্যদিনের যে কোনো কাজের পুরোটাই নির্ভর করে আছে এই তথ্যের ওপর। কিন্তু এই বিশাল পরিমাণ তথ্যের ঠিকানা কোথায়?

 

ডেটা রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রক্রিয়া সহজতর করে তুলতে মাইক্রোসফট ২০১৮ সালে এক অভিনব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ সিদ্ধান্ত হয়তো ভবিষ্যতের ডেটা স্টোরেজ সিস্টেমই পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। নিজেদের বিশাল ডেটা সেন্টার অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য বেশ অর্থ খরচ করতে হয় টেক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। ওই খরচ কমানোর জন্য দুই বছর আগে মাইক্রোসফট পরীক্ষামূলকভাবে নিজেদের ডেটা সেন্টার সমুদ্রের নিচে রাখার ব্যবস্থা করে। মাইক্রোসফটের এই পদক্ষেপ, তাদের চিন্তাধারায় সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।

 

স্কটল্যান্ডের উত্তরের দ্বীপ অর্কনি। এ দ্বীপের উপকূলে দুই বছর আগে টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট দ্বীপটি থেকে আধা মাইল দূরে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ডেটা সেন্টারকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়। ডেটা সেন্টারটি ইস্পাতে ঘেরা একটি কনটেইনারের ভিতরে ছিল। এটি পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে নবায়নযোগ্য শক্তি। দুই বছর ধরে এটি সফলভাবে পানিতে ডুবে কাজ করে গেছে। মূলত সমতল ভূমিতে বিশাল বিশাল ডেটা সেন্টার ঠান্ডা রাখতে যে খরচ হয়, তা কমিয়ে আনার এক চেষ্টা ছিল এটি। পানির নিচের এই অবাস্তব চিন্তাধারা বাস্তবে নিয়ে এসেছে মাইক্রোসফটের প্রজেক্ট ন্যাটিক। তা পৃথিবীর সর্বপ্রথম আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টার।

 

২০১৪ সালে মাইক্রোসফটের এক ইভেন্টে কর্মীরা তাদের অভিনব আইডিয়া শেয়ারের সুযোগ পান। সেখানে মার্কিন নেভির সাবেক কর্মকর্তা ও মাইক্রোসফটের গবেষক সান জেমস তার আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টার আইডিয়া তুলে ধরেন। একই বছর মাইক্রোসফটও প্রকল্প বাস্তবায়নে নেমে পড়ে। ডেটা সেন্টারটি প্রায় ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে। এতে রয়েছে ১২টি র‌্যাক এবং সেখানে সর্বমোট ৮৬৪টি সার্ভার রয়েছে। ২০১৮ সালে সার্ভারটি স্থাপন করা হয় সমুদ্রের ১১৭ ফুট তলদেশে এবং ২ বছর সফলভাবে কাজ করার পর ২০২০ সালে এটি পুনরায় উত্তোলন করা হয়। এটি ছিল প্রজেক্ট ন্যাটিকের ফেজ ২-এর পরিচালনা। প্রজেক্ট ন্যাটিক তিনটি ফেজের সমন্বয়ে তৈরি। প্রথম ফেজ শুরু হয় ২০১৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার শান্ত পানিতে ডেটা সেন্টারটি ডোবানোর মধ্য দিয়ে। ১০৫ দিন ডুবন্ত অবস্থায় রেখে এর ভবিষ্যৎ সম্ভাব্যতা যাচাই করেন গবেষকরা। এর ফলাফলে আশাবাদী হয়ে ২০১৮ সালে ফেজ-২ শুরু করা হয়। ফেজ ২-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্ডারওয়াটার ডেটা সেন্টারের ধারণাটি পরিবেশ ও অর্থনৈতিকভাবে কতটা যুক্তিযুক্ত, তা যাচাই করা। ফেজ ২-এর জন্য মাইক্রোসফট ফ্রান্সের Naval Group নামক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। সমুদ্রের পানির সঙ্গে তাপ আদান-প্রদানের জন্য সাবমেরিনের কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় এতে। ১২ মাস বিদ্যুৎ ব্যয়, আর্দ্রতার মাত্রা, তাপমাত্রা ইত্যাদি পরীক্ষার পর ২০২০ সালের ৯ জুলাই ডেটা সেন্টারটি আরও বিশ্লেষণ করার জন্য আবার উত্তোলন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ফেজ-২ সম্পন্ন হয়। পরবর্তী ফেজের উদ্দেশ্য ডেটা সেন্টারের স্থায়িত্ব পরীক্ষা করা। তা প্রক্রিয়াধীন। মনে করা হচ্ছে, তৃতীয় ফেজের পরীক্ষা সফল হলে বাণিজ্যিকভাবে পানির নিচে শুরু হতে পারে ডেটা সেন্টারের ব্যবহার। ইতোমধ্যে চীনেও এ ধরনের ডেটা সেন্টার নির্মাণ শুরু হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর