বুধবার, ১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি আরেকটি বিপ্লবের সম্ভাবনা!

রকমারি ডেস্ক

লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি আরেকটি বিপ্লবের সম্ভাবনা!

ডিনামাইট, পেনিসিলিন ও এক্স-রে মেশিনসহ বেশ কিছু বৈপ্লবিক আবিষ্কার খুব একটা পরিকল্পনা করে হয়নি। অন্য বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ঘটনাক্রমে আবিষ্কৃত হয়ে গেছে।  সম্প্রতি সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও একটি প্রযুক্তি- লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি, যা ঘটাতে পারে বিপ্লব...

 

আধুনিক জীবন অনেকটাই লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিনির্ভর। স্মার্টফোন থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ি, চিকিৎসা সামগ্রী এমনকি স্যাটেলাইটের শক্তি জোগাতেও ব্যবহৃত হয় এই ব্যাটারি। এই ব্যাটারির সূচনা ৯০-এর দশকে। এ ব্যাটারি প্রচলনের পর থেকেই বিজ্ঞানী, গবেষক, উদ্ভাবক-উদ্যোক্তারা চেষ্টা চালিয়ে আসছেন এর বিকল্প বের করতে। তার পেছনের কারণ- লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মূল উপাদান কোবাল্ট, যা কোবাল্ট মাইনিং। এটি পরিবেশের জন্য বেশ ক্ষতিকর। অন্যদিকে কোবাল্ট দামি হওয়ায় লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এ ছাড়া লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারির রয়েছে লাইফ সাইকেল বা স্থায়িত্বের সমস্যা। স্বল্প স্থায়িত্বের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের পোহাতে হয় বিড়ম্বনা এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাপক প্রচলন না হওয়ার পেছনেও অন্যতম প্রধান বাধা হিসেবে দাঁড়াচ্ছে এই অতি দ্রুত ব্যাটারি ক্ষয় বা ব্যাটারির ক্ষণস্থায়িত্ব। অন্যদিকে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির রয়েছে ঘনত্ব বা ডেনসিটি স্বল্পতা। এই ব্যাটারি সাধারণত ভারী, বড় আকৃতির হয়ে থাকে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে মাইলেজ সীমাবদ্ধতা এবং ভারী হওয়ায় উন্নত প্রযুক্তির যানবাহনে এই ব্যাটারি ব্যবহার সম্ভব হয় না। তবে আশার কথা হচ্ছে ৬০-এর দশকের লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারির রয়েছে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির জটিলতা সামাল দেওয়ার সক্ষমতা। এই ব্যাটারির মূল উপাদান সালফার। যা কোবাল্টের চেয়ে জলবায়ুর জন্য কম ক্ষতিকারক। এ ছাড়া স্বল্প খরচে-সস্তায় এটি উৎপাদন করা যায় এবং লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারির অ্যানার্জি-ডেনসিটি বেশি হওয়ায় তা বেশ হালকা হয়।

 

বিপ্লবের সম্ভাবনা :

মূলত লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারির ভিতর ঘটা এক ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে এর উচ্চ কার্যক্ষমতা হারানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। যার প্রভাব পড়ে এই ব্যাটারির ‘আয়ুর’ ওপর। লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারির এই দুর্বলতা সমাধানে অনেকেই চেষ্টা করে আসছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারির ক্যাথোডের উপাদান পরিবর্তন করে ওই সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে এক আবিষ্কারের দেখা পান। তারা নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে সালফারের রাসায়নিক এক দশা সৃষ্টির ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে এবং সালফারের যেই রাসায়নিক দশা ব্যাটারির ক্ষয়রোধ করতে সক্ষম। এমন আবিষ্কার ড্রেক্সেল দলকে বিস্মিত করে তোলে এবং  তা যথাযথ কি না নিশ্চিত হতে তারা শতবারের বেশি পুনঃনিরীক্ষা চালান। প্রতিবারই একই ফলাফল আসে। এমনকি এটি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির তুলনায় ওই ব্যাটারির তিন গুণ বেশি অ্যানার্জি ডেন্স ছিল অর্থাৎ যা চার্জ হতে সময় নিয়েছিল লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মতো। সে সুবাদে লিথিয়াম-সালফার ব্যাটারি হালকা, সস্তা, পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকারক এবং এটি অধিক কার্যকরী। আসন্ন সময়ে স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক গাড়ি থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ বিশ্বের প্রযুক্তি-সামগ্রীর বিকল্প মূল শক্তি-উৎস হয়ে উঠতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ বা ২০৩০ সাল নাগাদ কোবাল্টের সরবরাহ বৈশ্বিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে। অন্যদিকে সালফার যেমন খুবই সস্তা, তেমনি সহজপ্রাপ্যতা ও উপাদান হিসেবে প্রাচুর্যের বিবেচনায় পৃথিবীর দশম স্থান অধিকার করে আছে।

সর্বশেষ খবর