বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

দ্রুতগতির হাইপারলুপ : ভবিষ্যতের যানবাহন...

রকমারি ডেস্ক

দ্রুতগতির হাইপারলুপ : ভবিষ্যতের যানবাহন...

২০১৩ সালে সর্বপ্রথম সর্বাধিক গতির পরিবহনের ধারণা দেন টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক।  এরপর চার শতাধিক যাত্রীহীন পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং বাস্তবায়নের অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে ভবিষ্যতের এই হাইপারলুপ ট্রেন...

 

হাইপারলুপ ট্রেন কী?

যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য একটি পরিকল্পিত পদ্ধতি। এটি মূলত এক ধরনের ভ্যাকুয়াম ট্রেন। হাইপারলুপ প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব অল্প বায়ুচাপ বিশিষ্ট এক ধরনের বিশেষ ক্যাপসুল বা পডের মাধ্যমে মানুষ ও পণ্য পরিবহন করা যাবে। সাধারণ ট্রেনে বগি বা কামরা থাকলেও হাইপারলুপ ট্রেনে থাকবে ক্যাপসুল বা পড। যা একটি টানেল বা টিউবের মধ্য দিয়ে চলাচলের ফলে বাতাসের চাপ থাকবে শূন্য। ফলে প্রায় বাধাহীনভাবে চলাচল করতে পারবে ট্রেনটি। আর এই টানেল বা টিউব নির্মিত হবে ম্যাগনেটিক লেভিটেশন বা ম্যাগলেভ প্রযুক্তির মাধ্যমে। বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশেই ম্যাগলেভ প্রযুক্তিতে ট্রেন চলাচল করছে। সেগুলো মূলত বুলেট ট্রেন হিসেবে জনপ্রিয়। হাইপার লুপ-এর ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি থাকবে টানেলের ভিতরে। যা চুম্বকের চুম্বকত্ব ধর্মকে কাজে লাগিয়ে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সাসপেনশন ও ইলেকট্রোডাইনামিক সাসপেনশন পদ্ধতিতে পডগুলো ভাসিয়ে রাখবে এবং অস্বাভাবিক গতিতে ছুটে চলতে সাহায্য করবে।

 

কীভাবে কাজ করবে

হাইপারলুপের অন্যতম বিশেষত্ব- এতে বাতাসের ঘর্ষণ প্রায় শূন্য। ফলে বাধাহীনভাবে চলতে পারে এবং গতি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। আর টানেল বা টিউবটি বায়ুশূন্য করতে ব্যবহার করা হয় পাম্প। এয়ারলাইনাররা বায়ুচাপ কমাতে কম ঘন বাতাসের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে। ফলে বেশি উচ্চতায় আরোহণ করা যায়। স্থল মাধ্যমে একই পরিবেশ তৈরির জন্য হাইপারলুপ ক্যাপসুলগুলোকে একটি টিউবের মধ্যে রেখে বাতাসের চাপ শূন্যের পর্যায়ে নেওয়া হয়। যা ট্রেনগুলোকে মাটিতে থাকা অবস্থায় কার্যকরভাবে বিমানের গতিতে ভ্রমণের গতিবেগ সৃষ্টি করে দেয়। ইলন মাস্কের মডেলের হাইপারলুপ টিউবের অভ্যন্তরীণ বাতাসের চাপ মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলের চাপের প্রায় এক-ষষ্ঠাংশ। যার অর্থ- ১০০ প্যাসকেলের সমান কার্যকরী চাপ, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের অবস্থার তুলনায় বাতাসের টেনে আনার শক্তিকে ১ হাজার গুণ কমিয়ে দেয় এবং একে দেড় লাখ ফুট ওপর থেকে উড়ে যাওয়ার সমান গতিসম্পন্ন করে। ইলন মাস্কের এই মডেলের হাইপারলুপ ক্যাপসুলগুলো টিউবের অভ্যন্তরে ২৮টি এয়ার-বেয়ারিং স্কি সেটে ভেসে থাকবে। এ ছাড়া মাস্কের নকশায় প্রতিটা ক্যাপসুল বা পডে ২৮ জন করে যাত্রী বহন করা সম্ভব।

হাইপারলুপের অন্য সংস্করণটি হলো- ম্যাগনেটিক লেভিটেশন। ম্যাগলেভ পদ্ধতিতে চুম্বকগুলোর দুই মেরুতে একে অপরকে আকর্ষণ করে আর নিজেদের মেরুদের মধ্যে বিকর্ষণ করে। ম্যাগলেভ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে রেল ট্র্যাকে ব্যবহৃত ম্যাগনেটগুলো চুম্বক ধর্ম কাজে লাগিয়ে বগিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। অন্যদিকে হাইপারলুপ ট্রেনে ম্যাগলেভ প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি টিউব বা টানেলের ভিতর বায়ু চাপ ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশের মতো কমিয়ে ফেলে চৌম্বক ধর্ম কাজে লাগিয়ে ক্যাপসুল বা পডগুলোকে ভাসিয়ে রাখা হয়। এ ধরনের পরিবহনের ফলে ঘর্ষণ কমে যায়, যা ম্যাগলেভ ট্রেনের চেয়েও হাইপারলুপের গতিকে বাড়িয়ে দেয়। এই ট্রেন একটানা ৯৩০ মাইল বা ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। সর্বোচ্চ গতিতে চালানো হলে এই পথ পাড়ি দিতে ৮০-৯০ মিনিটের বেশি সময় লাগে না।

সর্বশেষ খবর