স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরমগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ দেখে অনুমান করা যায় টেলিভিশনের ভবিষ্যৎ। শুধু টেলিভিশন না, সিনেমার ভবিষ্যৎও স্ট্রিমিং সার্ভিসে। কয়েক দশকে বিনোদন জগতে এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে, তা কে ভেবেছিল। যুগের গতিপথ বদলে দেওয়া বিপ্লবের সূচনা করেছিল নেটফ্লিক্স।
ডিভিডির মাধ্যমে সূচনা
১৯৯৭ সালে নেটফ্লিক্সের শুরুটা হয়েছিল ডিভিডি সরবরাহকারী কোম্পানি হিসেবে। তখন থিয়েটার ছাড়া মানুষের সিনেমা দেখার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে দোকান থেকে ধার করা ভিডিও-টেপ। রিড হ্যাস্টিংস নামের এক প্রযুক্তি ব্যবসায়ী তখন পরিকল্পনা করেন ডিভিডি মাধ্যমে সিনেমা বিক্রি করার। ডিভিডির রেজুলেশন ভিডিও-টেপের চেয়ে অনেকগুণে ভালো এবং আকারেও ছোট। শুরু হয় ডিভিডি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্সের পথচলা। হ্যাস্টিংস তার দূরদর্শিতার সুফল পান খুব দ্রুতই। যুক্তরাষ্ট্রে বছর খানেকের মধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নেটফ্লিক্স। পরবর্তীতে ওয়ালমার্ট এবং ব্লকবাস্টার্স প্রতিযোগিতায় নামলেও ডিভিডির বাজারে একচেটিয়া ব্যবসা অব্যাহত রাখে নেটফ্লিক্স। ২০০৭ সালে হ্যাস্টিংস ইউটিউবের জনপ্রিয়তা দেখে সিনেমার পরবর্তী মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন ইন্টারনেট। এবং তিনি নেটফ্লিক্সের একটি ‘ভিডিও অন ডিমান্ড’ ওয়েবসাইট খোলার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমদিকে ওয়েবসাইট পুরোপুরি ফ্রি ছিল। যেহেতু নেটফ্লিক্সের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য সেই সময়ে কোনো সিনেমার স্বত্ব¡ কেনা বেশ দুরূহ ব্যাপার ছিল, তাই তাদের সংগ্রহের অবস্থাও ছিল করুণ। ভালো মানের সিনেমা ছিল না বললেই চলে। ধীরে ধীরে বড় স্টুডিওগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে শুরু করে নেটফ্লিক্স। তাদের ওয়েবসাইটে যোগ হতে থাকে সনি, ডিজনি, প্যারামাউন্ট, এমজিএম, লায়ন্সগেটের মতো বড় বড় কোম্পানির কন্টেন্ট। বিনোদন জগতের বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে জুটিবদ্ধ হতে শুরু করে কোম্পানিটি। এক্সবক্স, প্লে-স্টেশন থেকে শুরু করে অ্যাপল; বাদ যায়নি কিছুই। নেটফ্লিক্সের আয়ের প্রধান উৎস আসলে এর সাবস্ক্রাইবাররা। ৮ থেকে ১২ ডলারের মাসিক ফি থেকেই আসছে নেটফ্লিক্সের মূল রাজস্ব (২০২১ সালে যা ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার)। তাই সাবস্ক্রাইবার যত বাড়বে, তাদের আয়ও তত বাড়বে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে বা ধরে রাখতে হলে ভালো মানের কনটেন্টের বিকল্প নেই। কেননা, তাদের তৈরি সাড়া জাগানো সিনেমা বা সিরিজগুলো নেটফ্লিক্স ছাড়া আর কোনো প্লাটফরমে দেখতে পারবে না দর্শক।
টেলিভিশনের ভবিষ্যৎ
নেটফ্লিক্সের সমসাময়িক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করে অ্যামাজন প্রাইম এবং হুলু। গত ৩-৪ বছরে আরও ডজন খানেক নেটওয়ার্ক নাম লিখিয়েছে স্ট্রিমিং জগতে। ডিজনি প্লাস, এইচবিও ম্যাক্স, পিকক, স্লিং ও ফুবো তাদের মধ্যে অন্যতম। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ধীরে ধীরে টিভির স্থান দখল করছে স্ট্রিমিং প্লাটফরমগুলো। গতানুগতিক টিভি চ্যানেলগুলোও পরাজয় স্বীকার করে নিজেদের স্ট্রিমিং সার্ভিস। মিডিয়ার সদা-পরিবর্তনশীল বাজারে কখনই নিশ্চিতভাবে বলা যায় না ভবিষ্যৎ কেমন হবে। তবে, নেটফ্লিক্সের কারণে বিনোদন গ্রহণের মাধ্যম যে চিরতরে বদলে গেছে, তা বলে দেওয়া যায়।